সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে মিসরের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ নিলেন মোহাম্মদ মুরসি । মিসরের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম প্রেসিডেন্ট এবং রাষ্ট্রের পঞ্চম প্রধান হিসেবে শনিবার রাজধানীর কায়রোতে সাংবিধানিক আদালতের সামনে শপথ নেন তিনি।
উল্লেখ্য, রাজতান্ত্রিক শাসন উৎখাতের দীর্ঘ ৬০ বছর পর মিসরে এই প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত কোনো প্রেসিডেন্ট শপথ নিলেন ।
সংবাদমাধ্যম জানায়, শনিবার রাজধানী কায়রোতে নীলনদের তীরে অবস্থিত মিসরের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কনস্টিটিউশনাল কোর্টের সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ নেন মুরসি। শপথ অনুষ্ঠানে সর্বোচ্চ আদালতের এক বিচারক বলেন, ‘আজ দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্রের জন্মদিন।’ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
প্রথা অনুযায়ী পার্লামেন্টের সামনে শপথ নিতে চেয়েছিলেন মুরসি। কিন্তু মোবারক পরবর্তী মিসরের ক্ষমতাসীন সামরিক পরিষদ নির্বাচিত পার্লামেন্টকে বিলুপ্ত করলে সে পথ রুদ্ধ হয়ে যায়।
তবে শুক্রবার তাহরির স্কয়ারের সমাবেশে তিনি জনগণের সামনে প্রতীকী শপথ নেন এবং গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা যে কোনো মূল্যে অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেন।
মাত্র একদিন আগে তাহরির স্কয়ারের সমাবেশে দেওয়া ঐতিহাসিক ওই বক্তৃতায় তিনি মিসরের সামরিক বাহিনীর জেনারেলদের সর্তক করে বলেন, প্রেসিডেন্টের ক্ষমতায় হস্তক্ষেপের কোনো চেষ্টা বরদাস্ত করবেন না তিনি।
তাহরির স্কয়ারের ভাষণে মিসরে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠারও অঙ্গীকার করেন তিনি। পাশাপাশি সংবিধানের গণতান্ত্রিক চরিত্র বজায় রাখারও অঙ্গীকার করেন। এসময় মুরসি বলেন, ‘কোনো প্রতিষ্ঠানই জনগণের জবাবদিহিতার উর্দ্ধে নয়।’ ধারণা করা হচ্ছে বেসামরিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগির লড়াইয়ে লিপ্ত দেশটির সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্যেই মুরসির এ মন্তব্য।
তাহরির স্কয়ারে শনিবারের ভাষণের এক পর্যায়ে ভাষণ মঞ্চ থেকে বেরিয়ে জনতার কাছাকাছি চলে আসেন প্রেসিডেন্ট মুরসি । তিনি তার পরিহিত জ্যাকেট খুলে ফেলে উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, তার শরীরে কোনো বুলেট প্রুফ জ্যাকেট নেই। তিনি বলেন, ‘আমি আমার জনগণকে ভয় করি না। সৃষ্টিকর্তা ছাড়া আমি আর কাউকেই ভয় করি না।’
এ সময় মুরসি অঙ্গীকার করেন, তিনি বিপ্লবের সময় আটক বেসামরিক নাগরিকদের মুক্তির জন্য কাজ করে যাবেন। মিসরের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর ধারণা, আন্দোলনের সময় আটক প্রায় ১২ হাজার বেসামরিক নাগরিককে বর্তমানে সামরিক আদালতে বিচারের সম্মুখীন করার প্রক্রিয়া চলছে।
শনিবারের ভাষণে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ব্যাপারেও কথা বলেন মুরসি। প্রতিবেশী আফ্রিকান এবং মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের অঙ্গীকার করে এ অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখার চেষ্টা করবেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। এখন থেকে মিসরের পররাষ্ট্রনীতিতে জনগণের ইচ্ছাই প্রতিফলিত হবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি।