সিলেটে আরো দুই জনের লাশ উদ্ধার করার পর সিলেট, চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও কক্সবাজারে এ পর্যন্ত পাহাড় ধসসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে নিহত মোট ১১৮ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। পাশপাশি উদ্ধার কাজ শেষ করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার রাত আটটার দিকে খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানায়।
সর্বশেষ উদ্ধার করা লাশের মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রামে ৩২ জন, কক্সবাজারে ৪৭ জন, বান্দরবানে ৩৭ জন এবং সিলেটে দুই জন। নিহতদের লাশের সৎকারের জন্য প্রতি পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে সাহায্য দেওয়া হয়েছে।
পাহাড়ি ঢল ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকার এ পর্যন্ত দুই কোটি ৬০ লাখ টাকা ও সাত হাজার ৫০ মে.টন চাল দিয়েছে।
খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কয়েক দিনের অতিবর্ষণ, পাহাড়ি ঢল ও আকস্মিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সাহায্য এবং অন্যান্য জেলার বন্যার আগাম প্রস্তুতি হিসেবে সরকার এ পর্যন্ত দুই কোটি ৬০ লাখ টাকা ও সাত হাজার ৫০ মে.টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে। এর মধ্যে শুক্রবার বিভিন্ন জেলায় এক কোটি ৩৫ লাখ টাকা ও পাঁচ হাজার টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়।
শুক্রবার খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা হয়। এর আগে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ বিভাগের সচিব ড. এম আসলাম আলম সর্বশেষ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন।
বরাদ্দপ্রাপ্ত জেলাগুলোর মধ্যে হবিগঞ্জে দুই লাখ টাকা ও ১০০ মে.টন চাল, লালমনিরহাটে ৫০ মে.টন চাল, রাঙামাটিতে পাঁচ লাখ টাকা ১০০ মে.টন চাল, গোপালগঞ্জে ৫০ মে.টন চাল, রংপুরে ৫০ মে. টন চাল, গাইবান্ধায় ১৩ লাখ টাকা ও ৩০০ মে.টন চাল, কুড়িগ্রামে ১৫ লাখ টাকা ও ৬৫০ মে.টন চাল, সিরাজগঞ্জে ১০ লাখ টাকা ও ৩০০ মে.টন চাল, পাবনায় পাঁচ লাখ টাকা ও ২০০ মে.টন চাল, রাজবাড়ীতে পাঁচ লাখ টাকা ও ২০০ মে.টন চাল, মাদারীপুরে ১০ লাখ টাকা ও ৩০০ মে.টন চাল, বগুড়ায় তিন লাখ টাকা ও ২০০ মে.টন চাল, চাঁদপুরে পাঁচ লাখ টাকা ও ২০০ মে.টন চাল, ময়মনসিংহে পাঁচ লাখ টাকা ২০০ মে.টন চাল, জামালপুরে ১০ লাখ টাকা ও ৫০০ মে.টন চাল, টাঙ্গাইলে ১০ লাখ টাকা ৪০০ মে.টন চাল, মুন্সিগঞ্জে পাঁচ লাখ টাকা ৩০০ মে.টন চাল, শরীয়তপুরে পাঁচ লাখ টাকা ও ৩০০ মে.টন চাল, সিলেটে ১০ লাখ টাকা ৩০০ মে.টন চাল, মানিকগঞ্জে ১০ লাখ টাকা ও ৩০০ মে.টন চাল এবং সুনামগঞ্জে দুই লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
এ দিকে অতিবৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল, পাহাড় ধস, পানিতে ডুবে এবং বজ্রপাতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান ও সিলেটে শুক্রবার পর্যন্ত ১১৮ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে ৩২ জন, কক্সবাজারে ৪৭ জন, বান্দরবানে ৩৭ জন এবং সিলেটে দুই জনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
নিহতদের লাশের সৎকারের জন্য প্রতি পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে সাহায্য দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে উদ্ধারকাজ সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র আরো জানায়, বান্দরবানের ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে দুই হাজার ৫০০ জন এবং কক্সবাজার জেলার ১৩৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৫৮ হাজার দুর্গত মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। পানি নেমে যাওয়ায় তারা আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে যাচ্ছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি-ঘর মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করতে স্থানীয় প্রশাসনেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোতে গৃহনির্মাণ বাবদ প্রায় ১১ লাখ টাকা মুজত রয়েছে। প্রয়োজনে এ খাতে আরো বরাদ্দ দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, শুক্রবার দেওয়া বরাদ্দের আগে সরকার এক কোটি ২০ লাখ টাকা ও এক হাজার ৭৫০ মে.টন চাল বরাদ্দ দেয়। এর মধ্যে চট্টগ্রামে ৪০ লাখ টাকা ও ৬০০ মে.টন চাল, কক্সবাজারে ৩০ লাখ টাকা ও ৫০০ মে.টন চাল, বান্দরবানে ১০ লাখ টাকা, সিলেটে ১০ লাখ টাকা ও ২৫০ মে.টন চাল, ফেনীতে পাঁচ লাখ টাকা ও ৫০ মে.টন চাল, নেত্রকোনায় দুই লাখ টাকা, ভোলায় দুই লাখ টাকা, পিরোজপুরে দুই লাখ টাকা ও ৫০ মে.টন চাল, হবিগঞ্জে পাঁচ লাখ টাকা, মৌলভীবাজারে পাঁচ লাখ টাকা ২০০ মে.টন চাল ও গৃহনির্মাণ বাবদ পাঁচ লাখ টাকা এবং মানিকগঞ্জে চার লাখ টাকা ও ১০০ মে.টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়ছিল।
চট্টগ্রাম অঞ্চলের জেলাগুলোর ত্রাণ কার্যক্রম সমন্বয় ও স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তা করতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অসিত কুমার মুকুটমণি চট্টগ্রামে অবস্থান করছেন। ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদফতরের তিন জন পরিচালক ও দু’জন উপ-পরিচালক অধিক ক্ষতিগ্রস্ত চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার ত্রাণ কার্যক্রমে স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তা করা ও সার্বিক সমন্বয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট জেলায় অবস্থান করছেন।
শুক্রবার মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় দুর্যোগ সাড়াদান সমন্বয় কেন্দ্র (এনডিআরসিসি) সার্বক্ষণিকভাবে খোলা ছিল। শনিবারও এটি খোলা থাকবে। এনডিআরসিসি থেকে দেশের দুর্যোগ পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এ সেন্টারের টেলিফোন নং ৭১৬০৪৫৪, ৭১৬২১১৬, ৭১৬৪১১৫, ০১৭১৫০৮২৬২০।