রাজধানীর উত্তরায় ২৪ বছর আগে স্থাপিত হয়েছে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। হাজার হাজার শিক্ষার্থী এখান থেকে সনদ নিয়েছেন। এত দিনে প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা থেকে বেশ দূরে স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য শুধু জায়গা কিনেছে। ধানমণ্ডিতে অবস্থিত আরেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ১৯ বছর পেরিয়ে এসেও জমিই কিনতে পারেনি। আবার অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা থেকে দূরে লোক-দেখানো স্থায়ী ক্যাম্পাস করলেও রাজধানীতে ভাড়া বাড়িতেই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সূত্র জানায়, দেশে অনুমোদনপ্রাপ্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০৬। এর মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে ৯৬টি। ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে পুরোপুরি বা আংশিক শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। তবে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে এখনো গড়িমসি করছে ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয়।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ অনুযায়ী অনুমোদনের ১২ বছরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। প্রথমে সাত বছরের জন্য সাময়িক সনদ পায়। এরপর তা সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত নবায়নের সুযোগ আছে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণে ন্যূনতম এক একর এবং অন্যান্য এলাকায় কমপক্ষে দুই একর অখণ্ড জমি থাকতে হবে।
সূত্র জানায়, গত ৩১ জুলাই পর্যন্ত ৭১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাময়িক সনদের মেয়াদ পেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে সাতটি মেয়াদ নবায়নের আবেদন করেছে। আর তিনটি তাদের শিক্ষা কার্যক্রম স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করেছে। বাকি ২৬টির সাময়িক সনদের মেয়াদ বৃদ্ধির সুযোগ আছে। আর ৪১টির মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ নেই।
ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, ‘নির্ধারিত সময় পার করেও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি। কিছু প্রতিষ্ঠান দূরে স্থায়ী ক্যাম্পাস করার পরও ভাড়া বাড়িতেই কার্যক্রম চালাচ্ছে। অনেকে ইচ্ছাকৃতভাবেও যাচ্ছে না। করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে আমরা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পারিনি। আশা করছি, আর দু-তিন মাস পর করোনার সমস্যা কেটে যাবে। এরপর আমরা অ্যাকশনে যাব। ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বর্তমান অবস্থা জানতে আমরা কাজ শুরু করেছি।’
বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, ‘করোনায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও ক্ষতিগ্রস্ত। এখন শুরু হয়েছে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের যুদ্ধ। সেখানে বড় প্রয়োজন শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন। এ জন্য সব শিক্ষার্থীকে অনলাইন ক্লাসে সম্পৃক্ত করার ওপর ইউজিসির জোর দেওয়া উচিত।’
জানা যায়, আইনি বাধ্যবাধকতা ও ইউজিসির চাপে বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা থেকে বেশ দূরে গড়ে তুলেছে স্থায়ী ক্যাম্পাস। তবে ওই ক্যাম্পাসে তেমন কোনো শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে না। স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ৯টি কাজ শুরু করেছে। দুটি বিশ্ববিদ্যালয় ফাউন্ডেশনের জমিতে নির্মিত স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে আইন অনুযায়ী সেটিও বৈধ নয়। আর তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে কম জমিতে স্থায়ী ক্যাম্পাস করেছে।
২০০০ সালে অনুমোদন পাওয়া একটি বিশ্ববিদ্যালয় বাড্ডায় স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করেছে। এর পরও তারা বনানী ও গ্রিন রোডে ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে। দ্য পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ২৩ বছরেও স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি। মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বিরুলিয়ায় স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের পাশাপাশি ঢাকায় একাধিক স্থানে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ অনুমোদন পায় ২০০১ সালে। এটি এখনো স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করেনি।
প্রাইম ইউনিভার্সিটি মিরপুরে স্থায়ী ক্যাম্পাস গড়লেও নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে জমি কম রয়েছে। ১৯৯৬ সালে অনুমোদন পাওয়া এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এখনো চলছে ভাড়া বাড়িতে। রাজধানীর সোবহানবাগে অবস্থিত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস থাকলেও ভাড়া বাড়িতেই চলছে বেশির ভাগ শিক্ষা কার্যক্রম। চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এখনো একাধিক ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে। মহাখালীতে অবস্থিত একটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাভারে স্থায়ী ক্যাম্পাস থাকলেও তারা সেখানে আংশিক কার্যক্রম চালাচ্ছে। বনানীতে অবস্থিত একটি বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকার বেশ দূরে দুটি স্থায়ী ক্যাম্পাস করলেও একটিতেও তারা যাচ্ছে না।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনেকটাই উদাসীন। প্রায় তিন বছর আগে মন্ত্রণালয়েরই এক সভায় এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি, নতুন বিভাগ ও অনুষদ খোলা এবং সমাবর্তন আয়োজনের অনুমতি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছিল; কিন্তু রহস্যজনক কারণে সেই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়নি।