কোভিড-১৯ এর কারণে শিশুসেবা ও প্রারম্ভিক শিক্ষা ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ায় বিশ্বব্যাপী অন্তত ৪ কোটি শিশু স্কুল শুরুর আগে প্রারম্ভবিক শৈশবকালীন শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
বুধবার (২২ জুলাই) ঢাকায় প্রাপ্ত নিউইয়র্ক থেকে ইউনিসেফ প্রকাশিত নতুন এক গবেষণায় এ তথ্য জানানো হয়।
ইউনিসেফের গবেষণা বিষয়ক কার্যালয় ‘ইনোসেন্টির তৈরি করা এই গবেষণার সার সংক্ষেপ বৈশ্বিকভাবে শিশুসেবা এবং প্রারম্ভিক শৈশবকালীন শিক্ষা পরিস্থিতির দিকে নজর দেয় এবং ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া কোভিড-১৯ এর কারণে এসব গুরুত্বপূর্ণ পারিবারিক সেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রভাব সর্ম্পকিত একটি বিশ্লেষণ অর্ন্তভুক্ত করে।
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর বলেন, “কোভিড-১৯ মহামারি কারণে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় তা সম্ভাব্য সবচেয়ে ভালো উপায়ে শিশুদের পড়াশোনা শুরু করায় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।”
তিনি বলেন, ‘শিশুসেবা এবং প্রারম্ভিক শৈশবকালীন শিক্ষা এমন একটি ভিত তৈরি করে, যার ওপর শিশুদের বিকাশের প্রতিটি বিষয় র্নিভর করে। বৈশ্বিক মহামারি সেই ভিতকে মারাত্মক হুমকিতে ফেলেছে।’
বৈশ্বিক সংকটে শিশুসেবা: র্কমক্ষেত্র ও পারিবারিক জীবনের ওপর কোভিড-১৯ এর প্রভাব র্শীষক গবেষণা প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, লকডাউনের কারণে অনেক বাবা-মাকে শিশুসেবা ও কর্মসংস্থানের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে রীতিমতো সংগ্রাম করতে হচ্ছে। এ কারণে বৈষম্যমূলকভাবে নারীদের ওপর চাপ অনেক বেড়েছে।
সেবাসমূহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তা বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ছোট শিশুদের পরিবারগুলোর জন্য সংকটকে আরও গভীর করে তুলেছে। এসব শিশুর অনেকে আগে থেকেই সামাজিক সুরক্ষামূলক সেবা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত ছিল।
শিশুদের সমন্বিত পরিষেবা, মমতা, সুরক্ষা, উদ্দীপনা ও পুষ্টি সেবা প্রদানে এবং একই সঙ্গে তাদের সামাজিক, অনুভূতি ও মানসিক দক্ষতার বিকাশে সক্ষম করে তুলতে শিশুসেবা অপরিহার্য বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়।
এ থেকে উত্তোরণে ফোর বলেন, “এই র্দুযোগের সঙ্গে মানিয়ে নিতে এবং শিশুদের শিক্ষা ও বিকাশকে সুরক্ষিত রাখার জন্য পরিবাগুলোর তাদের সরকারের ও চাকরিদাতাদের সহায়তা প্রয়োজন।”
গবেষণায় বলা হয়, ১৬৬টি দেশের মধ্যে অর্ধেকেরও কম দেশে অন্তত এক বছরের জন্য বিনামূল্যের প্রাক-প্রাথমিক কর্মসূচি রয়েছে। এটি আবার নিম্ন-আয়ের দেশগুলোর ক্ষেত্রে মাত্র ১৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
অনেক ছোট শিশু যারা বাড়িতেই ছিল, তারা তাদের সুস্থ বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় খেলা এবং প্রাথমিক শিক্ষা সহায়তার সুযোগ পায় না। প্রতিবেদনে বলা হয়, শিশুসেবা ও প্রারম্ভিক শিক্ষাজনিত বিকল্পের অভাবও অনেক বাবা-মাকে, বিশেষ করে অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করা মায়েদের অনেকেই তাদের ছোট শিশুটিকে নিজ কর্মক্ষেত্রে নিয়ে আসা ছাড়া কোনো বিকল্প থাকে না। আফ্রিকায় প্রতি ১০ জন নারীর মধ্যে ৯ জনেরও বেশি এবং এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ১০ জনের মধ্যে প্রায় ৭ জন নারী অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করে এবং কোনো ধরণের সামাজিক সুরক্ষা সেবা পায় না বা অত্যন্ত সীমিত আকারে পায়।
অনেক বাবা-মা এই অনির্ভরযোগ্য, স্বল্প বেতনের চাকরিতে আটকা পড়ে যায়, যা কয়েক প্রজন্মের মধ্যে দারিদ্র্যের একটি চক্র গড়ে তুলতে অবদান রাখে বলে গবেষণায় বলা হয়।
গবেষণায় আরো বলা হয়, এ অবস্থায় সব বাবা-মায়ের জন্য সবেতন মাতৃত্ব বা পিতৃত্বকালীন ছুটির ব্যবস্থা করা, যাতে মাতৃত্ব বা পিতৃত্বকালীন ছুটি শেষ হওয়া ও সাশ্রয়ী শিশুসেবা শুরু হওয়ার মাঝে কোনো ফাঁক না থাকে।
পাশাপাশি কর্মজীবী বাবা-মায়েদের জন্য প্রয়োজন অনুসারে নমনীয় বা সুবিধাজনক কাজের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রশিক্ষণসহ অ-পারিবারিক শিশুসেবায় নিয়োজিত কর্মীদের পেছনে বিনিয়োগ এবং নগদ অর্থ প্রদানসহ সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থাসমূহ অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত পরিবারগুলোর কাছে পৌঁছাতে হবে।