দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম ও তাঁর বাবা ওমর আলীকে সরকারি বাসভবনে ঢুকে হামলার ঘটনায় আরো তিন সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘আজ শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে ৬টার মধ্যে ঘোড়াঘাট থেকে এ ঘটনায় আরো তিন সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের থানায় আনা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ আটক তিনজন হলেন- শাওন, সুলতান ও শ্যামল কুমার।
এ ছাড়া ইউএনও ওয়াহিদা খানমের গৃহপরিচারিকা জবেদা খাতুনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গত বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে একদল দুর্বৃত্ত মই বেয়ে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের সরকারি বাসভবনে প্রবেশ করে। তারা বাসভবনের ভেন্টিলেটর ভেঙে বাসায় ঢুকে ওয়াহিদা খানমকে হাতুড়ি দিয়ে পেটাতে শুরু করে। এ সময় ইউএনওর চিৎকার শুনে পাশের কক্ষে থাকা তাঁর বাবা ছুটে এসে মেয়েকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে দুর্বৃত্তরা তাঁকেও আঘাতে জখম করে। পরে কোয়ার্টারের অন্য বাসিন্দারা তাঁদের চিৎকার শুনে পুলিশকে খবর দেয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁদের রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে গত বৃহস্পতিবার ওয়াহিদা খানমকে ঢাকায় আনা হয়।
ওয়াহিদা খানমের অস্ত্রোপচার গত বৃহস্পতিবার রাতে ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে সম্পন্ন হয়। সবশেষ জানা গেছে, তাঁর সেরে ওঠার ব্যাপারে আশাবাদী চিকিৎসকরা।
এই ঘটনায় ইউএনও ওয়াহিদা খানমের বড় ভাই শেখ আরিফ হোসেন বাদী হয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে ঘোড়াঘাট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।
গতকাল সন্ধ্যায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব)-১৩ পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই মামলায় মো. নবিরুল ইসলাম (৩৫) ও সান্টু কুমার বিশ্বাস (২৮) ছাড়াও ঘোড়াঘাট উপজেলা যুবলীগের সদস্য আসাদুল হককে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মামলাটি পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) শাখায় হস্তান্তর করা হয়েছে। মামলাটি তদন্ত করছেন জেলা ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমাম জাফর।
আজ শনিবার নবিরুল ও সান্টুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন দিনাজপুরের একটি আদালত। তবে প্রধান আসামি আসাদুল হককে আজ আদালতে হাজির করা হয়নি। অসুস্থ থাকায় তাঁকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।
এ ঘটনার পর দিনাজপুরের হাকিমপুর, বিরামপুর ও ঘোড়াঘাট থানা পুলিশ এবং র্যাব-১৩ এর একটি দল যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে গতকাল শুক্রবার ভোরে হিলির কালীগঞ্জ এলাকায় বোনের বাড়ি থেকে আসাদুল ইসলামকে আটক করে। আর রংমিস্ত্রি মো. নবিরুল ইসলাম ও সান্টু কুমার বিশ্বাসকে শুক্রবার ঘোড়াঘাট থেকে আটক করা হয়। নবিরুল ইসলাম ও সান্টু কুমার ঘোড়াঘাট উপজেলার সামনে রংমিস্ত্রির কাজ করেন।
এ ছাড়া এই ঘটনায় ঘোড়াঘাট উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলমকেও গতকাল শুক্রবার ভোরে নিজ বাড়ি থেকে আটক করা হয়। পরে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সন্ধ্যায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানায় র্যাব।