জার্মানদের কাঁদিয়ে ফাইনালে ইতালি

জার্মানদের কাঁদিয়ে ফাইনালে ইতালি

ক্লোজ শটে দুঃখী মানুষের ছবি ভেসে ওঠে টিভি পর্দায়। সাদা পোশাকে প্রত্যেকে নতশির। কেউ ঘাস ছিড়ছেন। ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন অনেকে। ক্যামেরা ঘুরিয়ে নিতে উল্লাসের দৃশ্য। খেলোয়াড়রা নাচতে নাচতে  ছুটে যান গ্যালারির দিকে। নীল পোশাকের দর্শক উন্মত্ত। পাশেই উল্টো দৃশ্য-চোখে জল, হাত দিয়ে মুখ চেপে রেখেছে শত শত জন, হতাশায় ম্রিয়মান প্রত্যেকে।

ইতালি: ২ (মারিও বালোতেল্লি ২০ ও ৩৬ মি.) জার্মানি: ১ ( মেসুত ওজিল ৯০ মি.)

কেন এমন হয়েছে তা কারো অজানা নয়। বৃহস্পতিবার ইউরোর দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ইতালির কাছে ২-১ গোলে হেরে গেছে জার্মানি। ১ জুলাই স্পেনের বিপক্ষে ফাইনাল খেলবে ইতালি। অদ্ভুত নিয়তি জার্মানদের। বড় আসরে ইতালি বাঁধা টপকাতেই পারছে না।

আসলে জার্মানির সামনে ইতালি বরাবর ফেভারিট। বিশ্বকাপ এবং ইউরোর মতো টুর্নামেন্টে ইতালিকে কখনো হারাতে পারেনি জার্মানরা। ২০১২’র ইউরোর সেমিফাইনালেও যে, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটবে কে জানতো। জার্মান কোচ জোয়াকিম লো ওসব পরিসংখ্যান এবং অতীতকে বিশ্বাস করেননি। উড়িয়ে দিয়েছিলেন ইতালির আধিপত্যের সুসংহত ইতিহাসকে। কি ভাগ্য জার্মানদের, ফের কাঁদতে হলো।

১৭ বছর আগে আজ্জুরিদের বিপক্ষে শেষবার এক প্রীতি ম্যাচে জিতেছিলো জার্মানি। দেখতে দেখতে কতটা সময় চলে গেছে কিন্তু ইতালিকে আরেকটি পরাজয়ের স্বাদ দিতে পারলো না। পরিসংখ্যানে আরও ভয়াবহ তথ্য মজুদ হলো, ইউরোপের এই দুই ফুটবল পরাশক্তির দ্বৈরথে ইতালি এগিয়ে। ৩১ ম্যাচের ১৫টিতে জয়, পরাজয় ৭টিতে। বিশ্বকাপ এবং ইউরোতে এনিয়ে আট ম্যাচ খেলে একটিতেও জিতেনি জার্মানি।

সর্বশেষ ২০০৬ সালে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল ম্যাচে ফিরে গেলে জার্মানদের কাঁদিয়ে ছিলো মাতারাজ্জিদের ইতালি। অতিরিক্ত সময়ে টপাটপ দুই গোল করে আয়োজকদের বিশ্বকাপ অভিযান থামিয়ে দিয়েছিলো। মজার বিষয় ওই বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলো ইতালি। শোয়েনস্টাইগাররা বিশ্বকাপে পরাজয়ের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেলেন ইতালির কাছে আরেকটি সেমিফাইনাল হেরে। অথচ ২০১০ সালের বিশ্বকাপের পর থেকে প্রতিযোগিতামূলক খেলায় বৃহস্পতিবারের আগপর্যন্ত টানা ১৫ ম্যাচে অপরাজিত ছিলো জার্মানি। সেই অপরাজেয় দলটিকে সেমিফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে কেমন গুড়িয়ে দিলো সিজারে প্রানদেল্লির শিষ্যরা।

জার্মানদের বিপক্ষেও আঁটসাঁট রক্ষণ কৌশল থেকে সরে আসেনি আজ্জুরিরা। প্রতিপক্ষ ফরোয়ার্ডদের গোলপোস্টের খুব কাছে যেতে দেয়নি। দূর থেকে আচমকা শটে গোল বের করার চেষ্টা করেও সফল হয়নি জার্মান শিবির। কারণ ইতালির গোলপোস্টের নিচে বুফনের বিশ্বস্ত দুটি হাত সারাক্ষণ তৎপড় ছিলো।

