দেশ যেন আর জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ ও দুর্নীতবাজদের খপ্পরে না পড়ে সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার দলের ৬৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনাসভায় সভাপতির বক্তব্যে শেখ হাসিনা আহ্বান জানান, বাংলাদেশ যেন আর জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ ও দুর্নীতবাজদের খপ্পরে না পড়ে সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী পোশাক শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, “পোশাক শ্রমিকদের পক্ষে তো আমিই কথা বলেছি। তাদের বেতন ভাতা বাড়িয়েছি। কিন্তু তারা কার কথায় রাস্তায় নামছেন; যে কারখানায় তাদের ভাত-কাপড়ের ব্যবস্থা হচ্ছে, সেই কারখানা ভাঙচুর করছেন। কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে তারা চাকরি হারাবেন। পেটের ভাত যোগাড় করতে না পেরে গ্রামে ফিরে যেতে হবে, এটা কি তারা জানেন না? এটা কি ঠিক হচ্ছে?
“গার্মেন্ট শিল্পকে অস্থিতিশীল করতে কারা উস্কানি দিচ্ছে?“–এ প্রশ্নও করেন প্রধানমন্ত্রী।
বিরোধী দলের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “২০০৫ সালে তারা বলেছিল, আওয়ামী লীগ ৩০টি সিটও পাবে না। আমি প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, (প্রধান) বিরোধী দলীয় নেতাও হতে পারব না। কিন্তু ২০০৮ এর নির্বাচনে তার উল্টো হয়েছে। তারাই ২৯টি আসন পেয়েছে। এবার আবারও বলছে, আওয়ামী লীগ নাকি ১০টির বেশি সিট পাবে না। জানি না, এটা তাদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হয়ে যায় কিনা।”
আওয়ামী লীগ সভাপতি দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “মনে রাখতে হবে, জনগণই ক্ষমতার মালিক। আমরা জনগণের কল্যাণে কাজ করি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সৈনিক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।”
আওয়ামী লীগের গৌরবের সুদীর্ঘ ইতিহাস তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার জন্য নানা সময়ে ষড়যন্ত্র হয়েছে, নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন হয়েছে। কিন্তু কেউই কিছুই করতে পারেনি। কারণ, এটা বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দল।“
“আওয়ামী লীগ আসলে হীরার মতো, আওয়ামী লীগ একটা হীরার টুকরো।“—এই মন্তব্য করেশেখ হাসিনা বলেন,“এটাকে যতো কাটা হয়, ততোই যেন এর উজ্জ্বলতা বাড়তেই থাকে।“
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, “আইয়ুব, ইয়াহিয়া, জিয়া, এরশাদএবং আমাদের বিরোধী দলের নেতা (খালেদা জিয়া) সবাই আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে চেয়েছেন। কিন্তু কেউই পারেননি, কারণ আওয়ামী লীগের শিকড় অনেক গভীরে।“
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কুইক রেন্টাল পদ্ধতিতে উৎপাদিত বিদ্যুতের সুবিধা যারা ভোগ করছেন, তারাইআবার উল্টো বলছেন, এতে নাকি দেশের সর্বনাশ হচ্ছে।“
“কিন্তু কোথায় সর্বনাশ হচ্ছে?“–এ প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘মাত্র তিন বছরে আমরা প্রায় ৩ হাজার ৪শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছি। অথচ এটা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে।’’
‘‘আমরা বিদ্যুৎ, কৃষিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভর্তুকি দিচ্ছি। ফলে উৎপাদন বাড়ছে, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সমালোচনা করার আগে তাদের এসবও উপলদ্ধি করা উচিত’’–বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন,‘‘তাই মাঝে মাঝে মনে হয়, যারা বিদ্যুৎ নিয়ে সমালোচনা করছেন, নতুন বিদ্যুৎ যেটা উৎপাদন হয়েছে সেটা সাত দিন বন্ধ রাখলে কি অবস্থা হয় তাদের সেটা দেখানো উচিত।’’
বিগত বিএনপি-জামায়াত চার দলীয জোট সরকার দেশকে মৌলবাদী ও জঙ্গি-কবলিত দেশ হিসেবে পরিচিত করেছিল, সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কাজ করে যাচ্ছি।’’
‘‘দেশে ৫ হাজার ১শ’ ৯৫টি নির্বাচন হয়েছে। সবগুলোই শান্তিপূর্ণ হয়েছে, কোনো সমস্যা হয়নি।“–উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ অন্য কোনো সরকারকে এটা করতে দেখিনি। আমরা করেছি; কারণ আমরা জনগণের জন্য কাজ করি।’’
শনিবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এ সভায় আরো বক্তব্য রাখেন জাতীয় সংসদের উপনেতা ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এমপি, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু এমপি, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি, আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী এমপি, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এমপি, বিশিষ্ট সাংবাদিক রাহাত খান, জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি প্রমুখ।