সাধারণ লবণ, পলিথিন ব্যাগ, এয়ারগান ও অ্যামিউনেশন, পুরাতন কম্পিউটার ও ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী আমদানি নিষিদ্ধ করে তিনবছর মেয়াদী (২০১২-২০১৫) নতুন আমদানি নীতি প্রণয়ন করতে যাচ্ছে সরকার। আমদানি নীতি পরামর্শক কমিটি গত মাসে এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে।
এ সপ্তাহেই কিংবা আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠিতব্য অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এটি অনুমোদন দেওয়া হবে। বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য এরই মধ্যে নতুন আমদানি নীতির একটি সার সংক্ষেপ প্রণয়ন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
উল্লেখ্য, বর্তমান ‘আমদানি নীতি আদেশ (২০০৯-২০১২)’-এর মেয়াদ চলতি জুনের শেষ দিন ৩০ তারিখ শেষ হয়ে যাচ্ছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আমদানি নীতি প্রণয়নে পাঁচটি বিষয়কে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং নতুন আমদানি নীতিতে ৩৫টি বিষয়ে পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সংযোজন করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য বিধি-বিধান অপরিবর্তিত থাকবে।
আমদানি নীতি প্রণয়নে যে পাঁচটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো- বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার আওতায় বিশ্বায়ন ও মুক্তবাজার অর্থনীতির ক্রম বিকাশের ধারার আলোকে আমদানি নীতিকে আরো সহজ করা, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসারকল্পে অবাধ প্রযুক্তি আমদানির সুবিধা, রপ্তানি সহায়ক শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য আমদানি প্রক্রিয়া সহজ করার মাধ্যমে দেশীয় রপ্তানিকে মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো এবং এ লক্ষ্যে শিল্পনীতি-রপ্তানি নীতি ও অন্যান্য উন্নয়ন কর্মসূচির সঙ্গে আমদানি নীতি আদেশের সমন্বয় করা, পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা অধিকতর শিথিল করাসহ শিল্পের কাঁচামাল সহজলভ্য করা ও পণ্যের সরবরাহ বাড়ানো এবং গুণগতমান সম্পন্ন ও স্বাস্থ্যসম্মত পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা।
নতুন আমদানি নীতিতে যে ৩৫টি বিষয়ে পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সংযোজন আনা হয়েছে এর মধ্যে খাদ্য বিভাগ কর্তৃক সিআইপি ও সিআইএফ ভিত্তিতে খাদ্য আমদানির বিধান সংযোজন, খাদ্যদ্রব্য আমদানির ক্ষেত্রে বিএসটিআই’র নির্ধারিত খাদ্যমানের চেয়ে নি¤œমানের খাদ্য ফেরত প্রদান, আমদানিকৃত খাদ্যদ্রব্যে মেলামাইন-ভারি ধাতু ও হরমোন নেই এ মর্মে সনদপ্রত্র থাকা, সরকারি ত্রাণ সামগ্রী আমদানিতে খাদ্য বিভাগ কর্তৃক ‘মানুষের খাওয়ার উপযোগী’ মর্মে সনদপত্র প্রদান, পচনশীল খাদ্যদ্রব্য আমদানির পর তা সাময়িকভাবে আমদানিকারকের ওয়্যারহাউজে জিম্মায় রাখা, এলসিএ ফরমের মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী আমদানির ক্ষেত্রে মূল্যসীমা বৃদ্ধি, ডাক যোগে পণ্য আমদানির বিধান সংযোজন, মেধাস্বত্ত্ব আইন অনুযায়ী পণ্য খালাস করা, রপ্তানিকৃত তৈরি পোশাক ত্রুটিপূর্ণ হলে তা ফেরৎ ও খালাসের বিধান সংযোজন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য আমদানিকৃত টারবাইন ব্যবহার শেষে পুন:রপ্তানি করা, উদ্ভিদ ও উদ্ভিদজাত দ্রব্যাদির সংজ্ঞা সংযোজন, মিট ও বোন মিল আমদানিতে ক্ষতিকারক উপাদানমুক্ত মর্মে প্রত্যয়ণপ্রত্র থাকা, আমেরিকা ও ইউরোপসহ অন্যান্য দেশ থেকে বোনমিল-মিটমিল এবং মিট ও বোনমিল দ্বারা তৈরিকৃত পণ্য ক্ষতিকারক উপাদানমুক্ত মর্মে প্রত্যয়ণপ্রত্র থাকা, শিল্পখাতে কালেট স্ক্র্যাপ অব গ্লাস আমদানির বিধান সংযোজন, তেজষ্ক্রিয় পদার্থমুক্ত ওয়েস্ট অ্যান্ড স্ক্র্যাপ আমদানি, শর্ত সাপেক্ষে কনডেনসেট আমদানি, শর্ত সাপেক্ষে পাইরেক্স ও গ্লাসওয়ার আমদানি, পণ্য আমদানিতে কাঠ জাতীয় দ্রব্য ব্যবহৃত হলে সেসব কাঠের ফাইটোস্যানিটারি সনদ দাখিল করা, বিদ্যমান আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য তালিকার ফুটনোটের ৯ নং ক্রমিকে শিল্প স্লাজ আমদানি নিষিদ্ধ করা এবং তিন শতাংশের অধিক সালফারযুক্ত কয়লা আমদানি নিষিদ্ধের বিধান রাখা হয়েছে নতুন আমদানি নীতিতে।
এছাড়া সাফটাভুক্ত দেশগুলোতে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিকৃত চলচ্চিত্রের সমান সংখ্যক চলচ্চিত্র আমদানির বিধান সংযোজন এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে (আইআরসি, ইনডেনটর ও রপ্তানিকারক) নিবন্ধন ফি, নবায়ন ফি ও সারচার্জ বাড়ানো হয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নতুন আমদানি নীতি প্রণয়ণের আগে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর, অধিদপ্তর, সংস্থা, এফবিসিসিআইসহ বিভিন্ন চেম্বার ও ব্যবসায়ী সংগঠনের কাছ থেকে মতামত চাওয়া হয়েছিল এবং এর প্রেক্ষিতে ২২৮টি প্রস্তাব পাওয়া যায়। পরবর্তীতে বিভিন্ন পর্যায়ের বৈঠকে সেখান থেকে ৩৫টি প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।