যে দলটি কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টাইব্রেকারে জিতে সেমিফাইনালে এসেছে, তাদের এমন খেলা কল্পনা করা যায় না। জার্মানিকে একেবারে কুপোকাত করে ছেড়েছে। লৌহ মানব মারিও বালোতেল্লি অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিলেন। অসুরীয় শক্তি নিয়ে খেলেছেন সেমিফাইনালে। ২০ মিনিটে বালোতেল্লি জার্মানদের জালে বল জড়িয়ে দেন। এন্তোনিয়ো কাসানো বাঁ দিক থেকে ক্রস করলে ছুটে গিয়ে হেডে গোল করেন। যে প্রান্ত দিয়ে বল জালে ঢুকেছে গোলরক্ষক নয়ার দশ হাতের মানব হলেও তা থামাতে পারতেন না। উল্টো স্রোতে ভাসছিলেন তিনি। ইতাহাস জার্মানদের ভিতু করে রেখেছে বছরের পর বছর ধরে। বিচক্ষণ দর্শকেরা বুঝে গিয়েছিলেন এবারও পরাজয় নিয়ে ফিরতে হবে। গোল গোল করে ইতালি সমর্থকরা যখন ওয়ারশ মুখোরিত করে তুলছিলেন তখন জার্মান দর্শকদের বুক ভাসছে চোখের জলে।

জার্মানরা দূলপাল্লার শটে অনেকবার গোলপোস্টে বল রাখতে পারলেও তা নস্যাৎ করে দিয়েছে ইতালির অধিনায়ক বুফনের বিস্বস্ত দুটি হাত। কখনো পাঞ্চ করে বিপদ মুক্ত করেছেন। কখনো ঝাঁপিয়ে পড়ে বুকে জড়িয়ে নিয়েছেন বল। গোল শোধ দেওয়া দূরে থাক ৩৬ মিনিটে আরেক গোল খেয়ে বসে জার্মানি। গোলের আশায় অল-আউট খেলতে গিয়ে অরক্ষিত হয়ে পড়ে রক্ষণভাগ। রিকাদ্রো মন্তোলিভো লম্বা পাস বাড়ান বালোতেল্লির উদ্দেশ্যে। এক ছুটে জার্মানির দুই ডিফেন্ডারকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যান গোলপোস্টের দিকে। ২০ গজ দূর থেকে ডান পায়ের জোরালো শটে নিশানা ভেদ করেন বালোতেল্লি।

জার্মানির আক্রমণ সম্পর্কে কিছু লেখা হয়নি। খেলার শুরুতে গোল পেয়ে গেলে ফলাফল উল্টে যেতো। ১২ মিনিটে ডান দিক থেকে জিার্মানির ঝটিকা আক্রমনে আত্মঘাতি গোল খেতে বসেছিলো ইতালি। ৩৫ মিনিটে সেমি খেদিরা ৩০ গজ দূর থেকে প্রায় গোল করে ফেলেছিলেন। কিন্তু বুফনের বিশ্বস্ত দুটি হাত বিশ্বাসঘাতকতা করেনি।

পরের অর্ধে খানিকটা গুছিয়ে নেয় জার্মান শিবির। দূর থেকে শট নিয়ে গোল বের করার কৌশল ব্যবহার করে খেলার শেষ মিনিট পর্যন্ত। তাতে খুব একটা লাভ হলো না। ইতালির পোস্টের নিচে বুফন সর্বক্ষণ সতর্ক থেকেছেন। দু’একবার খুব কাছ থেকেও গোল বের করতে পারেনি ওই বুফনের জন্য। ৯০ মিনিটে গিয়ে পেনাল্টি পায় জার্মানি। মেসুত ওজিল দর্শনীয় গোল করেন। চতুর বুফন কিন্তু বলের দিকেই ঝাঁপ দিয়েছিলেন।

রিতির পর সুযোগ গুলো নষ্ট না হলে ৫ গোলেও জিততে পারতো আজ্জুরিরা। গোলরক্ষককে নয়ারকে একা পেয়েও বল বাইরে মেরেছে কয়েকবার। ৮৩ মিনিটে সহকারী রেফারি অফসাইডের সংকেত না দিলে ব্যবধান ৩-১ রেখে খেলা শেষ করতে পারতো চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।

খেলাধূলা