মাদকেই পাচার হচ্ছে হাজার কোটি টাকা : সাহারা খাতুন

মাদকেই পাচার হচ্ছে হাজার কোটি টাকা : সাহারা খাতুন

‘মাদকের কারণে প্রতিবছর কয়েক হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে পাচার হয়ে জাতীয় অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করছে। এছাড়া মাদক চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই এবং সশস্ত্র সংঘাতের মত মারাত্মক অপরাধের জন্ম দেয়। মাদক বিশ্ব অর্থনীতি, শান্তি-শৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তাকে বিপন্ন করে তুলছে।’

মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও পাচার বিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন বলেছেন এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, মাদক একটি বহুমাত্রিক সমস্যা। অন্যান্য অপরাধ থেকে এর অপরাধ প্রকৃতিগতভাবে ভিন্ন। মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর বহু সংঘাত ও জীবনহানি ঘটছে।

সামাজিক নিরাপত্তা ও শান্তির জন্য মাদক মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। পরিসংখ্যান নিলে দেখা যাবে, দেশের দুই তৃতীয়াংশ অপরাধের সঙ্গে মাদক প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ যোগসূত্র রয়েছে।

মন্ত্রী মাদক নিয়ন্ত্রণে সরকারের সফলতা তুলে ধরে বলেন, মাদক অপরাধ দমনে মোবাইল কোর্টের প্রবর্তন এই সরকারের একটি বড় সাফল্য। এর মাধ্যমে ঘটনাস্থলেই মাদক অপরাধীকে শাস্তি প্রদান করায় সমাজে মাদক বিরোধী ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি হচ্ছে। তবে এই সচেতনতা আরো বৃদ্ধি করার জন্য সরকারের পাশাপাশি সচেতন মহলকে এগিয়ে আসতে হবে।

সাহারা খাতুন বলেন, নিজেকে না বদলাতে পারলে দেশ বদলানো সম্ভব নয়। এ সরকার মাদক সমস্যা মোকাবেলায় সংবিধানের ১৮ অনুচ্ছেদে মূলনীতি ও দর্শন বাস্তবায়নে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করেছে।

সেইসঙ্গে প্রতিষ্ঠা করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। জনগণ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো আরো সচেষ্ট হলে মাদককে শক্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।

‘মাদকমুক্ত সমাজ গড়ার লক্ষে বিশ্বব্যাপী আন্দোলন’ এই শ্লোগান নিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ বলেন, মাদক সারা বিশ্বের জন্য মারাত্মক চিন্তার কারণ।

তিনি বলেন, সীমান্তের ওপারে মাদকের প্রচুর কারখানা আছে। সীমান্ত দিয়ে মাদক পাচার বন্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সজাগ দৃষ্টি দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সমাজের মানুষ সচেতন হলেই মাদক পুরোপুরিভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা যাবে।

তিনি বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে গণমাধ্যমকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। লেখকদের মাদকের বিরুদ্ধে লেখা আরো বাড়িয়ে দিতে হবে। আর টক শো ও বিভিন্ন আলোচনায় মাদকের প্রতিরোধমূলক বক্তব্য তুলে ধরতে হবে। অন্যথায় সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে না।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার মাধ্যমে যারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসেছে- তারাই এদেশে মাদকের পথ সুগম করে দিয়েছে। তারা মাদকের ছোবল থেকে জাতিকে রক্ষা করার জন্য কোন কার্যকর ভূমিকা পালন করেনি। আমাদের সরকারই মাদকমুক্ত রাখার জন্য যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের হাত থেকে রাজনীতি রক্ষা করতে না পারলে মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা যাবেনা বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার মোহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য  দেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সিকিউকে মুসতাক আহমেদ।

পরে মাদক বিরোধী প্রচারণায় সাহসী ভূমিকা পালনের জন্য মৌলভীবাজারের সৌদামিনী শর্মা ও মাদকের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচারে বিশেষ ভূমিকা রাখার জন্য যশোরের প্রয়াত সাংবাদিক জামাল উদ্দিনকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।

এছাড়াও স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীদের মাঝে মাদক বিরোধী রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়।

রাজনীতি