শাশুড়ির দেওয়া মিথ্যা ডাকাতি মামলায় ২ বছরের শিশু পুত্রসহ প্রায় একমাস ধরে জেল হাজতে রয়েছে জেলার ভাঙ্গা উপজেলার ছোট খারদিয়া গ্রামের এক গৃহবধূ রাবেয়া (২৩)।
গৃহবধুর মা জাহেদা বেগম জানান, ৫ বছর আগে ভাঙ্গার আলমগীর সঙ্গে বিয়ে হয় তার মেয়ে রাবেয়ার। বিয়ের পরপরই বিদেশে যাবে বলে টাকার জন্য রাবেয়াকে নির্যাতন শুরু করে স্বামী আলমগীর।
অব্যাহত নির্যাতনের মুখে রাবেয়াদের বাড়ি থেকে টাকা পেয়ে মালেশিয়ায় যায় আলমগীর। কিন্তু বিদেশ যাবার পর থেকে স্ত্রী সন্তানের কোনো রকম খোঁজ খবর নেয়নি তিনি।
এদিকে ছেলে বাড়িতে না থাকায় যৌতুকসহ নানা কারণে গৃহবধূর ওপর নিয়মিত নির্যাতন চালাতো আলমগীরের মা আনোয়ারা বেগম।
গত ৩ মাস আগে দেশে ফিরেছে আলমগীর। পরিবারের ইচ্ছায় অন্যথায় ২য় বিয়ে করার গুনগুন চলছে। যে কারণে রাবেয়াকে পরিবার থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিন্ধান্ত নেয় আলমগীর ও তার মা আনোয়ার বেগম।
আর এ নিয়ে রাবেয়ার শ্বশুর বাড়ির লোকের সঙ্গে বিবাদ চলে আসছিল। যৌতুকের চাপ আর শারারিক নির্যাতন করে রাবেয়াকে বাড়ি থেকে তাড়াতে না পেরে কৌশলে যায় আলমগীরের পরিবার।
তিনি আরও জানান, চলতি বছর ২৮ মে আলমগীরের বাড়িতে রাবেয়ার ভাই ও দুলাভাইকে দাওয়াত করে নেওয়া হয়। ২৯ মে রাতে ওই বাড়িতে ডাকাতির নাটক সাজিয়ে ৩১ মে ভাঙ্গা থানায় একটি মিথ্যা মামলা করা হয়।
মামলায় রাবেয়া, রাবেয়ার ভাই সহিদ ও দুলাভাই ইউনুছকে আসামি করা হয়।
অথচ সরেজমিনে গিয়ে এ বিষয়ে লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২৮ তারিখে রাতে ওই বাড়িতে ডাকাতির কথা বলা হলেও তা টের পাননি স্থানীয়রা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসী জানান, আলমগীর বিদেশ থাকাকালীন তার স্ত্রীর সঙ্গে শাশুড়িসহ শ্বশুর বাড়ির অন্যদের প্রায়ই ঝগড়া বিবাদ লেগে থাকত।
এলাকাবাসী কেউ বিশ্বাস করেন না- রাবেয়া ডাকাতির সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বা সেখানে আদৌ কোনো ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে কি না।
২৯ মের কথিত ডাকাতির ঘটনার দুই দিন পর ৩১ মে ভাঙ্গা থানায় দায়ের হওয়া মামলায় ওই দিনই গৃহবধু রাবেয়াকে তার শিশুপুত্রসহ স্বামীর বাড়ি থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে আসে।
একই দিনে পুলিশ তার ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে ফরিদপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ২নং আমলি আদালতে পাঠায়। বিজ্ঞ আদালত রিমান্ড নাকচ করে তাকে জেলহাজতে পাঠান।
তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, ‘সে ও তার ছেলে সহিদ ভাঙ্গা থানা হাজতে আটক তার মেয়ে রাবেয়ার সঙ্গে দেখা করতে গেলে থানার পুলিশ তাদেরকেও একদিন হাজতে আটকে রাখে। এ সময় পুলিশ তাদের মারপিট করে এবং টাকা দাবি করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মেয়ের জামাই আলমগীর ও তার মা আনোয়ারা নিজেদেরকে যৌতুক ও নারী নির্যাতনের মামলা থেকে বাঁচানোর জন্যই আমার মেয়ে রাবেয়াকে এই মিথ্যা ডাকাতির মামলা সাজিয়ে জেলে ঢুকিয়েছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার নাতিসহ নির্দোষ মেয়েটি প্রায় এক মাস ধরে জেল হাজতে রয়েছে। আদালতে মানবিক আবেদন করেও পুলিশি মিথ্যা প্রতিবেদনের কারণে তাদের জামিন মেলেনি। আলমগীর থানায় মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েছেন বলেও তিনি অভিযোগ করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন আবার মেয়ের জামাই আলমগীর ও তার মা মোটা অংকের টাকা দাবি করছে। তা হলে মামলা উঠিয়ে নেওয়া হবে। অন্যথায় বাড়ি ঘর ছাড়া করা এমনকি প্রাণ নাশেরও হুমকি দিচ্ছে তারা।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ভাঙ্গা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোতালেব হোসেন জানান, মামলাটির তদন্তাধীন রয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে আসামিকে আটক করা হয়েছে। বাদী পক্ষের কাছ থেকে অর্থ নেওয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।