তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, দেশে লাইসেন্সপ্রাপ্ত সিনেমা হলগুলোর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বন্ধ হয়ে গেছে। ১২০০ লাইসেন্সপ্রাপ্ত সিনেমা হলের মধ্যে ৭৫০টিই এখন বন্ধ। সিনেমা হল মালিকরা কম মুনাফার এ ব্যবসা ছেড়ে এখন অন্য লাভজনক ব্যবসায় ঝুঁকে পড়েছেন।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ তথ্য জানান।
একেএম মাইদুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী আরও জানান, সিনেমা হল ভেঙে মালিকরা এখন বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করছেন। এছাড়া বিদ্যমান সিনেমা হলগুলোর সার্বিক পরিবেশ, জোট সরকারের আমলে অশ্লীল চলচ্চিত্রের পৃষ্ঠপোষকতা, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে বিকল্প বিনোদনের উদ্ভব এবং উন্মুক্ত আকাশ সংস্কৃতির বিস্তৃতির কারণে টেলিভিশনে বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র দেখার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় দশর্করা সিনেমা হল বিমুখ হয়েছে। এসব কারণেই সিনেমা হল বন্ধ হচ্ছে।
তথ্যমন্ত্রী আরও জানান, বর্তমান সরকার সম্প্রতি চলচ্চিত্র শিল্প নির্মাণ, বিতরণ ও প্রদর্শন সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ডকে ‘শিল্প’ হিসাবে ঘোষণা করেছে।
সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী এবং ৭ নভেম্বর সিপাহী বিপ্লব দিবস নিয়ে বিটিভিতে অনুষ্ঠান প্রচার বন্ধ রাখা বিষয়ে বিএনপির অনুপস্থিত সংসদ সদস্য শাম্মী আক্তারের প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী জানান, জনগণে বিভ্রান্তি ও সংশয় সৃষ্টি করে এরূপ কোনো বিতর্কিত বিষয়ে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে না। এছাড়া বিটিভি ও বেতার সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের অবদান ও ভুমিকা বিবেচনা করে জাতীয় অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে থাকে।
আওয়ামী লীগের ফরিদুন্নাহার লাইলী জানতে চান, গণমাধ্যমে টক শোগুলোতে আদালত ও সরকারকে অবমাননাকর কথাবার্তা বলা হয়, জনগণকে বিভ্রান্ত করা হয় এ বিষয়ে টক শোয়ের আলোচনার ওপর কিছু বিধি-নিষেধ আরোপ করা হবে কি না।
জবাবে তথ্যমন্ত্রী জানান, বর্তমান সরকার সাংবিধানিক নিদের্শনা ও নির্বাচনী ইশতেহারে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সব ধরনের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও তথ্য প্রবাহের অবাধ চলাচল নিশ্চিত করেছে। এ কারণে টেলিভিশন চ্যানেলসহ সব গণমাধ্যম পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করছে।
মন্ত্রী আরও জানান, স্বাধীনতার সঙ্গে দায়িত্বশীলতা ও নীতিবোধ গভীরভাবে সম্পর্কিত। পূর্ণ বাক-স্বাধীনতার সুযোগে কোনো নাগরিক বা প্রতিষ্ঠানের চরিত্র হনন কারও কাম্য নয়।
বিএনপির অনুপস্থিত সংসদ সদস্য এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজানের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, বিটিভিতে পরিবেশিত সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতা সম্পর্কে জনমনে কোনো প্রশ্ন নেই। বিটিভির সংবাদ কোনো বাণিজ্যিক চমক সৃষ্টির জন্য পরিবেশিত হয় না। বিটিভি সংবাদ সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসাবে স্বাভাবিক কারণেই বস্তুনিষ্ঠ। কারণ বিটিভিকে প্রতিটি অনুষ্ঠানের প্রতিটি বিষয়ে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল হিসাবে বাংলাদেশ টেলিভিশনকে দেশ ও জাতির জন্য বিশেষ কিছু দায়িত্ব পালন করতে হয়। বিটিভিকে মোট সম্প্রচার সময়ের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ সময় জনস্বার্থ ও জনসচেতনতামূলক অনুষ্ঠান প্রচার করতে হয়। যা অন্য কোনো বেসরকারি চ্যানেলে কখনো প্রচারিত হয় না।
হাবিবুর রহমান মোল্লার প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী জানান, বর্তমান সরকার সংবাদ মাধ্যমের পরিপূর্ন স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। বিধি-বিধান যথাযথভাবে অনুসৃত হলে এবং বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচার ও প্রকাশে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদ্যোগী হলে হলুদ সাংবাদিকতা বন্ধ হবে। সব সংবাদ মাধ্যম বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচার ও প্রকাশ করে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে–এটাই সরকার ও জনগণের প্রত্যাশা। হলুদ সাংবাদিকতার কারণে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে প্রচলিত আইনের আশ্রয় নিতে পারেন।