শিয়ার করোনাভাইরাস টিকার পরীক্ষা শুরুর পর প্রথম প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রাথমিকভাবে টিকায় ভাইরাস প্রতিরোধের সক্ষমতা তৈরির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।
চিকিৎসা বিষয়ক সাময়িকী দা ল্যান্সেটে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, যারা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন, তাদের সবার শরীরে করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করার মতো অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে এবং বড় কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
বিশ্বের প্রথম দেশ হিসাবে এবং কোনরকম তথ্য প্রকাশ না করেই অগাস্ট মাসে স্থানীয়ভাবে ব্যবহারের জন্য টিকার লাইসেন্স দেয় রাশিয়া।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর সক্ষমতা এবং নিরাপত্তা প্রমাণ করার জন্য এই পরীক্ষাটি খুবই ছোট আকারের। রাশিয়ার কাজের ধরণ নিয়ে পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন, তারা হয়তো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এড়িয়ে যাচ্ছেন। তবে সমালোচনার বিপক্ষে পরীক্ষার ফলাফলকে স্বাগত জানিয়েছে মস্কো।
গত মাসে প্রেসিডেন্ট ভ্লামিদির পুতিন বলেছেন, প্রয়োজনীয় সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে টিকাটি। তার এক কন্যাকেও টিকা দেয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে কী বলা হয়েছে?
স্পুটনিক-ফাইভ নামের টিকাটির পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হয়েছে গত জুন থেকে জুলাই মাসের মধ্যে।
দা ল্যান্সেটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩৮জন স্বাস্থ্যবান স্বেচ্ছাসেবীর ওপর টিকার প্রয়োগ করা হয়েছে এবং তিন সপ্তাহ পরে তাদের আবার বুস্টার ডোজ দেয়া হয়েছে।
অংশগ্রহণকারীদের বয়স ছিল ১৮-৬০ বছরের মধ্যে। তাদের পরবর্তী ৪২ দিন ধরে নজরদারিতে রাখা হয়।
তাদের সবার শরীরে পরবর্তী তিন সপ্তাহের মধ্যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। বেশিরভাগের ক্ষেত্রে সাধারণ যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে, তা হলো মাথা ব্যথা এবং হাড়ের সন্ধিস্থলে ব্যথা।
তৃতীয় দফায় বিভিন্ন বয়সের ও ঝুঁকি শ্রেণীর ৪০,০০০ স্বেচ্ছাসেবীর ওপর পরীক্ষা করা হবে।
সাধারণ সর্দিকাশি তৈরি করে, সেই অ্যাডেনোভাইরাসের উপাদান ব্যবহার করে রাশিয়ার এই টিকা তৈরি করা হয়েছে।
তবে বিবিসির স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রতিবেদক ফিলিপ্পা রক্সি বলছেন, যদিও যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীদের কাছ থেকে ‘উৎসাহব্যঞ্জক, যথেষ্ট ভালো’ বলে মন্তব্য পেয়েছে, কিন্তু এখনো এই টিকার সফলতার জন্য পরিষ্কারভাবে অনেকদূর যেতে হবে। যদিও দ্বিতীয় দফায় সব অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার লক্ষণ দেখা গেছে কিন্তু তার মানে এই নয় যে, এটি করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষা দিতে সক্ষম। সেই ক্ষমতার ব্যাপারটি এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
তিনি প্রশ্ন তুলে বলছেন, প্রাথমিক ফলাফল থেকে বলা যায় যে, স্বাস্থ্যবান মানুষজনের ভেতর টিকাটি ভালো কাজ করছে, যাদের বয়স ১৮-৬০ বছরের মধ্যে। কিন্তু বয়স্ক মানুষজন, যাদের বিশেষ স্বাস্থ্য ঝুঁকি আছে, তাদের জন্য এই টিকাটি কতটা কার্যকর?
”এটা শুধুমাত্র তখনি জানা যাবে যখন অনেক বেশি মানুষের ওপর, গণহারে মানুষের ওপর পরীক্ষা করা হবে এবং তাদের জানানো হবে না যে, তাদের আসল টিকা দেয়া হয়েছে নাকি ডামি টিকা দেয়া হয়েছে। তখন শুধুমাত্র বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারছেন যে, ব্যাপক জনগোষ্ঠীর ওপর টিকাটি কতটা কার্যকর,” বলছেন বিবিসির স্বাস্থ্য বিষয়ক সংবাদদাতা।
সেই সঙ্গে এখানে আরও স্বচ্ছতার প্রয়োজন রয়েছে বলেও তিনি বলেন। টিকা তৈরিতে বহু গবেষণা চলছে সারা বিশ্বে।
”বিশ্ব জুড়ে এখন অনেক টিকার পরীক্ষা চলছে। কোন কোন স্থানে একটার চেয়ে আরেকটা ভালো কাজ করে, কোন কোন টিকা বিশেষ পরিস্থিতিতে এবং নির্দিষ্ট মানুষজনের ভেতর ভালো করছে। সুতরাং সবার জন্য কোনটা ভালো হবে, সেটা জানা জরুরি।”
রাশিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী মিখাইল মুরাশকো বলেছেন, নভেম্বর ডিসেম্বর মাস থেকে দেশটি আরও বেশি মানুষকে টিকা দেয়া শুরু করবে। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, বাজারে পুরোপুরি চালু করার আগে আরও পরীক্ষানিরীক্ষা করা উচিত।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে ১৭৬টি টিকা আবিষ্কারের কাজ চলছে। এর মধ্যে মানব পর্যায়ের ট্রায়ালে রয়েছে ৩৪টি টিকা। তার মধ্যে আটটি রয়েছে তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষার ধাপে।