বহু বিতর্ক আর সমালোচনার মুখে থাকা স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ পদত্যাগ করেছেন।
আজ মঙ্গলবার (২১ জুলাই) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে গিয়ে জনপ্রশাসন সচিবের কাছে নিজের পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি।
আজ সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আব্দুল মান্নান স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
করোনাভাইরাসের শনাক্ত সম্পর্কে ভুয়া রিপোর্ট দেয়াসহ নানা অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতাল বন্ধ করে দেয়ার পর থেকেই মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের পরস্পরকে দোষারোপের মধ্যেই পদত্যাগ করলেন আবুল কালাম আজাদ।
গত ৭ই জুলাই ঢাকায় রিজেন্ট হাসপাতালে র্যাবের অভিযানের পর সেটি বন্ধ করে দেয়া হলে কার নির্দেশে কিভাবে ওই হাসপাতালকে করোনাইরাস পরীক্ষা ও চিকিৎসার অনুমোদন দেয়া হয়েছিল, তা নিয়ে তীব্র বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতর।
রিজেন্ট হাসপাতালের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পরে অনিয়মের অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতাল বন্ধ করে দেয়ার হলে মন্ত্রী জানান যে অধিদফতরের আমন্ত্রণেই তিনি সেখানে গিয়েছিলেন।
অন্যদিকে মহাপরিচালক দাবি করেন যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই তারা চুক্তিটি করেছিলেন।
এক পর্যায়ে মহাপরিচালককে রিজেন্টের অনুমতির বিষয়ে শোকজ করে মন্ত্রণালয়। আবুল কালাম আজাদ তার জবাবে জানান যে সেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বোঝানো হয়নি – এ কথা জানিয়েছিলেন বর্তমান স্বাস্থ্য সচিব আবদুল মান্নান।
স্বাস্থ্য সচিব আরও বলেছিলেন যে মহাপরিচালক নোটিশের জবাবে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মৌখিক নির্দেশের কথা তুলে ধরেছেন।
“উনি বলেছেন যে, এগুলো মৌখিকভাবে পূর্ববর্তী সচিব মহোদয় বলেছেন”।
তখনই সচিব জানিয়েছিলেন যে মহাপরিচালকের জবাব তারা পর্যালোচনা করে দেখবেন।
এমন পটভূমিতেই মঙ্গলবার মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদের পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার খবর এলো।
উল্লেখ্য, অধ্যাপক ডা. দ্বীন মোহাম্মদ নুরুল হক অবসরে যাওয়ার পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পাওয়ার পর তার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে তাকে আবার দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়।
বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক নিজে উদ্যোগী হয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে এই নিয়োগ দেন। কিন্তু চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়ার পরই তার বিরুদ্ধে চরম দায়িত্ব ও কর্তব্যে অবহেলা শৈথিল্য এবং পক্ষপাত এবং নানা রকম দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপিত হয়।
বিশেষ করে করোনা সংক্রমণের শুরুর পর থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সীমাহীন দায়িত্বহীনতা স্পষ্ট হতে থাকে। এর মধ্যেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পরিবর্তনের প্রক্রিয়া গ্রহণ করেছিল। কিন্তু একের পর এক ব্যর্থতা দুর্নীতির অভিযোগ এবং নানা রকম অপকর্মের দায়ভার মাথায় নিয়ে শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।