রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মিসরীয় জনগণ গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একজন প্রেসিডেন্ট পেল। আর এ গণতন্ত্রের জন্য যারা রক্ত দিয়েছে তাদের বেশিরভাগই তরুণ। একারণে নবনির্বচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির কাছে আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক এসব তরুণের প্রত্যাশাও অনেক।
অবশ্য প্রেসিডেন্ট মুরসি একটি জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠনের ব্যাপারে ইতোমধ্যে আলোচনা শুরু করেছেন। ইসলামপন্থি মুসলিম ব্রাদারহুডের এ নেতা দায়িত্ব গ্রহণের পর জাতীয় ঐক্যকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন। নির্বাচিত সংসদ ও একটি স্থায়ী শাসনতন্ত্রের (সংবিধান) অনুপস্থিতিতে এবং নানা বাধ্যবাধকতার মধ্যে দায়িত্ব নিলেও তরুণরা প্রেসিডেন্ট মুরসির আন্তরিকতা এবং গণমুখিতা দেখতে চায়। এ জন্যই মুরসির কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করতে তরুণেরা একটি ওয়েবসাইট খুলেছে। নাম দিয়েছে ‘মুরসি মিটার’।
ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতা মুরসি (৬০) নির্বাচনী প্রচারণার সময় ৬৪টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। প্রেসিডেন্টের প্রথম একশ দিনের মধ্যে এসব প্রতিশ্রুতি পূরণ এবং আগ্রহের ব্যাপারে এ ওয়েবসাইট নজরদারি করবে এবং তার প্রমাণ রাখবে।
আল আরাবিয়া পত্রিকা ওয়েবসাইটটির উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, “নির্বাচনী কর্মসূচির সময় মোহাম্মদ মুরসি যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তার বিপরীতে ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথম একশ দিন তার কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ এবং প্রমাণ রাখার একটি প্রয়াস এটি।”
মুরসির প্রথম একশ দিনের কর্মসূচির মধ্যে পাঁচটি পয়েন্টের একটি তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে; রুটি, ট্রাফিক, নিরাপত্তা, জ্বালানি এবং স্বচ্ছতা। এসব সমস্যার ব্যাপারে মুরসির প্রস্তাবিত সমাধানগুলোও উল্লেখ করা হয়েছে এতে। এগুলো কখন বাস্তায়িত হবে বা আদতেই বাস্তবায়িত হচ্ছে না কি না তা নজরে রাখবে এ ওয়েবসাইট।
প্রসঙ্গত, প্রেসিডেন্টের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণের জন্য এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ মিসরে তো বটেই বিশ্বেও সম্ভবত এ-ই প্রথম। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে প্রযুক্তি সচেতন তরুণ সমাজ প্রযুক্তি এবং সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলো ব্যবহার করে আন্দোলন বেগবান করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তেমনি মোবারক পরবর্তী মিসরের গণতন্ত্রে উত্তরণে এবং উন্নয়নে এই তরুণ সমাজ উৎসাহব্যঞ্জক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এ ধরনের পর্যবেক্ষণ ওয়েবসাইট প্রকাশ করা তারই প্রাথমিক উদ্যোগ বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
উল্লেখ্য, গত ২৪ জুন নাসার সাবেক প্রকৌশলী ড. মোহাম্মদ মুরসিকে মিসরের প্রেসেডন্ট হিসেবে বিজয়ী ঘাষণা করে দেশটির নির্বাচন কমিশন। গত ১৬-১৭ জুন অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায় মুরসির প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আহমেদ শফিক। শফিক ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।