বাজেট বাস্তবায়নে জনগণের সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্যই হচ্ছে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়া। বাজেট বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে আমরা আরো একধাপ এড়িয়ে নিয়ে যাবো। দেশের উন্নয়নের জন্য আমি সকলের সহযোগিতা চাই।
বুধবার জাতীয় সংসদে ২০১২-১৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “নির্বাচনী ইশতেহারে দেওয়া ভিশন ২০২১ এর লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে বাজেট প্রণয়ন করেছি। বাজেট শুধু আয়-ব্যয়ের হিসাব না। এটা একটা জাতির সামনে এগিয়ে যাওয়ার রূপরেখা। যে কোনো রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক দর্শন থাকে। আমরা মানুষের জীবনযাত্রাকে সহজ করার দর্শন নিয়ে এ বাজেট প্রণয়ন করেছি। আমরা দারিদ্র্য বিমোচন করতে চাই, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই, মানুষের মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা দিতে চাই। সেভাবেই বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার সময় আমরা সরকার গঠন করেছি। মন্দার কারণে অনেক দেশ তাদের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারেনি। কিন্তু আমরা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পেরেছি। গত অর্থবছরে আমরা ৬ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। চলতি অর্থবছরে ৬ দশমিক ২ শতাংশ অর্জন করেছি। বছর শেষে ৭ শতাংশের কাছাকাছি অর্জন করতে সক্ষম হবো।’’
প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘‘এবার আমাদের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ২ শতাংশ। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, তা অর্জন করতে সক্ষম হবো। বিশ্বমন্দা এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করলেও বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে যে কাজ করছি, তাতে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারবো।”
বাজেট সম্পর্কে তিনি বলেন, “একটা রাজনৈতিক দল ও জোট নিয়ে ক্ষমতায় আছি। অন্য একটা সময় অন্য একটি জোট ক্ষমতায় ছিল, তখনও বাজেট ঘাটতি ছিল। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আমরা যে উন্নয়ন করেছিলাম তার ফল ভোগ করেছে তারা। এরপরও তাদের বাজেট ঘাটতি বেশি ছিল। এমনকি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে জ্ঞানী-গুণী উচ্চমার্গের ব্যক্তিরা সরকার পরিচালনা করেছেন। সেখানেও বাজেট ঘাটতি ছিল। সুতরাং, বাজেট ঘাটতি অস্বাভাবিক কিছু না। আমরা প্রতি বছরই বাজেট ঘাটতি ধরি। এবার ধরেছি ৫ শতাংশ। এটা এমন কোনো বড় ব্যাপার নয়। আমাদের লক্ষ্যে আমরা এগিয়ে যেতে পারবো।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সরকার একটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রত্যেক সরকার নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করলে জনগণের দুর্ভোগ কমে। অতীতের সরকার জনগণের জন্য কিছুই করেনি। নিজেদের উন্নয়ন ভালোভাবে করেছে। আর সব কাজ পড়েছে আমাদের ঘাড়ে। বিএনপি সরকার মানি লন্ডারিংসহ বিভিন্নভাবে নিজেদের উন্নতি করলেও জনগণের উন্নতি করেনি।”
তিনি বলেন, “সময়োপযোগী একটি বাজেট দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়তে চাই। এজন্য আমাদের এ বাজেট। এর জন্য এডিপি দ্বিগুণ করেছি।”
