উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরের জহুরা মার্কেটের ভোগ্যপণ্যের দোকান সিরাজগঞ্জ স্টোর। এ দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেল কিনতে এসেছেন একই সেক্টরের ১৩ নম্বর সেড়কের ৪৬ নম্বর বাড়ির মিসেস রাজিয়া সুলতানা। সাধারণত সারা মাসের মুদি বাজার তিনি এ দোকান থেকেই করেন। গত মাসে প্রতি ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল (রূপচাঁদা) তিনি কিনেছিলেন ৬৫০ টাকা দরে। আজ এসেই দেখেন বোতলের গায়ে লেখা আছে ৬৭০ টাকা। অথচ কয়দিন আগে প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রীকে তিনি ঘোষণা দিতে দেখেছেন ভোজ্য তেলের দাম কমবে। কিন্তু রোজা সামনে রেখে দাম কমার জায়গায় বেড়েছে ২০ টাকা।
গতানুগতিক এ গল্পের এখানেই শেষ নয়। আমি দাঁড়িয়ে আছি মিসেস রাজিয়ার পাশে। তিনি দাম বাড়ানো নিয়ে বিক্রেতার সঙ্গে বাকবিতণ্ডা চালিয়ে যাচ্ছেন। এক পর্যায়ে ক্ষুদে বিক্রেতা বলে উঠলেন, ‘আপনি ফ্রেস ব্রান্ডের তেল নেন। যদিও ওই বোতলের গায়ে ৬৭০ টাকা লেখা আছে, তবু আমি ৬৪০ টাকা রাখতে পারব।’
এবার আমি ও মিসেস রাজিয়া নড়েচড়ে উঠলাম। জানতে চাইলাম এর কারণ কি? ক্ষুদে বিক্রেতার সরল স্বীকারোক্তি, ‘রোজা সামনে রেখে আমরা ৭ লাখ টাকার ফ্রেস ব্রান্ডের সয়াবিন তেল মজুদ করেছি। এক্ষেত্রে দাম পড়েছে ৬৩০ টাকা। রোজায় যা ৭০০ টাকা করে বিক্রি করব। আপনাকে ১০ টাকা লাভে এক বোতল দিতে পারি।’
এবার আমিও এক বোতল সয়াবিন নিতে চাইলাম। কিন্তু বিক্রেতা আমার কাছে ওই দরে তেল বেচবেন না। কারণ হিসেবে জানালেন, আমি তার নিয়মিত ক্রেতা নই।
পরে আরো কয়েকটি দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, প্রায় সব দোকানেইর আছে নিজস্ব গুদাম ঘর। আর রোজা সামনে রেখে সবাই এরই মধ্যে গুদাম ভরে ফেলেছে রোজার নিত্য পণ্য, তেল চিনি, পেঁয়াজ, ছোলা, ডাল, রসুন, মসলা ইত্যাদি দিয়ে।
কেবল উত্তরার এ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কেনো, রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, শ্যামবাজার মসলা আড়ৎ, বাবুবাজার, বেগমবাজার, ঠাটারি বাজারসহ প্রায় প্রতিটি বাজারের ব্যবসায়ীরাই গত মে মাসে শেষ করে ফেলেছে তাদের পণ্য মজুদের কাজ।
রমজানকে সামনে রেখেই শুরু হয়েছে ভোগ্যপণ্যের মজুদ। এবার পাইকারদের অনেকটা ফাঁকি দিয়েই এ কাজ সেরে ফেলেছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।
শ্যামবাজারের পেঁয়াজ-রসুনের আড়তদার জসীম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, “এখন বাজারে দেশী পেঁয়াজের পাইকারী দর ২৫ টাকা কেজি। এক মাস আগে তা ছিল ১৮ টাকা। এক মাস পর এ পেঁয়াজ ৫০ টাকায় পৌঁছাতে পারে। তাই ব্যাবসায়ীরা একমাস আগেই পেঁয়াজ গুদামজাত করা শুরু করেছে।”
তিনি বলেন, ‘একই অবস্থা চলছে দেশী রসুনের ক্ষেত্রে। কিন্তু চায়না রসুন ও আদা যেহেতু বেশি দিন মজুদ রাখা যায় না, তাই তা মজুদ শুরু হয়েছে এখন থেকেই।’
বেগম বাজারের ছোলা আমদানিকারক আব্দুল্লাহ আল মামুন বললেন, ‘বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার ছোলা পাইকারী দরে বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা। বার্মিজ ছোলা ৫৫ টাকা। যা গত সপ্তাহে ছিল ৫৮ টাকা ও ৫০ টাকা। কিন্তু রোহিঙ্গা সমস্যা শুরু হওয়ায় বার্মিজ ছোলা আসা বন্ধ হয়ে গেছে ফলে চাপ পড়েছে অস্ট্রেলিয়ার ছোলার ওপরে। আবার অস্ট্রেলিয়ায় অতি বৃষ্টির কারণে ছোলার ফলন কম হওয়ায় তারা রপ্তানি করছে কম। কিন্তু এখনো দেশে যে পরিমান ছোলা মজুদ আছে, তাতে রমজানে ছোলার দর আর বাড়ার সুযোগ নেই।’
তিনি বলেন, ‘এবার সরকারের কঠোরতায় পাইকাররা হয়তো দাম ততটা বাড়াবেন না কিন্তু এরইমধ্যে খুচরা বিক্রেতারা যে বিশাল মজুদ গড়ে তুলেছেন, তাতে অস্থির হয়ে উঠবে ভোগ্যপণ্যের বাজার।’
তিনি আরো বলেন, “এ অবস্থা থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় সরকারের বাজার মনিটরিং। কেবলমাত্র কঠোর বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই সরকার নিত্যপণ্যের দর নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।”