প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার মানুষের চরিত্র হনন করে: অর্থমন্ত্রী

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার মানুষের চরিত্র হনন করে: অর্থমন্ত্রী

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার মানুষের চরিত্র হনন করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলে অভিযোগ করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত এমপি বলেছেন, এই দু’টি পত্রিকা মানুষের ওপর খবরদারি করে। পত্রিকা দুটির অনেক প্রতিবেদন সঠিক তথ্যের ওপর নির্ভর করে করা হয়না বলেও মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী।

শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে অর্থনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত বাজেটোত্তর এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ভ্যাট আইন সংক্রান্ত ডেইলি স্টারে সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রতিবেদনটি পুরোপুরি ‘রাবিশ’ ও ‘ননসেন্স’। এর তথ্য ঠিক নেই। একই প্রতিবেদনে বিপরীতমুখী তথ্য দিয়ে পত্রিকাটিতে তাও প্রকাশ পেয়েছে।

সংগঠনের সভাপতি খাজা মঈন উদ্দিনের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক মন্ত্রী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান ও এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি আনিসুল হক।

অর্থমন্ত্রী পদ্মা সেতুর বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংকের তোলা দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেন বলেন, ‘‘বিশ্ব ব্যাংক একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের করা অভিযোগে এমন কথা বলছে। তারা গত মে মাসে আমাকে কয়েকটি নাম দিয়ে বলেছেন, তারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। তবে এর স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ বিশ্ব ব্যাংক দেখাতে পারেনি। যেমনটি শেয়ারবাজার নিয়ে খোন্দাকার ইব্রাহীম খালেদের প্রতিবেদনে করা হয়েছে। তিনি তার প্রতিবেদনে বেশ কিছু ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করেছেন। কিন্তু তা অনুমানের ভিত্তিতে। তার ওপর ভিত্তি করে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। তাদের বিরুদ্বে কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই।’’

তিনি আরো বলেন, পদ্মা সেতুর জন্য জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসনে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু কোনো অভিযোগ নেই।

মুহিত বলেন, ‘‘আমি প্রবৃদ্ধির বাড়ার যে ধারাবাহিকতা রয়েছে, তা ভেঙ্গে ফেলতে চাই। তাই এভাবে অনুমান করেছি। তাছাড়া বিবিএস যে প্রাক্কলন করেছে, তা ঠিক হয়নি।’’

দেশে বিনিয়োগ নেই, এমন কথা ঠিক নয় উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বিনিয়োগ বোর্ড আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবে একশ’ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের কথা।

প্রশাসনের সক্ষমতা বেড়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘‘আমাদের প্রশাসনের দক্ষতা ব্যাপক ভাবে বেড়েছে। আগে যেখানে ৮৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট বাস্তবায়ন করতো, এখন  সেখানে ১ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকার বাজেট বাস্তবায়ন করছে। একই চিত্র এডিপি বাস্তবায়নেও।’’

তবে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণে আগামী অর্থবছর একটি রূপরেখা তুলে ধরা হবে বলে জানান মন্ত্রী।

মুহিত বলেন, এছাড়া বাজেট ঘাটতি বিগত ১৫ বছর ধরে নিয়ন্ত্রণে আছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বিশেষ অর্থনৈতিক এলাকার কাজ শুরু হবে।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. বিনায়ক সেন বলেন, ‘‘বাজেটকে উচ্চাভিলাষী বলবো না। তবে ৭ দশমিক ২ শতাংশের যে প্রবৃদ্ধি নির্ধারণ করা হয়েছে, তা অর্জন দুস্কর। আর এ পরিমাণ প্রবৃদ্ধি অর্জনের দরকারও নেই। অর্থনীতির জন্য ২০১৫ সাল নাগাদ সাড়ে সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধিই যথেষ্ট। এছাড়া ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির জন্য যে সুশাসন ও দুর্নীতি রোধ করা দরকার তা নেই।’’

মূল্যস্ফীতি, পরিবহন খরচ বৃদ্ধি এবং বাড়ি ভাড়ার প্রসঙ্গ টেনে এই গবেষক বলেন, ‘‘বর্তমানে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ মানুষ শিক্ষিত মধ্যবিত্ত। তাদেরকে এসব আঘাত করছে। তারা আয়-ব্যয়ের সমন্বয় করতে পারছেন না। দরিদ্রদের জন্য নানা কর্মসূচি আছে। কিন্তু তাদের কি উপায় হবে? ফলে সরকারের সঙ্গে তাদের দূরত্ব তৈরি হচ্ছে।’’

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে একটি কমিশন গঠনের দাবি জানান তিনি। ড. বিনায়ক বলেন, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। জনসংখ্যার দিক থেকে এমন বৃহৎ একটি দেশে একটি বাজেট, একটি মন্ত্রণালয় দিয়ে চলতে পারে না। তাই বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার হাতে নিতে হবে।

ড. মঈন খান বলেন, ভাড়াটে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো অর্থনীতিকে রক্তাক্ত করেছে। এখানে মারাত্মক ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, বাজেটে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতি কমবে। কিন্তু কিভাবে সম্ভব তার নির্দেশনা নেই।

আনিসুল হক ভাড়াটে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পক্ষে মত দিয়ে বলেন, ভাড়াটে বিদ্যুৎ কেন্দ্র না হলে দেশে ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার নেতিবাচক প্রভাব পড়তো। এগুলো অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রেখেছে। যেহেতু বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে না, তাই সরকারকে আরো ভাড়াটে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দিকে যাওয়া উচিত।

বাংলাদেশ