ভাড়া ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, “অনেকে বলেন, বিদ্যুৎ নেই। গত কয়েকদিন ধরে বক্তৃতা, আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে। তারা বলছেন, রেন্টাল-কুইক রেন্টাল করায় নাকি মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু এছাড়া আর কি করার উপায় ছিলো? কিছু লোক আছেন, তাদের কোনো কিছুই ভালো লাগে না। সরকারে সফলতা ‘ট্যারা চোখে’ দেখেন। আমাদের কোনো কাজ ভালো লাগে না।”
সংসদ নেতা বলেন, “বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়ে ৪১ শতাংশ রফতানি বাড়িয়েছি। এরই মধ্যে ২৫ লাখ গ্রাহককে বিদ্যুৎ দিয়েছি। যারা এরই মধ্যে বিদ্যুৎ পেয়েছেন, তারা যদি মনে করেন, শুধু তারাই বিদ্যুৎ পেলেই হবে, এটা ঠিক না।
“দিয়ে কিঞ্চিৎ, না করবো বঞ্চিত এটাই আমাদের নীতি” যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, “সে কারণেই আমরা অতিরিক্ত ১ কোটি ২০ লাখ লোককে বিদ্যুতের সুবিধা দিতে পেরেছি। দেশের ৫৩ শতাংশ মানুষ এখন বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছেন। তিন বছরে ১০ শতাংশ বেশি মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধা দিতে পেরেছি।”
তিনি বলেন, “তিন বছরে ১৯ লাখ ফ্রিজ আর এক লাখ মাইক্রোভেন ব্যবহার বেড়েছে। এতে প্রতি বছর ৪৪০ মে.ওয়াট বিদ্যুৎ খরচ বেড়েছে। মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটছে বলেই ইলেকট্রনিক জিনিসের ব্যবহার করছে। ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। ল্যাপটপ ব্যবহার করছে মানুষ।”
শেখ হাসিনা বলেন, “উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে আমরা সুষ্ঠু বিতরণের ব্যবস্থাও নিয়েছি। সিস্টেম লস কমিয়েছি। বিদ্যুৎ উৎপাদন যদি না বাড়াতাম, তবে প্রবৃদ্ধি বাড়তো না। যদি আমাদের আগের সরকার পুরোনো বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করতো, তাহলে সমস্যা হতো না।”
বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ায় রফতানি, প্রবৃদ্ধি ও সার্বিক উৎপাদন বেড়েছে বলেও জানান তিনি।
বিদ্যুতের দাম প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা যে খরচে উৎপাদন করবো, সে দামেইতো কিনতে হবে। ভর্তুকি দিয়ে মানুষকে বিদ্যুৎ দিতে হবে কেন? সব থেকে কম দামি বিদ্যুৎ বাংলাদেশে দেওয়া হয়। পৃথিবীর আর কোনো দেশে এতো কম দামে বিদুৎ দেওয়া হয় না। আমরা মনে করি, যে দামে উৎপাদন হবে সেই দামই দেওয়া উচিত।”
বিদ্যুতের বিল কমানোর জন্য তিনি গ্রাহকদের সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শ দেন।
সংসদ নেতা বলেন, “ বিএনপি ৫ বছরে রাস্তা মেরামতের কোনো কাজ করেনি। ফলে আমাদের কষ্ট হচ্ছে। এজন্য এমন অবস্থায় চলে গিয়েছে যে, রুটিন মেরামতে হচ্ছে না। ছোট প্রকল্প নিয়ে কাজ হচ্ছে না। বড় প্রকল্প নিতে হচ্ছে। তারা কাজ করে গেলে এ সমস্যা হতো না।”
অতীতের সরকারের কার্যক্রমের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “বিএনপি মানুষকে সুযোগ দিতে চায় না, শোষণ করতে চায়। আমরা মানুষকে সুযোগ দিতে চাই। এটাই আমাদের আর বিএনপির পার্থক্য। আমরা মানুষের রক্ত চুষে খাই না বরং ধমনীতে রক্ত সঞ্চালন করি।”
এর আগে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বর্তমার সরকার কর আদায়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। আমরা অঙ্গীকার করেছি, আত্মমর্যাদাশীল ও স্বাবলম্বী হবো। কারো কাছে হাত পাতবো না।”
“রাষ্ট্রপতিসহ সব সংসদ সদস্য কর দিচ্ছেন” যোগ করেন সংসদ নেতা।
তিনি বলেন, “নির্বাচনী ইশতেহারে যে ঘোষণা দিয়েছি, তার চেয়ে বেশি বাস্তবায়ন করেছি।”