সুশান্তের মৃত্যুর পর থেকে রিয়া চক্রবর্তীর নাম সব ক্ষেত্রে উঠে এলেও তাঁর পাশাপাশি ক্রমাগত খবরের শিরোনামে রয়েছেন প্রয়াত অভিনেতার বন্ধু বলে দাবি করা প্রযোজক সন্দীপ সিং। ১ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সন্দীপের ম্যানেজার দীপক সাহু টুইট করেন, “সুশান্ত-মৃত্যুর তদন্ত বিষয়ে সন্দীপকে নিয়ে যিনি বা যাঁরা নানা রকম গুজব ছড়াচ্ছেন তাঁদের বিরুদ্ধে সন্দীপ মানহানির মামলা করবেন।
মুম্বাই সংবাদমাধ্যম দীপককে সন্দীপ সম্পর্কে আরও কিছু প্রশ্ন করায় তিনি যদিও চুপ করে থাকেন। সন্দীপ নিজেও কেন চুপ করে আছেন? রিয়া চক্রবর্তী থেকে সুশান্তের পরিবারের কেউ তাঁকে চেনেন না বলে সরাসরি জানিয়েছেন, তবুও সুশান্তের মৃত্যুর দিন অর্থাৎ ১৪ জুন তাঁর মরদেহ অ্যাম্বুল্যান্সে করে নিয়ে কুপার হাসপাতালে সন্দীপ কেন হাজির হন? কে বা কারা সুশান্তের মৃত্যুসংবাদ দিলেন সন্দীপকে?
সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, ১৪ থেকে ১৬ জুনের মধ্যে চারবার অ্যাম্বুল্যান্স চালকের সঙ্গে কথা হয়েছে সন্দীপের। কেন এত বার চালককে ফোন করেন তিনি? সুশান্তের ব্যাগ থেকে তাঁর মৃত্যুর দিন সুশান্তের প্যান কার্ড,আধার কার্ড সব সন্দীপ নিজে হাতে বের করে দেন। এতখানি অধিকার ছিল তাঁর! তা হলে সুশান্ত মৃত্যু মামলায় সিবিআই তদন্তের বিরোধিতা করলেন কেন তিনি? প্রশ্ন উঠছে সিবিআই তাঁকে ডাকছে না কেন?
ইতিহাস বলছে ২০১৮, মার্চ মরিশাসে বেড়াতে গিয়ে সন্দীপ একটি ছোট ছেলের শ্লীলতাহানি করেন। ওই কিশোরের অভিযোগ, সন্দীপ তাঁকে হোটেলের ঘরে এনে শ্লীলতাহানি করেন। কিশোরের বাবা হোটেল কর্তৃপক্ষকে জানালেও সন্দীপ তাঁর প্রভাব খাটিয়ে বিষয়টা মিটিয়ে দেন।
নিজের কোনও আচরণ প্রকাশ্যে না আনাই কী তাঁর স্বভাব? নয়তো সুশান্তের মরদেহ দেখে যখন তাঁর দিদি মিতু যখন জ্ঞান হারান তখন সেখানে নাকি একমাত্র সন্দীপ উপস্থিত ছিলেন। এ নিয়েও তিনি কোনও মন্তব্য করেননি। সুশান্তের কল রেকর্ড বলছে যে সন্দীপের সঙ্গে সুশান্তের এক বছর কথা নেই, সেই সন্দীপ তাঁর মৃত্যুর দিন মর্গ থেকে শ্মশান সব নিজে হাতে করলেন? কেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে সুশান্তের পরিবার। নিজে হাতে সব সামলে সুশান্তের মৃত্যুর কোনও বিশেষ প্রমাণ কী তিনি লুকিয়ে রাখলেন? এক সংবাদমাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত দু’মাসে বিজেপি মুম্বইয়ের অফিসে কমপক্ষে ৫৩ বার ফোন করেছেন তিনি। কিন্তু কেন?
সুশান্তের এই প্রযোজক বন্ধুর সঙ্গে সুশান্তের কাজ কর্মের নানা রকম খবর যদিও প্রকাশ পেয়েছে। সন্দীপের পরিচালনায় প্রথম ছবি ‘বন্দেমাতরম’-এ সুশান্ত শুধু অভিনয় করবেন বলে ভেবেছিলেন তা নয়, এই ছবির সহ-প্রযোজক হিসেবেও কাজ করতে চেয়েছিলেন। সুশান্ত-অঙ্কিতার সঙ্গেও সন্দীপের একাধিক ছবি দেখা যায়। এমনকি, সুশান্তের মৃত্যুর পর তাঁর পাটনার বাড়িতে যান বলিউডের এই প্রযোজক। যার বিরুদ্ধে ওই সময় সরব হন সুশান্তের পরিবারের সদস্যরা। সুশান্তের বন্ধু হিসেবে তাঁরা সন্দীপ সিংকে চেনেন না বলেও বার বার দাবি করেন।
সম্প্রতি দিল্লি থেকে মুম্বাইতে ফেরত আসতে দেখা যায় সন্দীপকে। বলিউডের এই প্রযোজক দিল্লিতে কার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন? প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। প্রশ্ন তুলেছেন মহারাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল দেশমুখ। তাঁর বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জীবন নিয়ে ছবি করেছেন সন্দীপ সিং। বিজেপির সঙ্গে তাঁর কী সম্পর্ক, তা খতিয়ে দেখুক সিবিআই। একই সঙ্গে বলিউডের মাদক যোগ নিয়েও তদন্ত হোক। এ ব্যাপারে অনেক অভিযোগ পেয়েছি আমরা। সিবিআইকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে অনুরোধ করব।
কয়েকদিন আগে করণী সেনার এক নেতা সুরজিৎ সিংহ রাঠৌর, যিনি সুশান্তের মৃত্যুর পর হাসপাতালে গিয়েছিলেন, তিনি সংবাদমাধ্যমের সামনে সন্দীপের ক্রিয়া কলাপ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘চক্রান্তে’ বড় ভূমিকা পালন করেছেন সন্দীপ। বিজেপির সঙ্গে ভাল সম্পর্কের জন্য আজও কি সকলের চোখ এড়িয়ে চলছেন সন্দীপ? আনন্দবাজার