বাংলাদেশ আর্সেনিক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আর্সেনিকযুক্ত পানি দিয়ে শস্য আবাদ করলে খাদ্যশৃঙ্খলের মাধ্যমে আর্সেনিক বিস্তার লাভ করতে পারে। সেচের পানিবাহিত এ আর্সেনিক এখন আমাদের চাষের জমিকেও সংক্রমিত করেছে।
ফলে, আর্সেনিক দূষিত জমিতে উৎপন্ন খাদ্য-শস্য ও তরিতরকারি ভক্ষণের মাধ্যমেও আর্সেনিক আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ আশঙ্কার বাস্তবতা নির্ভর করে জমিতে চাষ করা খাদ্যোপযোগী গাছপালা মাটি থেকে কতটুকু আর্সেনিক শুষে নিচ্ছে তার ওপরে।
তবে আর্সেনিকমুক্ত শস্য নিশ্চিত করতে মাইক্রোইজা ছত্রাক কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এ ছত্রাক আর্সেনিক প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
আন্তর্জাতিক গবেষক ও কৃষিবিজ্ঞানীরা ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে এসব তথ্য জানিয়েছেন। শুক্রবার রাজধানীর বনানীতে বেস্টওয়ে ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বার্ড) মিলনায়তনে ‘শস্যের দ্বারা আর্সেনিক উদগিরনে মাইকোরাইজা ছত্রাকের ভূমিকা ’ শীর্ষক এ আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
চট্রগ্রাম বিশ্বাবদ্যালয়, ইউএস ডির্পাটমেন্ট অব এগ্রিকালচার এবং বেস্টওয়ে ইনস্টিটিউট ফর রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বার্ডের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্রের নর্দান এরিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নেন্সি সি জনসন, সৌদি আরবের কিংস সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আমিন উদ্দিন মৃধা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এস এম ইমামুল হক। উপস্থিত ছিলেন ড. দিলারা বেগম ও ড. পার্থ প্রতীম ধর এবং বিভিন্ন কৃষি বিশ্ববিদ্যালযের গবেষকরা।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড.আনোয়ার হোসেন ও বেস্টওয়ে ইনস্টিটিউট ফর রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-বার্ডের চেয়ারম্যান মো.মিজানুর রহমান।
মিজানুর রহমান বলেন, ‘‘দেশ থেকে আর্সেনিক দূর করতে আমরা সরকারের সহযোগিতা চাই। এজন্য সেচে ব্যবহৃত পানি ও শস্য আর্সেনিকমুক্ত করা জরুরি। বেস্টওয়ে গ্রুপ বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করছে। সেই সঙ্গে মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে কাজ করছে।’’
যুক্তরাষ্ট্রের নর্দার্ন এরিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নেন্সি সি জনসন বলেন, আর্সেনিক একটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা । বাংলাদেশে এ সমস্যা ভয়াবহ রকমের বেশি। এর থেকে পরিত্রাণের জন্য মাইক্রোইজা ছত্রাক কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। কারণ, আর্সেনিকযুক্ত পানির মাধ্যমে শস্য আবাদ হলে আর্সেনিক ছড়ায়। কচুরিপানা আর্সেনিকের লঘু দ্রবণ থেকেও দূর করতে পারে। তবে কচুরিপানা থেকে আর্সেনিক বাইরেও বেরিয়ে আসতে পারে।
তিনি বলেন, রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে আর্সেনিক দূরীকরণ করা যায়। তবে জৈব পদ্ধতি ব্যবহারই উত্তম।
কিংস সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আমিন উদ্দিন মৃধা বলেন, বাংলাদেশের অর্ধেকেরও বেশি জেলার ভূগর্ভস্থ পানিতে গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি মাত্রায় আর্সেনিক পাওয়া গেছে। নিঃসন্দেহে এটি ভয়াবহ চিত্র। ইতিমধ্যে আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করে বাংলাদেশের বেশ কিছু মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। জীবনহানির ঘটনাও বিরল নয়। এ বিষয়ে অবশ্য কিছুটা সচেতনতার সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, উচ্চমাত্রার আর্সেনিকযুক্ত পানি দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহার করলে উদ্ভিদের মূলতন্ত্রের ক্ষতি হয়। কিন্তু ক্ষতিকারক মাত্রায় পৌঁছালে উদ্ভিদের বৃদ্ধি হ্রাস পায়। আর্সেনিকযুক্ত পানি স্বল্পকালের জন্য প্রয়োগ করলে উদ্ভিদের স্থায়ী ক্ষতি হয় না। যদি না পরবর্তী সময়ে আবার আর্সেনিকমুক্ত পানি প্রয়োগ করা হয়।
তিনি বলেন, বর্তমানে মাটি অথবা পানিতে যে মাত্রায় অজৈব আর্সেনিক পাওয়া যায়, তা খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত শস্যের মাধ্যমে খাদ্য শৃঙ্খলে প্রবেশ করতে পারে। তাই আর্সেনিক থেকে সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে আর্সেনিক থেকে বাঁচতে হবে। আর্সেনিকমুক্ত শস্যে মাইক্রোইজা ছত্রাক এ ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
ড. এস এম ইমামুল হক বলেন, ‘‘ভূগর্ভস্থ জলে এবং মাটিতে আর্সেনেট এবং আর্সেনাইট আকারে প্রধানত আর্সেনিক থাকে। গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি মাত্রার আর্সেনিক কলুষিত জল সেচের কাজে ব্যবহার করলে শস্য ও উদ্ভিদের যথেষ্ট ক্ষতি হয়। শুধু তাই নয়, খাদ্য শৃঙ্খলের মাধ্যমে মানব শরীরেও তা প্রবেশ করতে পারে। এ বিষয়ে আমাদের সচেতনতা যথেষ্ট কম। তাই সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।’’