বিদায়ী অর্থবছরে ১২ প্রতিষ্ঠানের ভর্তুকি ছিল ১,৪৩৫ কোটি টাকা

বিদায়ী অর্থবছরে ১২ প্রতিষ্ঠানের ভর্তুকি ছিল ১,৪৩৫ কোটি টাকা

বিদায়ী ২০১১-১২ অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ১২টি প্রতিষ্ঠানকে ১ হাজার ৪৩৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে (২০১০-১১) ভর্তুকির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ১৮৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এক বছরে ভর্তুকি বেড়েছে ২৪৮ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, বিদায়ী অর্থবছরে ৭টি প্রতিষ্ঠানের ভর্তুকি আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে, দু’টির কমেছে ও তিনটির ক্ষেত্রে ভর্তুকির পরিমাণ অপরিবর্তিত রয়েছে।

বিদায়ী অর্থবছরে ভর্তুকির শীর্ষে রয়েছে ‘বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড’ (বিডব্লিউডিবি)। বিডব্লিউডিবিকে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে ৬৭১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। গত বছর দেওয়া হয়েছিল ৫৩১ কোটি ৬৬ টাকা। এক বছরে এ প্রতিষ্ঠানের ভর্তুকি বেড়েছে ১৪০ কোটি ১২ লাখ টাকা। এর আগের বছর (২০০৯-১০) ভর্তুকির পরিমাণ ছিল ৬৪৫ কোটি ৭৪ টাকা।

ভর্তুকি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ‘বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন’ (বিএডিসি)। বিএডিসিকে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে ২৭৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা। গত বছর দেওয়া হয়েছিল ২৩৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এক বছরে এ প্রতিষ্ঠানের ভর্তুকি বেড়েছে ৪০ কোটি ১১ লাখ টাকা। এর আগের বছর (২০০৯-১০) ভর্তুকির পরিমাণ ছিল ২০৪ কোটি ২৭ লাখ  টাকা।

অন্যান্যের মধ্যে ‘বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন’ (বিজেএমসি)-কে ১৫৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা এবং ‘বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিহন কর্তৃপক্ষ’ (বিআইডব্লিউটিএ)-কে ১৫৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে (২০১০-১১) বিজেএমসি ও বিআইডব্লিউটিএ-কে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছিল যথাক্রমে ৯৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা এবং ১৪০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।

‘বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন’ (বিএসসিআইসি)-কে এ বছর ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে ৬৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। গত বছর (২০১০-১১) ও এর আগের বছর (২০০৯-১০) দেওয়া হয়েছিল যথাক্রমে ৬২ কোটি ২১ লাখ টাকা এবং ৪৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।

এছাড়া ‘রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো’ (ইপিবি)-কে ১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা (গত বছর দেওয়া হয়েছিল ১৬ কোটি টাকা), বিএসআরটিআইকে ৩ কোটি টাকা (গত বছর দেওয়া হয়েছিল ২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা) ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে।

ভর্তুকি কমেছে
বিদায়ী অর্থবছরে যে দু’টি প্রতিষ্ঠানের ভর্তুকি আগের বছরের তুলনায় কমেছে সে প্রতিষ্ঠান দু’টি হচ্ছে- ‘বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট’ (বিএফএফডব্লিউটি) এবং ‘পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড’ (আরইবি)। এর মধ্যে বিএফএফডব্লিউটির ৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা এবং আরইবির ৬ কোটি ১২ লাখ টাকা ভর্তুকি কমেছে।
উল্লেখ্য, এ বছর বিএফএফডব্লিউটিকে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে ৭৪ কোটি ৫ লাখ টাকা। গত বছর দেওয়া হয়েছিল ৭৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

অন্যদিকে আরইবিকে এবার ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে ২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। গত বছর দেওয়া হয়েছিল ৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা।

ভর্তুকি অপরিবর্তিত
বিদায়ী অর্থবছরে তিনটি প্রতিষ্ঠানের ভর্তুকি অপরিবর্তিত বা আগের বছরের সমান রয়েছে। এ প্রতিষ্ঠান তিনটি হচ্ছে- বিএসবি, বিআইডব্লিউটিসি এবং আরডিএ। এর মধ্যে বিএসবিকে ১৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, বিআইডব্লিউটিসিকে ৫০ লাখ টাকা ও আরডিএকে ২০ লাখ টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে।

সার্বিক ভর্তুকি বাড়ছে প্রতিবছর
এদিকে সার্বিকভাবে প্রতিবছর সরকারের ভর্তুকি বাড়ছে। বিদায়ী ২০১১-১২ অর্থবছরের মূল বাজেটে কৃষি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি বাবদ মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ২০ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ ভর্তুকির পরিমাণ বেড়েছে ৯ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা।

‘আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার সঙ্গে অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্যের সমন্বয় না করায় ভর্তুকি বাড়ছে’ বলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তার বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন।

অতিরিক্ত ভর্তুকির যোগান সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘পিপিপি, শেয়ার ও ইক্যুইটিতে বিনিয়োগ এবং অপ্রত্যাশিত খাত থেকে স্থানান্তর ও অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কাট-ছাঁটের মাধ্যমে অতিরিক্ত ভর্তুকি ব্যয়ের অর্থ সংস্থান করা হয়েছে।’

এদিকে নতুন বাজেটে ভর্তুকির জন্য মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৪ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা। এটা জিডিপির ৩ দশমিক ২ শতাংশ। এরমধ্যে কৃষি খাতে ভর্তুকির পরিমাণ হচ্ছে ৬ হাজার কোটি টাকা। বাজেট প্রণয়নের আগে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘২০১১-১২ অর্থবছরের ভর্তুকির ১০ হাজার কোটি টাকা এবারের নতুন বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।’

অর্থ বাণিজ্য