র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) দাবি করেছে, দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম ও তাঁর বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলীর ওপর হামলার ঘটনায় তিনজন জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। এর মধ্যে র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে উপজেলার যুবলীগের সদস্য আসাদুল হক দাবি করেছেন, ‘নিছক চুরির অভিপ্রায়’ থেকে ইউএনওর ওপর এই হামলা হয়েছে।
রংপুরে র্যাব-১৩-এর অধিনায়ক রেজা ফেরদৌস আহমদ আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘এ মামলার অভিযুক্ত মূল আসামি মো. আসাদুল হককে আমরা ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করি এবং জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সে এই জঘন্যতম ঘটনার সঙ্গে তার নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে। এবং এই ঘটনায় সে দাবি করে যে, মো. নবিরুল ইসলাম ও শ্রী সান্টু কুমার বিশ্বাস এই দুজন তাঁর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল।‘
র্যাব-১৩ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক আরো বলেন, ‘র্যাবের পক্ষ থেকে এই কার্যক্রমের সবচেয়ে বড় সফলতা হল, প্রধান সন্দেহভাজন আসামি আসাদুলের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি। সেখানে আসাদুলের দাবি অনুযায়ী, এটি একটি নিছক চুরির অভিপ্রায় থেকে সংগঠিত হওয়া ঘটনা।‘
‘আসাদুলের দাবি অনুযায়ী, মূল পরিকল্পনা ছিল নবিরুলের’- এমনটা উল্লেখ করে রেজা ফেরদৌস আহমদ বলেন, ‘প্রকৃত মোটিভ বা প্রকৃত উদ্দেশ্যটি বের করার জন্য আরো সুগভীর এবং সময়সাপেক্ষ তদন্ত করে মন্তব্য করতে হবে। তবে এ বিষয়ে মন্তব্য করার মতো পর্যাপ্ত তথ্য আমাদের কাছে নেই।‘
এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে র্যাব কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘আসাদুলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ইউএনও মহোদয়ের বাসগৃহ থেকে অর্থ-সম্পদ লুট করা বা চুরির জন্য এই ঘটনা। তবে বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করে জানার জন্য বিশদভাবে তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে।‘
অপর এক প্রশ্নের জবাবে রেজা ফেরদৌস আহমদ বলেন, ‘এই বিষয়ে চূড়ান্ত মন্তব্য করার সময় এখনো আসেনি। অথবা সেই কার্যক্রম পরিচালনা করার সময় হয়নি। আমরা ছায়া তদন্ত করছি।‘
গত বুধবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে একদল দুর্বৃত্ত মই বেয়ে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের সরকারি বাসভবনে প্রবেশ করে। তারা বাসভবনের ভেন্টিলেটর ভেঙে বাসায় ঢুকে ওয়াহিদা খানমকে হাতুড়ি দিয়ে পেটাতে শুরু করে। এ সময় ইউএনওর চিৎকার শুনে পাশের কক্ষে থাকা তাঁর বাবা ছুটে এসে মেয়েকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে দুর্বৃত্তরা তাঁকেও আঘাতে জখম করে। পরে কোয়ার্টারের অন্য বাসিন্দারা তাদের চিৎকার শুনে পুলিশকে খবর দেয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁদের রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে গতকাল বৃহস্পতিবার ওয়াহিদা খানমকে ঢাকায় আনা হয়।
ওয়াহিদা খানমের অস্ত্রোপচার গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সম্পন্ন হয়েছে। সবশেষ তাঁর জ্ঞান ফিরেছে। তিনি তাঁর স্বামীর সঙ্গে কথাও বলেছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাঁকে ৭২ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তিনি এখনো শঙ্কামুক্ত হননি। তবে, তাঁর সেরে ওঠার ব্যাপারে আশাবাদী ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সে ও হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
এ ঘটনার পর দিনাজপুরের হাকিমপুর, বিরামপুর ও ঘোড়াঘাট থানা পুলিশ এবং র্যাব-১৩ এর একটি দল যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে আজ শুক্রবার ভোরে হিলির কালীগঞ্জ এলাকায় বোনের বাড়ি থেকে আসাদুল ইসলামকে আটক করে।
আর রংমিস্ত্রি মো. নবিরুল ইসলাম ও সান্টু কুমার বিশ্বাসকে আজ ঘোড়াঘাট থেকে আটক করা হয়। নবিরুল ইসলাম ঘোড়াঘাট উপজেলার সামনে রংমিস্ত্রির কাজ করেন। আসাদুল, নবিরুল ও সান্টুকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।