বিএনপি মানেই ব্যাকগিয়ার, জনগণ আর ব্যাকগিয়ারে যাবে না: সংসদে মতিয়া

বিএনপি মানেই ব্যাকগিয়ার, জনগণ আর ব্যাকগিয়ারে যাবে না: সংসদে মতিয়া

কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি বলেছেন, “বিএনপি মানেই অন্ধকার, নৈরাজ্য, জঙ্গিবাদ, খাদ্য সংকট, অর্থাৎ ব্যাকগিয়ার। জনগণ আর ব্যাকগিয়ারে যাবে না।”

তিনি বলেন, “ক্ষমতায় থাকতে খালেদা জিয়া ও তার দুই পুত্রের লুটপাট, দুর্নীতি ও অন্ধকার যুগে দেশকে নিপতিত করার ঘটনা সবাই জানেন। দেশের মানুষ আর সেই অন্ধকার যুগে ফিরে যেতে চান না। খালেদা জিয়ার শাসন মানেই ‘ব্যাকগিয়ার’।”

সোমবার জাতীয় সংসদে ২০১২-১৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

কৃষিমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে বলেন, “খালেদা তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অসাংবিধানিক বলেছেন। তাহলে তিনি কি অসাংবিধানিক সরকার চান?’’

তিনি বলেন, ‘‘খালেদা ক্ষমতায় গেলে সরকারের সব কাজ বাতিল করবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি কি কৃষকের দশ টাকার অ্যাকাউন্ট বাতিল করবেন? কৃষকরা সাবধান। গার্মেন্টস শ্রমিকের মজুরি বাতিল করবেন। নতুন বই বাতিল করবেন। সেবামূলক কাজ তিনি বন্ধ করবেন। এগুলো করবেন আর লুটপাট করবেন, পকেট ভরাবেন আর জঙ্গিদের মদদ দেবেন।’’

আওয়ামী লীগ মানেই উন্নয়ন বলেও উল্লেখ করেন মতিয়া চৌধুরী।

মতিয়া চৌধুরী বলেন, “যারা রেন্টাল, কুইক রেন্টাল নিয়ে সমালোচনা করেন, তারা বিদ্যুতের সমস্যার কথা বলেন, বিদ্যুত চাহিদার কথা বলেন না। নতুন করে এক কোটি ৩০ লাখ বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে।’’

তারা কয়লা তুলতে দেন না, তাহলে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে কোথায়? বলেও প্রশ্ন করেন কৃষিমন্ত্রী।

মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘‘কুইক রেন্টাল অনেক বাঁচিয়ে দিয়েছে। কুইক রেন্টালের কারণে ২ হাজার ৯শ’ কোটি টাকার কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। জিডিপি বৃদ্ধি পেয়েছে এক লাখ ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার। কুইক রেন্টাল না করলে ৬০ হাজার কল-কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতো।’’

মতিয়া চৌধুরী বিশ্ব ব্যাংকের সমালোচনা করে বলেন, “আ-হা-রে….। গরিবের জন্য বিশ্বব্যাংকের কি দরদ।’ ক্যাব্য করে মন্ত্রী বলেন, ‘হাসে ডিম পাড়ে, গুইসাপ না না করে, আসলে ডিম খাওয়ার কুয়ারা করে।”

মতিয়া বলেন, “বিশ্ব ব্যাংক বলেছে, বিদ্যুতে ভর্তুকি না দিতে। এ ভর্তুকির টাকার সুবিধা ধনীরা পান, গরিবরা পান না। এ ভর্তুকির টাকার এসি চলে, ফ্রিজ চলে। এতে নাকি গরীবের কোনো লাভ হয় না।” তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, “বিদ্যুৎ কি শিল্পে ব্যবহার করা হয় না ?”

মতিয়া প্রশ্ন রেখে আরো বলেন, “বিশ্ব ব্যাংক কি জানে না, ধনী যে শিল্প কল-কারখানা চালান, গরিবরা সেখানে কাজ করেন?”

২০১১-১২ অর্থবছর দেশের জন্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার বছর উল্লেখ করে মতিয়া চেজৗধুরী বলেন, “একদিকে বিশ্বব্যাপী চলছিল মহামন্দা, অন্যদিকে বিরোধী দল দেশে সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। জ্বালাও-পোড়াও, হরতাল, একের পর আল্টিমেটাম দেওয়া শুরু হয়েছিল। বিএনপি জ্বালাও পোড়াও না করলে এবং সংসদে যোগ দিলে আরো উন্নয়ন হতো।”

গত ১৮ ডিসেম্বর বিএনপি মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনার কথা বলে পাড়ায় পাড়ায় বোমা হামলার ঘটনা ঘটিয়েছিল বলে উল্লেখ করে বিএনপির নৈরাজ্যের অভিযোগও  তুলে ধরেন মতিয়া।

খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে মতিয়া চৌধুরী আরো বলেন, “বিরোধী দলীয় নেতা সংসদে এক ঘণ্টা ৫৭ মিনিট বক্তব্য দিলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কিছুই বলেননি। তার পরেও তিনি বলেন, কথা বলতে দেওয়া হয় না।

কবিগুরুর এক বছরের মিনির প্রসঙ্গ তুলে মতিয়া বলেন, “আমার এক বছরের মিনি এক দণ্ডও কথা না বলিয়া থাকিতে পারে না।’’

সংসদের বাইরে খালেদা জিয়ার কথা বলা নিয়ে তিনি বলেন, অথচ সংসদের বাইরে গিয়ে চিল্লা ফাল্লা করেন। রাজপথে গিয়ে এ বিষয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি করছেন। বাজেট ভাবনার উত্থাপনের সময় খালেদা জিয়া তত্ত¡াবধায়ক সরকারকে অসাংবিধানিক বলেছেন।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়া হুমকি দিয়েছেন, ক্ষমতায় এলে তিনি বর্তমান সরকারের সব কাজ বাতিল করে দেবেন।

গত তত্ত্বাবধায়ক আমলে ভাতের বদলে আলু খাওয়ার গীত গাওয়া হয়েছে উল্লেখ করে মতিয়া বলেন, “দারিদ্র্য আছে, স্বীকার করি। কিন্তু সংখ্যা কমে এসছে। বাজেট এমন সময় দেওয়া হয়েছে যখন বিশ্বব্যাপী মন্দা চলছে।’’

তিনি বলেন, “বলা হচ্ছে ঘাটতি বাজেট। বিএনপির সময়েও বাজেটের ঘাটতি ছিলো। আমরা ঋণ করে ফ‚র্তি করে লুটপাট করে চলবো না। বিএনপির সময় এডিপি ছিলো ছোট। তিন বছরেই এডিপি আমরা দ্বিগুণ করেছি। এখানেই ঋণ বৃদ্ধির কারণ নিহিত। ঋণ করতে হচ্ছে উন্নয়নের চাকা সচল রাখার জন্য।”

তিনি আরো বলেন, “ঋণ বিএনপিও করেছিলো। আমরা ঋণ করছি বৃহত্তর এডিপির জন্য। এর বিকল্প ছিলো না।  সরকার ঋণখেলাপী হয় না। উন্নয়নের কাজে লাগে। হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ খেলাপী হয়ে পড়ে আছে।”

মতিয়া বলেন, “দেশ আজ চালে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। বলা হচ্ছে, কৃষিতে ভর্তুকি কম দেওয়া হয়েছে। চিন্তার কিছু নেই। প্রয়োজনে সম্পূরক বাজেটে আরো দেওয়া হবে।”

বাংলাদেশ