শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবই দেওয়ার সময় কোনও অজুহাতেই টাকা নেওয়া যাবে না বলে হুশিঁয়ার করে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
তিনি বলেন, আমাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হলো পাঠ্যবই সরবরাহ। গত বছর জেলায় পাঠিয়েছিলাম, এবার সরাসরি উপজেলায়। সব পরিবহন ব্যয় আমরা বহন করেছি। বই দেওয়ার সময় কেউ টাকা নিতে পারবে না। কোনও অজুহাতেই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া যাবে না।
বুধবার বিকেলে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড আয়োজিত ‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০’ বাস্তবায়ন শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
নগরীর মুরাদপুরে শিক্ষা বোর্ডসংলগ্ন এলজিইডি অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আলী চৌধুরী।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘জ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে সরকার দেশকে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়। এটাই ডিজিটাল বাংলাদেশ। এরই মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় পাঠ্যবই, ভর্তি ফরম, ফল প্রকাশ, নিবন্ধনসহ অনেক কিছুই অনলাইনে নিয়ে এসেছে। সবকিছু অনলাইনে হলে ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধ হবে, বিড়ম্বনা কমবে।’
ক্লাসরুমে পাঠদান নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে মন্ত্রী বলেন, ‘চাইলেই নোটবই, প্রাইভেট টিউশনি বন্ধ করা যায় না। ক্লাসরুমে পাঠদান নিশ্চিত করতে হবে। ক্লাসরুমকে আকর্ষণীয় ও আনন্দময় করতে হবে। এ লক্ষ্যে আড়াই লাখ শিক্ষককে ট্রেনিং দিয়েছি।’
নারী শিক্ষার অগ্রগতি হচ্ছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মেয়েদের শিক্ষা ও কাজে উৎসাহিত করছি। তারা অনেক ভালো কাজ করে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে বেশি কাজ করে। সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি ও মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে।’
অতীতে শিক্ষকদের ভেতন-ভাতা উত্তোলনে দীর্ঘসূত্রতা ও হয়রানির কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আগে শিক্ষকরা চেকের পেছনে ঘুরতেন, এখন চেক শিক্ষকের পেছনে ঘুরবে।’
এ সময় তিনি অন্তরঙ্গভাবে জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের প্রেক্ষাপট, দীর্ঘদিন শিক্ষকদের আন্দোলন সংগ্রামে পাশে থাকা, শিক্ষকদের টাইম স্কেল, চাওয়া-পাওয়া, সরকারের আন্তরিকতা, মাঠ পর্যায়ের নানা অভিজ্ঞতা, শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন।
তিনি শিক্ষকদের দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা, সাম্প্রদায়িকতা, পশ্চাৎপদতা, দুর্নীতি ও শোষণ-বৈষম্যহীন উন্নত বাংলাদেশ গড়ার জন্য ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ হিসেবে শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. জ্যোতি প্রকাশ দত্ত, শিক্ষাবোর্ডের সচিব প্রফেসর মুহাম্মদ নুরুল হুদা, চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ শেখর দস্তিদার, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আজিজ উদ্দিন, বিজয় সরণি কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, কলেজিয়েট উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইতি কণা চৌধুরী, নুরুল ইসলাম পৌর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দ লকিয়তুল্লাহ।
অধ্যক্ষ শেখর দস্তিদার বলেন, ‘আমাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল ধর্মনিরপেক্ষ বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হোক। শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে বড় বাধা অর্থের সংস্থান।’
৩৬ বছরের শিক্ষকতা জীবনের কথা উল্লেখ করে ড. জ্যোতি প্রকাশ দত্ত বলেন, ‘শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে জনবল কাঠামো, আর্থিক সংকট অতিক্রম করে আমাদের এগোতে হবে। এদেশে সমস্যা অনেক, সমাধান একদিনে হবে না, কিন্তু আমাদের কমিটমেন্ট থাকতে হবে।’
অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে, লাখ লাখ টাকা গাড়িভাড়া যাচ্ছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের।’
সৈয়দ লকিয়তুল্লাহ বলেন, ‘শিক্ষকদের অবহেলিত রেখে নতুন শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জনবল কাঠামোর কারণে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না, সংকটের সৃষ্টি হচ্ছে।’
সূচনা বক্তব্যে শিক্ষাবোর্ডের উপ-সচিব মোহাম্মদ মাহবুব হাসান বলেন, জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের অন্যতম প্রধান উপাদান শিক্ষা। বাস্তবতার নিরিখে শিক্ষানীতি সাজাতে সরকার বদ্ধপরিকর। বাংলাদেশের সংবিধান ও ড. কুদরাত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টের আলোকে সরকার নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছে।
শিক্ষামন্ত্রী ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করে অথবা ১০০ টাকায় পুস্তিকা আকারে মুদ্রিত শিক্ষানীতি পড়ে দেখার জন্য প্রত্যেক প্রধান শিক্ষক, অধ্যক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান।