ময়মনসিংহে সিনেমা হল বন্ধের মিছিল !

ময়মনসিংহে সিনেমা হল বন্ধের মিছিল !

সারাদেশে একটার পর একটা সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে সিনেমা হলগুলো। সেখানে গড়ে তোলা হচ্ছে বহুতল বিশিষ্ট মার্কেট বা আবাসিক ভবন। সারাদেশের মতোই ঐতিহ্যবাহী ময়মনসিংহের সিনেমা হলগুলোও একটার পর একটা ভেঙ্গে ফেলে হচ্ছে।

ময়মনসিংহ শহরের হৃদপিন্ড গাঙ্গিনারপাড় মোড় এলাকায় ছিল ‘অলকা’ সিনেমা হল। এ সিনেমা হলটি এক সময় শহরের মানুষের এমনকি গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর হৃদয়েও ‘ঝংকার’ তুলতো। এখন সেই সিনেমা হল আর নেই। সেখানে নির্মিত হয়েছে আকাশছোঁয়া অট্রালিকা। নাম ‘অলকা নদী বাংলা শপিং কমপ্লেক্স’।

‘অলকা’ এর মতো একই পরিণতি হয়েছে অজন্ত সিনেমা হলেরও। এ সিনেমা হল ভেঙে ‘নওজেশ শপিং কমপ্লেক্স’ গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এভাবেই  শতাব্দীর প্রাচীন এ শহরের সিনেমা হল বন্ধের মিছিল শুরু হয়েছে।

‘ছায়াবাণী’ সিনেমা হল চালু থাকলেও রয়েছে মালিকানা দ্বন্দ্ব। পূরবী ও সেনা অডিটোরিয়ামে  দু’ সিনেমা হল চালু থাকলেও নেই আগের মতো দর্শক।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০২ সালের ৭ ডিসেম্বর একই সময়ে ময়মনসিংহের অলকা, অজন্তা, ছায়াবাণী ও পূরবী সিনেমা হলে বোমা হামলার পর মূলত সিনেমা হলগুলো দর্শক সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পায়।

এছাড়া দেশে ভালো ছবি নির্মাণ না হওয়ায় সিনেমা হলে দর্শক খরা শুরু হয়। দর্শক সংখ্যা কমে যাওয়ায় ছবির ব্যয় ওঠানোই হল মালিকদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। এর ফলে অলকা ও অজন্তা সিনেমা হলের মালিক এ ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন।

সিনেমা হলের ব্যবসা ছেড়ে দেয়া মালিকরা জানান, ‘সিনেমা হলের ব্যবসা করে ঠিকমতো কর্মচারীদের বেতন দেয়াই কঠিন হয়ে পড়েছিল। তাছাড়া শহরে অ্যাপার্টমেন্টের চাহিদাও বেড়ে যায়। তাই ডেভেলপার কোম্পানির কাছে এ দু’টি সিনেমা হল দিয়ে দেয়া হয়েছে। একটি’র কাজ শেষ হয়েছে, অন্যটির এখনো কাজ চলছে।’

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ২০০৮ সালের ২৭ নভেম্বর ‘অলকা নদী বাংলা শপিং কমপ্লেক্স’ ও কাছাকাছি সময়ে অজন্তা সিনেমা হল ভেঙে ‘নওজেশ শপিং কমপ্লেক্স’র নির্মাণ কাজ শুরু হয়।

শহরের প্রাণকেন্দ্র গাঙ্গিনারপাড় মোড় এলাকায় অলকা সিনেমা হলের জায়গায় ৮ তলা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চলন্ত সিঁড়ি, ক্যাপসুল লিফটসমৃদ্ধ শপিং কাম অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স নির্মিত হয়েছে। বর্তমানে দারুণভাবে ‘অলকা নদী বাংলা শপিং কমপ্লেক্স’ মার্কেটটি চালু রয়েছে।

এছাড়া শহরের সি.কে.ঘোষ রোড এলাকায় ‘নওজেশ শপিং কমপ্লেক্স’র নির্মাণ কাজ শুরুর যাবতীয় প্রস্তুতি নেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত ডেভেলাপার কোম্পানির সাথে মালিকপক্ষের মনকষাকষিতে শুরু হয়নি কাজ।

‘শিগগিরই ঢাকার একটি নতুন ডেভেলাপার কোম্পানির সাথে এ নিয়ে কথাবার্তা চলছে’ বলে জানিয়েছেন সিনেমা হলটির অন্যতম মালিক সলিমুল্লাহ বাবু।

অলকা সিনেমা হলের মালিক সুশান্ত কুমার চৌধুরী বলেন, ‘ভয় আর লোকসান দিয়ে কোনোভাবেই সিনেমা হলের ব্যবসা চালানো সম্ভব হচ্ছিল না। তাই বাধ্য হয়েই সিনেমা হলের ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছি।’

জানা গেছে, বোমা হামলার পর পূরবী সিনেমা হলের মালিক জমির উদ্দিন ময়মনসিংহ পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্বাস উদ্দিন তালুকদারের কাছে পানির দামে সিনেমা হলটি বিক্রি করে দেন। মালিকানা বদলের পরেও দর্শকশূণ্যতায় হলটি লাভের মুখ দেখতে পারেনি। ফলে এ সিমেনা হলটিও বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে ছেড়ে দেবার কথা ভাবছেন মালিকপক্ষ।

পূরবী সিনেমা হলের ম্যানেজার কাজী দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘হলের ব্যবসা করে তেমন লাভ হয় না। দর্শকরাও আগের মতো সিনেমা হলমুখী নয়। এর চেয়ে শপিং কমপ্লেক্স নির্মাণ করার জন্য ছেড়ে দেয়া হতো তবে আমরা বেনিফিট পেতাম বেশি।’

পূরবী সিমেনা হলও যদি শেষ পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায়, তবে সংস্কৃতির এ শহরে চালু থাকবে শুধুমাত্র শহরের ক্যান্টনম্যান্ট এলাকার ‘সেনানিবাস অডিটোরিয়াম।’

সিনেমা হলের বন্ধের মিছিলের কারণে দর্শকরা নির্মল আনন্দের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ অবস্থায় তারা দাবি জানিয়েছেন ঢাকার পান্থপথের স্টার সিনেপ্লেক্সের আদলে ময়মনসিংহেও সিনেপ্লেক্স নির্মাণের। সবার মতে, চলচিত্রাঙ্গনের স্বার্থেই এ শহরে অন্তত একটি সিনেপ্লেক্স নির্মাণ করা উচিত।

বিনোদন