বেসরকারি খাতে তিনটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ওরিয়ন গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি করেছে সরকার, এসব কেন্দ্র থেকে প্রায় ১ হাজার ৮৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ হবে জাতীয় গ্রিডে।
বর্তমানে বড়পুকুরিয়ায় ২৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার সরকারি একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থাকলেও বেসরকারি খাতে এ জ্বালানি ব্যবহার করে ব্যাপক মাত্রায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ এবারই প্রথম।
এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি বাগেরহাটের রামপালে সুন্দরবনের কাছে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ভারতের সঙ্গে চুক্তি করে সরকার।
কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর মধ্যে ৫২২ মেগাওয়াটের একটি হবে মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায়। এছাড়া খুলনায় এবং চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ২৮২ দশমিক ৬৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি কেন্দ্র হবে।
এসব কেন্দ্র স্থাপনে রাজধানীর আব্দুল গণি সড়কে বিদ্যুৎ ভবনে ওরিয়ন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালমান ওবায়দুল করিম এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষে সচিব মো. আজিজুল ইসলাম চুক্তিতে সই করেন।
মাওয়ার কেন্দ্রটি উৎপাদনে যাবে চুক্তি স্বাক্ষরের ৪৫ মাসের মধ্যে। আর ৩৬ মাসের মধ্যে খুলনা ও আনোয়ারার কেন্দ্র দুটি নির্মাণ করা হবে।
সরকার মাওয়ার কেন্দ্রটি থেকে চার টাকা ৭৯ পয়সা (পাঁচ দশমিক ৮৪ ইউএস সেন্টস) এবং খুলনা ও আনোয়ার কেন্দ্র থেকে চার টাকা ৪৫ পয়সা (পাঁচ দশমিক ৪২ ইউএস সেন্টস) দরে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কিনবে।
তবে রামপালের কেন্দ্র থেকে পাঁচ থেকে সাত টাকায় বিদ্যুৎ কেনা হবে বলে ওই কেন্দ্রের চুক্তির সময় বলা হয়েছিলো।
দেশে বর্তমানে সাড়ে ৭ হাজার মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে দৈনিক বিদ্যুতের গড় উৎপাদন সাড়ে ৫ হাজার মেগাওয়াটের কিছু বেশি।
অন্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এনামুল হক, বিদ্যুৎ সচিব আবুল কালাম আজাদ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান এ এস এম আলমগীর কবীর, ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিম অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, “অনেকই আশঙ্কা করেছিলেন কয়লা আমদানি করে বিদ্যুৎ কেন্দ্র আদৌ নির্মাণ করা সম্ভব হবে কিনা? সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই আমরা তা প্রমাণ করতে যাচ্ছি এই চুক্তির মাধ্যমে। আশা করি ,যথা সময়ের মধ্যে এসব কেন্দ্রগুলো উৎপাদনে আসবে।”
উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানগুলোই এসব কেন্দ্রের জন্য কয়লা আমদানি করবে বলে জানান তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিম জানান, অস্ট্রেলিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আমদানি করা হবে।
তিনি বলেন, এই কেন্দ্রগুলো বিদ্যুৎ খাতে মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হবে। যন্ত্রপাতি স্থাপন, কয়লা আমদানিসহ বিভিন্ন বিষয়ে দেখভালের জন্য পৃথকভাবে বিশ্বের খ্যাতনামা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ কেন্দ্র নির্মাণে পেশাদারিত্ব মনোভাব নিয়ে গুরুত্বসহকারে অগ্রসর হচ্ছি।
সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে জানিয়ে ওবায়দুল করিম বলেন, “চুক্তি অনুযায়ী যে সময় আছে তার তিন মাস আগে কেন্দ্রগুলো উৎপাদন আসবে বলে আশা করছি।”
বর্তমানে দেশে পাঁচ ধরনের জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ গ্যাস, ফার্নেস অয়েল ও ডিজেল থেকে ১৭ শতাংশ, পানি ও কয়লায় তিন শতাংশ করে ব্যবহার হচ্ছে।
বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০১৬ সালের মধ্যে উৎপাদন প্রায় ১৫ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার পরিকল্পনা নেয়।
এ পরিকল্পনা অনুযায়ী এ পর্যন্ত ৫৬টি বিদু্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে চুক্তি হয়েছে।