সমুদ্রে যদি জোয়ার থাকে, তাহলে দেশের মধ্যাঞ্চলের পানি কমতে কিছুটা দেরি হতে পারে জানিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেছেন, ‘বন্যা দীর্ঘায়িত হলেও সরকারের ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখার সক্ষমতা রয়েছে। ’
তিনি জানান, এ পর্যন্ত ৩১টি জেলা বন্যা কবলিত হয়েছে এবং পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা আট লাখ ৬৫ হাজার ৮০০টি এবং ক্ষতিগ্রস্ত লোকের সংখ্যা ৩৯ লাখ ৭৫ হাজার ৯৩৭ জন।
শনিবার (২৫ জুলাই) সচিবালয় থেকে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এ কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘এক মাস হয়ে গেল বন্যার। গত ২৬ জুন থেকে বন্যা শুরু হয়, ১১ জুলাই থেকে দ্বিতীয় দফায় পানি বাড়ে এবং ২১ জুলাই থেকে তৃতীয় দফায় পানি বাড়ছে।’
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে যে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, সে অনুযায়ী ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানি বৃদ্ধি আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ-নদীসমূহের পানি হ্রাস পাচ্ছে এবং আগামী ৪৮ ঘণ্টা তা অব্যাহত থাকবে। ঢাকা জেলার আশেপাশের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। আমরা দেখছি যে ২৭ তারিখ পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি পাবে, তারপর আস্তে আস্তে কমতে শুরু করবে। ’
আগামী ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে এবং বাহ্মণবাড়িয়া জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরো জানান, এ সময়ে মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, ঢাকা, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নাটোর, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও নওগাঁ জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হবে। আরো দু’দিন অবনতি হবে এবং তারপর পানি কমতে থাকবে।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সমুদ্রে যদি জোয়ার থাকে, তাহলে হয়তো মধ্যাঞ্চলের পানি কমতে কিছুটা দেরি হতে পারে। আর যদি জোয়ার না থাকে, তাহলে হয়তো আগস্টের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে দেশের সব জায়গার পানি নেমে যাবে।
বন্যায় ত্রাণ বিতরণ মনিটরিংয়ের জন্য ছয়টি কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যারা আমাদের ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স কো-অর্ডিনেশন সেন্টার থেকে সারাদেশে উপজেলা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে ত্রাণ কার্যক্রম মনিটরিং করা হবে। আগামী ২১ দিন তারা এ দায়িত্ব পালন ও মনিটিরং করবে। মাঠ পর্যায় থেকে যে কোনো সমস্যা সমাধান করবে এবং চাহিদা অনুযায়ী জানাবে, আমরা বরাদ্দ দেব। ’
গত ২৮ জুন থেকে ত্রাণ বিতরণ ও বরাদ্দ অব্যাহত রাখা হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আজও আটটি জেলায় নতুন করে বরাদ্দ দিয়েছি। এ পর্যন্ত ৩১টি জেলা বন্যা কবলিত হয়েছে এবং বন্যা উপদ্রুত উপজেলার সংখ্যা ১৪৭টি। পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা আট লাখ ৬৫ হাজার ৮০০ এবং ক্ষতিগ্রস্ত লোকের সংখ্যা ৩৯ লাখ ৭৫ হাজার ৯৩৭। ’
আর এ পর্যন্ত ৩৯টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৮৮ হাজার ৬২ জন আশ্রয় নিয়েছেন বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।
ত্রাণ সহায়তা নিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এ পর্যন্ত তিন কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ১২ হাজার ১০ মেট্রিকটন চাল, এক লাখ ২১ হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট এবং গবাদি পশুর খাদ্য কেনার জন্য এক কোটি ৪৮ লাখ টাকা ও শিশুখাদ্যের জন্য ৭০ লাখ টাকা দিয়েছি। আর ঘর বানানোর জন্য ৩০০ বান্ডল টিন ও ৯০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। ’
‘আমি দেশবাসীকে জানাতে চাই, আপনাদের পাশে সব সময় আছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সব সময় আমাদের কার্যক্রম তদারকি করছেন, নির্দেশনা দিচ্ছেন। আমরাও তার নেতৃত্ব এবং নির্দেশনায় ত্রাণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি,’ যোগ করেন তিনি।
ক্ষয়ক্ষতি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বন্যা শেষ হওয়ার পর সেটা জানাব। বন্যা শেষে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে আলোচনা করে ক্ষতিপূরণ কাটানোর ব্যবস্থা করা হয়। ’
বন্যা দীর্ঘায়িত হলে তা মোকাবিলায় কী প্রস্তুতি রয়েছে, সে বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী ২১ দিনের জন্য প্রস্তুতি আছে। আগস্ট মাস পুরোটা থাকলে যে ত্রাণ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছি, সেটা আমরা অব্যাহত রাখতে পারব, সে পরিমাণ সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। কোথাও ত্রাণের কোনো সংকট নাই। আমাদের কাছে যেমন পর্যাপ্ত মজুত আছে, তেমনি জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়েও পর্যাপ্ত মজুত আছে। আজ ব্রিফিংয়ের আগে বন্যা কবলিত সব জেলা প্রশাসকের সঙ্গে ফোনে কথা বলে নিশ্চিত করেছি। ’