চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিম নারীদের জোরপূর্বক গর্ভপাত ঘটানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে সদ্যোজাত শিশুকেও মেরে ফেলা হচ্ছে। চীন সরকারের পরিবার পরিকল্পনা নীতিমালার বাইরে গর্ভধারণ করলে এমন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পরিবার পরিকল্পনার নীতি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সংখ্যার বেশি কেউ সন্তান নিলে বা কোনো নারী তিন বছরের কম সময়ের মধ্যে দুইবার সন্তান জন্ম দিলে এমন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এই তথ্য প্রকাশ করেছেন উইঘুর মুসলিম চিকিৎসক হাসিয়েত আবদুল্লাহ।
রেডিও ফ্রি এশিয়ার খবরে বলা হয়, প্রসূতিবিষয়ক চিকিৎসক ডা. আবদুল্লাহ চীনের জিনজিয়াংয়ের বেশ কিছু হাসপাতালে কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি তুরস্কে বসবাস করছেন।
তিনি জানান, উইঘুর বা সংখ্যালঘু অন্যান্য জাতিসত্তার শহরে বসবাসরত দম্পতির সন্তান থাকবে দুটি। গ্রামে বাস করলে সেই দম্পতির সন্তান থাকবে তিনটি। আরো বলা আছে, তিন বছর ফাঁক রেখে সন্তানের জন্ম দিতে হবে। এই সীমা লঙ্ঘন করে সন্তান ধারণ করলে সংশ্লিষ্ট নারীকে গর্ভপাত করাতেই হবে। নইলে ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশুকে হত্যা করা হবে।
গত ২৯ জুন জার্মান গবেষক আড্রিয়ান জেনজ এক সমীক্ষায় জানান, চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণ ও গর্ভপাতের হার সাম্প্রতিক সময়গুলোতে নাটকীয়ভাবে বেড়ে গেছে। জেনজ বলেন, চীনা সরকারের নেতৃত্বে জবরদস্তিমূলক জন্মনিয়ন্ত্রণ অভিযানকে জাতিসংঘের সংজ্ঞা অনুসারে ‘গণহত্যা’ বলা চলে। এর পরই ডা. হাসিয়েত আব্দুল্লাহ এসব তথ্য সামনে আনলেন।
তিনি আরো বলেন, জিনজিয়াংয়ের প্রতিটি হাসপাতালে পরিবার পরিকল্পনা ইউনিট আছে। কোন নারীর কখন প্রসব সে বিষয়ে কড়া নজর রাখে এই ইউনিট। প্রয়োজনে তারা ৮-৯ মাসের গর্ভবতীরও গর্ভপাত ঘটায়। নিয়মের বাইরে জন্ম নেওয়া শিশুকে তারা বাবা-মার কাছে দেয় না। শিশুটি মেরে ফেলে এবং মৃতদেহ গুম করে। এসব কাজ তাদের করতেই হচ্ছে। কারণ ‘উপরের আদেশ’ আছে। হাসপাতালগুলো যদি তা মান্য না করে, তবে তাদের জরিমানা করা হয়।
উইঘুর জনগোষ্ঠীকে ডিটেনশন ক্যাম্পে আটক রাখা, নির্যাতন-নিপীড়ন করায় বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মুখে রয়েছে চীন। ধারণা করা হয়, পশ্চিমাঞ্চলীয় জিনজিয়াং প্রদেশে প্রায় দশ লাখ উইঘুর ও অন্য সংখ্যালঘু মুসলিমকে এসব ক্যাম্পে আটক রেখেছে চীন। বেইজিং কর্তৃপক্ষ এগুলোকে ‘পুনঃশিক্ষা কেন্দ্র’ আখ্যা দিয়ে থাকে। সন্ত্রাস দমনে এগুলোর প্রয়োজন রয়েছে বলে দাবি তাদের। তবে এসব ক্যাম্পে নিপীড়নের বহু অভিযোগ রয়েছে। জিনজিয়াং প্রদেশে চীন যে অভিযান চালাচ্ছে, তাকে অনেক বিশেষজ্ঞই ‘জনতাত্ত্বিক গণহত্যার’ একটি ধরন বলে মনে করেন।
সূত্র : এএনআই।