কর্মী ছাঁটাই আতঙ্কে দেশের শীর্ষস্থানীয় মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। যাত্রা শুরুর কয়েক বছরের মধ্যেই লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়া প্রতিষ্ঠানটিতে চলমান এ অবস্থা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানকে আরো লাভজনক করতে ব্যয়সংকোচন নীতি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে গ্রামীণফোন। আর তাই কর্মী ছাটাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ছাটাইয়ের মাধ্যমে গ্রামীণফোন কর্মীদের সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনা হবে বলেও জানা গেছে। এই খাড়ায় অধিকাংশই পড়বেন গ্রামীণফোনের কলসেন্টার কর্মীরা।
গ্রামীণফোন বলছে, গ্রামীণফোনের মাধ্যমে দেশে বিপুল লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এরমধ্যে কিছু অতিরিক্ত জনবলও রয়েছে। নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই অতিরিক্ত এই জনবল কমিয়ে আনা হচ্ছে।
তবে সংশ্লিষ্টরা এবং ক্ষতির মুখে পড়া কর্মীদের মতে– এ ধরণের একমুখী সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে গ্রামীণফোন দেশের প্রচলিত নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না।
এর আগে ২০০৯ সালে একসঙ্গে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কর্মী ছাটাই করে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে গ্রামীণফোন। পরে কর্মীদের আন্দোলনের মুখে তাদের পুনর্নিয়োগের ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে এবার ছাটাইয়ের ক্ষেত্রে গ্রামীণফোন অধিকতর সাবধানতা অবলম্বন করছে বলে জানা গেছে।
সে মোতাবেক, কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে ক্ষতিপূরণ হিসেবে কয়েক মাসের অতিরিক্ত বেতন দিয়ে সমঝোতায় আসার চেষ্টা করছে প্রতিষ্ঠানটি।
এদিকে, ছাটাই আতঙ্কের কারণে বিপাকে পড়েছেন গ্রামীণফোনের পার্টটাইম ও অনিয়মিতকর্মীরা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গ্রাজুয়েশন করা যে তরুণ বা তরুণীরা গ্রামীণফোনে যোগ দিয়ে আশা করেছিলেন, নির্দিষ্ট সময় পার করার পর গ্রামীণফোন তাদেরকে নিয়মিত কর্মী হিসেবে নিয়োগ দেবে, গ্রামীণফোনের পরিকল্পিত ছাটাই যজ্ঞে তাদের সেই আশার গুড়ে বালি পড়তে যাচ্ছে। আর তাই হঠাৎ করেই ‘ছাটাই আতঙ্ক’ তাদের ক্রমশ বিক্ষুব্ধ করে তুলছে।
থার্ড পার্টি!
তবে গ্রামীণফোনের এতো কর্মী ছাটাইয়ের পেছনে আসল কারণ কী? অনুসন্ধানে এর উত্তর মিলেছে। আর তা হলো ‘থার্ড পার্টি’।
জানা গেছে, গ্রামীণফোনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রায় সবাই গ্রামীণফোনের সঙ্গে আলাদা আলাদা ব্যবসায় জড়িত। কেউ গ্রামীণফোনে গাড়ি সরবরাহ করেন, কেউ গ্রামীণফোনের নির্মাণ কাজ করেন, কেউ গ্রামীণফোনের প্রিন্টিংয়ের কাজ করেন, কেউ সাইনবোর্ড-বিলবোর্ড-ব্যানার লেখা আর স্থাপনার ঠিকাদারি করেন। এদেরই একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে মিডিয়া ও বিজ্ঞাপন। যারা প্রত্যেকেই গ্রামীণফোনের নিজস্ব কাজগুলো সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান রাখেন।
জানা গেছে, সম্প্রতি শক্তিশালী এই সিন্ডিকেটের অনেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, গ্রামীণফোনের কাস্টমার সার্ভিসে কল সেন্টার রাখবেন না। যেহেতু বাংলাদেশ সরকার বেসরকারি পর্যায়ে কল সেন্টারের লাইসেন্স দিয়েছে, তাই তারা এই লাইসেন্স নিয়েছেন। এখন তারা গ্রামীণফোনকে প্রস্তাব দিয়েছেন, কম খরচে তারা গ্রামীণফোনের কল সেন্টার পরিচালনা করবেন। অনিয়মিত কর্মীদের বলে দেয়া হয়েছে, যদি ৮ হাজার টাকা বেতনে কল সেন্টারে চাকরি করতে চাও, তাহলে ওই ‘এজেন্সি’র সঙ্গে যোগাযোগ কর। না হলে অন্য কোথাও নিজেদের ঠিকানা খুঁজে নাও।
এদিকে, প্রতিবছর প্রতিষ্ঠানের লাভের একটি অংশ কর্মীদের দেওয়ার কথা থাকলেও বিগত কয়েক বছরে তা দেওয়া হয়নি বলে সূত্র জানিয়েছে।
এব্যাপারে গ্রামীণফোনের হেড অব কর্পোরেট কমিউনিকেশন তাহমিদ আজিজুল হক বলেন, “প্রতিবছর আমাদের কর্মপরিকল্পনার রিডিজাইন হয়। একারণে মাঝে মাঝে কিছু জনবল কমানো হয়। এক্ষেত্রে তাদের যথাযথ মর্যাদা দিয়ে ও আইনকানুন মেনে বাদ দেওয়া হয়। এটাকে ছাটাই বলা যাবে না।”
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক কমিশনের (বিটিআরসি) এক ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা বলেন, “বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রমাণ পেলে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”