যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের হিউস্টনে চীনা কনস্যুলেট হঠাৎ করে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সরকার। আগামী শুক্রবারের মধ্যে সব কার্যক্রম বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে ওয়াশিংটন। চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস মার্কিন সরকারের এ পদক্ষেপকে ‘বেপরোয়া’ ও ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, আমেরিকান মেধাস্বত্ব সুরক্ষায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এদিকে অল্প সময়ের নোটিসে কনস্যুলেট বন্ধের নির্দেশের এ ঘটনায় ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিয়েছে বেইজিং।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কনস্যুলেট বন্ধে মার্কিন সরকারের হঠাৎ নেয়া এ সিদ্ধান্ত বিশ্বের বৃহৎ দুই অর্থনীতির চলমান টানাপড়েনে নতুন উত্তেজনা তৈরি করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমস বলেছে, হিউস্টনে চীনা কনস্যুলেট ভবন থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। অফিস গুটিয়ে নেয়ার আগে চীনা কর্মকর্তারা নথিপত্র পুড়িয়ে ফেলছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হিউস্টনে বিপুলসংখ্যক এশীয় বসবাস করেন। তাদের পাশাপাশি মার্কিন নাগরিকদের ভিসা দেয়ার সুবিধার্থে সেখানে দূতাবাস খুলেছিল চীন সরকার। তবে নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকে ভিসা দেয়ার কাজ বন্ধ রয়েছে।
বুধবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র হঠাৎ করে হিউস্টনে চীনা কনস্যুলেট জেনারেল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। এটি চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা রাজনৈতিক উসকানি, আন্তর্জাতিক আইন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মৌলিক নিয়মনীতির গুরুতর লঙ্ঘন।
কনস্যুলেট বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার জন্য ওয়াশিংটনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ওয়েনবিন।
চীন-মার্কিন সম্পর্ক ইচ্ছাকৃতভাবে দুর্বল করার উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্র কনস্যুলেট বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন চীনা ওই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, চীন এ ধরনের অবমাননাকর ও অযৌক্তিক পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানায়। যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কে মারাত্মক ক্ষতি করবে এ সিদ্ধান্ত।
ওয়াশিংটনে দূতাবাসের বাইরেও যুক্তরাষ্ট্রে চীনের পাঁচটি কনস্যুলেট রয়েছে। এগুলোর মধ্যে হিউস্টনকে কেন বাছাই করা হলো এটা স্পষ্ট নয়।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র মর্গান ওর্টাগাস বলেন, আমেরিকার মেধাস্বত্ব ও গোপনীয় তথ্য রক্ষার স্বার্থে কনস্যুলেট বন্ধের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যার দিকে হিউস্টনের পুলিশ জানায়, কনস্যুলেট ভবনে আগুনের খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, কনস্যুলেট ভবনের ভেতরে চীনা কর্মকর্তারা তাদের নথিপত্র পুড়িয়ে ফেলছেন।
নভেল করোনাভাইরাস মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে চিরবৈরী দুই বিশ্বশক্তি চীন-মার্কিন সম্পর্কে মারাত্মক অবনতি ঘটে। চীন এ ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ এবং তথ্য গোপন করে বিশ্বজুড়ে ভাইরাসটির বিস্তারের জন্য দায়ী বলে অভিযোগ করে আসছে মার্কিন প্রশাসন। এ নিয়ে দুই দেশের শীর্ষ কর্মকর্তারা প্রায়ই বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ছেন। হংকংয়ে বিতর্কিত নিরাপত্তা আইন নিয়েও বেইজিংয়ের সমালোচনা করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা। এর মাঝে কনস্যুলেট বন্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের এ সিদ্ধান্ত চীন-মার্কিন সম্পর্ককে খাদের কিনারে নিয়ে যেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা।
গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের আইন মন্ত্রণালয় থেকে চীনের প্রতি অভিযোগের তীর নিক্ষেপ করা হয় যে কভিড-১৯-এর টিকা নিয়ে গবেষণাকারী ল্যাবগুলোকে টার্গেটকারী হ্যাকারদের স্পন্সর করে আসছে বেইজিং। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা কোম্পানির ওপর গুপ্তচরবৃত্তিতে সরকারি এজেন্টদের সহায়তা গ্রহণে দুই চীনা নাগরিকের ওপর অভিযোগ আনা হয়েছে।