জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারকে মুক্ত করা এবং মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদান রাখার জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্নেল (অব.) অশোক তারাকে ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
সোমবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত সাপ্তাহিক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা সাংবাদিকদের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
তিনি জানান, ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ বিজয় অর্জনের পরও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যরা পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে বন্দি ছিলেন। মিত্র বাহিনীর তৎকালীন ভারতীয় মেজর অশোক তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ১৭ ডিসেম্বর সকালে বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে মুক্ত করে আনেন। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধে ১৪ গার্ড রেজিমেন্টের কোম্পানি ‘এ’-এর অধিনায়কও ছিলেন তিনি।
পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে বন্দি বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যরা হলেন, তার সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, তার দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এবং ছোট ছেলে শেখ রাসেল। তাদের ধানমণ্ডির ১৮ নম্বর সড়কে বাড়িতে বন্দি করে রেখেছিল পাকিস্তানি বাহিনী।
মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা জানান, অশোক তারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অনন্য ভূমিকা পালন করেন। এ কারণেই সরকার তাকে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননায় ভূষিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এরই মধ্যে ভারত সরকার তাকে বীরচক্র উপাধিতে ভূষিত করেছে।
মুক্তিযুদ্ধের পর অশোক ভারতীয় সেনাবাহিনী থেকে কর্নেল হিসেবে অবসর নেন। বর্তমানে তিনি ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে এর আগেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি বলে তাকে সম্মাননা দেওয়া সম্ভব হয়নি বলেও মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান।
মোশারর হোসাইন ভূঁইঞা আরো জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পকিস্তান থেকে মুক্ত হয়ে ১০ জানুয়ারি দেশে ফেরার পর তার পরিবারকে মুক্ত করার বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হন। এরপর বঙ্গবন্ধু মেজর অশোক তারাকে তার বাসভবনে ডেকে নিয়ে ধন্যবাদ জানান।
আগেই কর্ণেল অশোক তারাকে মুক্তিযদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য সন্মাননা দেওয়া হতো। কিন্তু তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তার অবস্থান সম্পর্কে জানা যাচ্ছিল না। তার সঙ্গে যোগাযোগ করে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা জানানো হবে।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে এছাড়াও বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড আইন-২০১২-এর খসড়া উন্নয়ন নীতিগত এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন-২০১২-এ চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। শেষোক্ত আইনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার কাজে অবহেলা করা হলে শাস্তির বিধান ও কিভাবে শাস্তি দেওয়া হবে, সেসব কথা বলা হয়েছে।
বৈঠকে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড আইন-২০১২ এর খসড়া সম্পর্কে সচিব আরো জানান, ১৯৭৭ সালে অর্ডিনেন্সের মাধ্যমে রেশম বোর্ড গঠন করা হয়। এরপর গঠন করা হয় বাংলাদেশ সিল্ক ফাউন্ডেশন। পরবর্তীতে রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট গঠিত হয়।
এ তিনটি বিভাগের কাজ একই ধরনের। কিন্তু সমন্বয়ের সমস্যা হয়। কাজের সুবিধার্থে এ আইনের আওতায় তিনটি বিভাগকে একীভূত করার প্রস্তাব করা হয়েছে খসড়ায়। এতে কাজের গতি বাড়বে ও ব্যয় হ্রাস পাবে।
সভায় চূড়ান্ত অনুমোদিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন ২০১২ সম্পর্কে মোশাররফ হোসাইন ভূঁইঞা বলেন, এ আইনের আওতায় জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি কাজ করবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর হবে। দুর্যোগের সময় মন্ত্রণালয় ও কমিটি কি ভূমিকা রাখবে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় কেউ অবহেলা করলে তার শাস্তি কি হবে সে বিষয়গুলো এ আইনের আওতায় নির্ধারিত হবে।
এছাড়া সভায় গত ৪ থেকে ৬ জুন রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত অ্যাটোমেক্সপো ২০১২ ইন্টারন্যাশনাল ফোরামে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের অংশগ্রহণ সম্পর্কে অবহিত করা হয়। রাশিয়ার অ্যাটমিক এনার্জি আয়োজিত ফোরামে বিশ্বের ৫৩টি দেশের ৪ হাজার প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুর্ঘটনা কিভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব সে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।