কক্সবাজার সদরের খুরুশকুলে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য তৈরি করা হয়েছে দেশের বিশাল আশ্রয়ণ প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারভিত্তিক আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় এ প্রকল্পে এরই মধ্যে ২০টি বহুতলভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চ্যুয়াল প্লাটফরমের মাধ্যমে গণভবন থেকে এ প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় সদর উপজেলার খুরুশকুলে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের নির্মিত ভবনগুলোর বসতঘর উপকারভোগীদের মধ্যে বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভার্চুয়াল প্লাটফরমের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে সরাসরি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
তিনি বলেন, ওই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নবনির্মিত ২০টি ভবন উদ্বোধন ঘোষণা করবেন এবং ১৯ উপকারভোগীর মধ্যে বসতঘরের চাবি হস্তান্তর করবেন। একই সময় খুরুশকুল প্রান্তে তিনজন উপকারভোগী কর্তৃক আশ্রয়ন প্রকল্পস্থলে রোপণ করা হবে ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা।
কক্সবাজার শহর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে খুরুশকুলে বাঁকখালী নদীর তীরে ২৫৩ একর জমির ওপর গড়ে উঠেছে এই ‘বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প’। পুরো এলাকাকে চারটি জোনে ভাগ করে ১৩৯টি পাঁচতলা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে সেখানে।
সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ১৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ হলে এসব ভবনে বসবাসের সুযোগ পাবে ৪ হাজার ৪০৯টি জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবার, যারা কক্সবাজার বিমানবন্দরের পালে ফদনার ডেইল, কুতুবদিয়াপাড়া ও সমিতিপাড়ায় মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন বহু বছর ধরে।
‘একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না’- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ ঘোষণা বাস্তবায়নে গৃহহীন মানুষের জন্য ঘর বানিয়ে দেওয়ার বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে সরকার।
১৯৯৭ সালের ১৯ মে কক্সবাজার জেলাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হলে বহু পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ে। তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওইসব এলাকা পরিদর্শন করে গৃহহীন ও ছিন্নমূল মানুষের পুনর্বাসনের তাৎক্ষণিক নির্দেশ দেন। সেই প্রেক্ষাপটে ১৯৯৭ সালে ‘আশ্রয়ণ’ নামে প্রথম প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প শুরু হয় ২০১০ সালে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল ৩ লাখ ১৯ হাজার ১৪০টি পরিবার ঘর পেয়েছে। অন্যান্য আশ্রয়কেন্দ্রগুলো তৈরি করা হয়েছে পাকা ও আধা পাকা দালানের ব্যারাক আকারে। বহুতল ভবনে ফ্ল্যাট নির্মাণ খুরুশকুলের এই আশ্রয়ণ প্রকল্পেই প্রথম।
সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের মাধ্যমে প্রথম পর্যায়ের ২০টি ভবনের মধ্যে ১৯টির কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। প্রতিটি পাঁচতলা ভবনে থাকছে ৪৫৬ বর্গফুট আয়তনের ৩২টি করে ফ্ল্যাট।
যা যা থাকছে নতুন ঠিকানায়
শহর থেকে খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পে যাওয়ার জন্য সুপ্রশস্ত রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকল্পের ভেতরের রাস্তা নির্মাণের কাজও শেষ হয়েছে। কাটা হয়েছে পুকুর। জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষার জন্য নদীর পাশে সাত মিটার উঁচু বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে।
নির্মাণ কাজ শেষ হওয়া ভবনগুলোর আলাদা আলাদা নামও দেওয়া হয়েছে। কোনোটির নাম দেওয়া হয়েছে ইনানী। কোনোটার নাম বাঁকখালী। সাম্পান, ঝিনুক, কোরাল- এ রকম নামও রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীই এসব নাম ঠিক করে দিয়েছেন বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।
২০২৩ সালে পুরো প্রকল্পের যখন শেষ হবে, তখন এখানে যে কেবল ৪ হাজার ৪০৯টি পরিবার আশ্রয় পাবে, তা নয়। প্রায় ১০০ একর জমির ওপর গড়ে তোলা হবে আধুনিক পর্যটন জোন। ১৪টি খেলার মাঠ, সবুজ জায়গা, মসজিদ, মন্দির, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পুলিশ ও ফায়ার স্টেশন, তিনটি পুকুর, নদীতে দুটি জেটি, দুটি বিদ্যুতের সাবস্টেশন থাকবে এখানে।
প্রকল্পের আবাসিক ভবনগুলো সব ৫ তলা হলেও একটি ভবন হবে দশ তলা, যার নাম হবে শেখ হাসিনা টাওয়ার। এই ভবনের অবস্থান হবে পর্যটন জোনে।
২০ কিলোমিটার অভ্যন্তরীণ রাস্তা, ৩৬ কিলোমিটার ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বর্জ্য পরিশোধন ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা, তীর রক্ষা বাঁধ, ছোট সেতু, ঘাটলা ও খাল থাকবে পুরো প্রকল্প এলাকায়।