বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব বিশ্লেষণের জন্য এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের(বিইআরসি) বৈঠক বসছে রোববার। বৈঠকে গণশুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন বিইআরসি’র সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ।
সেলিম মাহমুদ জানান, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) দেওয়া বিদ্যুতের পাইকারি দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব, বিতরণ সংস্থাগুলোর দেওয়া খুচরা দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব এবং পেট্রোবাংলার গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে।
প্রস্তাব আমলে নেওয়া হলে ওই বৈঠকেই গণশুনানির তারিখ ঘোষণা করা হবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে সেলিম মাহমুদ বলেন, কমিশন খুব দ্রæতই প্রস্তাবগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে চায়। সিদ্ধান্ত যে দিনেই আসুক আর যাই আসুক ১ জুলাই থেকে নতুন মূল্য কার্যকর করা হবে।
উল্লেখ্য, পিডিবি গত ৬ জুন বিদ্যুতের পাইকারি দাম ৫০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব জমা দেয়। এরপর ২৪ জুন গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানোর জন্য ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি), ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) এবং ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) ৫৩ থেকে ৫৬ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব জমা দেয়।
এরপর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) বিদ্যুতের খুচরা দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে জমা দেয়।
এদিকে পেট্রোবাংলা আবাসিক ছাড়া অন্যান্য আট খাতের গড়ে ৩৪ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে।
প্রস্তাবে পেট্রোবাংলা শিল্প-কারখানায় ক্যাপটিভ পাওয়ারে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম একশ’ ভাগ, রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাসের (সিএনজি) দাম প্রতি ঘনমিটারে ১০ টাকা, ক্যাপটিভ পাওয়ারের বর্তমান দর ৪ টাকা ১৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে প্রতি ঘনমিটার ৯ টাকা ৮৯ পয়সা করার প্রস্তাব করেছে।
শিল্প-কারখানায় বর্তমান দর প্রতি ঘনমিটার ৫ টাকা ৮৬ পয়সা থেকে ১ টাকা ৯১ পয়সা বাড়িয়ে ৭ টাকা ৭৭ পয়সা, সিএনজি গ্যাস ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা, সার কারখানায় ২ টাকা ৫৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২ টাকা ৮৩ পয়সা, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ২ টাকা ৮২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২ টাকা ৯৭ পয়সা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাণিজ্যিক খাতে সরবরাহকৃত গ্যাস বর্তমান মূল্য ৯ টাকা ৪৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১২ টাকা ৩৬ পয়সা, চা-বাগানে ব্যবহৃত গ্যাস ৬ টাকা ৮২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৭ টাকা ৬ পয়সা করার প্রস্তাব দিয়েছে।
বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এম শামসুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর যে প্রবিধান মালা রয়েছে দাম বাড়ানো সময়ে তা মানা হচ্ছে না। বিগত কয়েক দফায় প্রবিধানমালা ভেঙ্গে দাম বাড়ানো হয়েছে।
তিনি দাবি করেন, যেসব শর্ত সাপেক্ষে দাম বাড়ানো হয় তার কোনোটাই কখনো পালন করেনি পিডিবি। পিডিবি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর ৭০ শতাংশ প্ল্যান্ট ফ্যাক্টরে চালানোর কথা বলে দাম বাড়িয়ে নেয়। কিন্তু পিডিবি সে মোতাবেক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালায়নি। পিডিবি প্রতিশ্রæত প্ল্যান্ট ফ্যাক্টরে বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালালে লোডশেডিং যা হয়েছে, তা হওয়ার কথা ছিলো না। কিন্তু বিইআরসি তা বাস্তবায়নে কোনোই ভূমিকা পালন করেনি।
এ কারণে নতুন করে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কোনোই যুক্তি নেই বলেও দাবি করেন শামসুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘‘দ্রব্যমূল্যের কারণে সাধারণ মানুষ চরম কষ্টে রয়েছেন। এ অবস্থায় বিদ্যুতের দাম বাড়লে আরেক দফা বাড়বে সব পণ্যের দাম। তাই আমি বিদ্যুতের দাম না বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করবো।’’