দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ লক্ষ্যে নতুন সীমানা নির্ধারণের মাধ্যমে জাতীয় সংসদের আসন পুনর্বিন্যাসের উদ্যোগ নিয়েছে ইসি। এজন্য জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে সীমানা পুণর্নির্ধারণ নিয়ে বৈঠকে বসবে তারা।
নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ এ বিষয়ে বলেন, ‘‘আমরা জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে এ নিয়ে প্রথম কমিশনের বৈঠক করবো।’’
তিনি বলেন, ‘‘আগের কমিশন ঢাকার আসন সংখ্যা কমিয়ে ১০টি করার জন্য একটি খসড়া করেছিল। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাড়ানো যতো সহজ, কমানো তার চেয়ে অনেক কঠিন।’’
হাফিজ বলেন, ‘‘এটা নিয়ে ঝামেলা হবে। কিন্তু আমরা আমাদের বিবেচনায় যা সঠিক মনে হবে তাই করবো, তা যতো কঠিনই হোক না কেনো।’’
তিনি বলেন,‘‘তবে জাতীয় সংসদের সীমানা পুণর্নির্ধারণের মূল কাজটা হবে আদমশুমারির চূড়ান্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর।’’
তিনি জানান, এ মাসের শেষের দিকে এ চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার কথা।
এদিকে অন্য এক নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘‘আমরা শিগগিরই এ নিয়ে বৈঠকে বসবো। আমরা যে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছি, এটা হবে তার প্রমাণ।’’
এদিকে এ নিয়ে আগের কমিশনের করা সীমান নির্ধারণ আইনের খসড়া এরই মধ্যে আইন মন্ত্রণালয় ফেরত পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশনে। তবে তা বাতিল করতে নয়। বর্তমান কমিশনের মতামতের ভিত্তিতে তা রিভাইজের জন্য পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসি সচিবালয়।
কমিশন বৈঠকেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলে জানা গেছে।
আগের কমিশনের ওই খসড়া নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ বিধিমালা-২০১১ তে বলা হয়,- ‘একাধিক জেলায় অবস্থিত ভূ-খণ্ড সমন্বয়ে কোনো আসন প্রতিষ্ঠা করা যাইবে না। রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাসমূহের প্রতিটিতে একটি করিয়া এবং অন্যান্য জেলার ক্ষেত্রে দুইটির কম আসন বরাদ্দ করা যাইবে না।’
‘বিদ্যমান সীমানা অটুট থাকাকালীন সময় পর্যন্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকাকে জেলার সমতূল্য একটি পৃথক ইউনিট হিসেবে গণনা করা হইবে এবং ইহার আসন সংখ্যা ১০ এ নির্দিষ্ট থাকিবে।’
‘সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৫ এর দফা (২)-এ নির্দেশিত ৩০০ আসন হইতে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ও পার্বত্য জেলাসমূহের জন্য বরাদ্দকৃত ১৩টি আসন বাদ দিয়া বাকি ২৮৭টি আসন বাকি ৬১টি জেলার মধ্যে বিধি ৪-এ বর্ণিত পদ্ধতি অনুসারে বন্টন করা হইবে।’
এ ক্ষেত্রে জেলা পর্যায়ে আসন বন্টন ও পদ্ধতি নির্দেশনা তৈরি করেছিল হুদা কমিশন। সে মতে,-
‘সর্বশেষ আদমশুমারি প্রতিবেদনে জনসংখ্যা বিষয়ে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সংসদের আসনসমূহ বন্টনের আগে প্রথমে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ও তিন পার্বত্য জেলাসমূহের জনসংখ্যাকে বাদ দিয়া প্রাপ্ত জনসংখ্যাকে ২৮৭ আসন সংখ্যা দ্বারা ভাগ করিয়া জনসংখ্যা কোটা নির্ধারণ করিতে হইবে।’
‘জনসংখ্যা কোটা নির্ধারণের পর প্রতিনিধিত্বকারীদের ভাগফল নির্ণয় করিতে হইবে। বিবেচ্য ৬১টি জেলার প্রতিটি জেলার সমুদয় জনসংখ্যাকে জনসংখ্যা কোটা দ্বারা ভাগ করিলে প্রায় সকল ক্ষেত্রেই একটি পূর্ণ সংখ্যা ও একটি ভগ্নাংশ সংখ্যা পাওয়া যাইবে, যাহা সংশ্লিষ্ট জেলাসমূহের প্রতিনিধিত্বকারীদের ভাগফল।’
‘প্রতিনিধিত্বকারীদের ভাগফলে প্রাপ্ত পূর্ণ সংখ্যা অনুযায়ী আসনসমূহ জেলায় বরাদ্দ করিতে হইতে হইবে।’ ‘এইভাবে বরাদ্দ করিলে কিছু আসন অবরাদ্দ থাকিবে। অবরাদ্দকৃত আসনসমূহ বরাদ্দের জন্য প্রতিনিধিত্বকারীদের ভাগফলে প্রাপ্ত ভগ্নাংশসমূহকে বৃহত্তম হইতে ক্ষুদ্রতম মানে সাজাইয়া উচ্চতর মানের ক্রম অনুসারে অবরাদ্দকৃত শেষ আসনটি পর্যন্ত বরাদ্দ করিতে হইবে।’
এছাড়াও খসড়ায় বন্টনকৃত আসনসমূহের সীমানা পুণর্নির্ধারণ, খসড়া তালিকার ওপর আপত্তি, শুনানিতে উত্থাপিত বিষয় বিবেচনা ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার বিষয়গুলোতে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছিল আগের কমিশন।
বর্তমান কমিশন দ্রুত এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চায় বলে জানিয়েছে কমিশন সচিবালয়। একই সঙ্গে আগামী সপ্তাহ থেকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি প্রক্রিয়া শুরু হবে বলেও কমিশন সূত্রে জানা গেছে।