দুই মাস আগে যা ধারণা করা হচ্ছিল, বিশ্ব অর্থনীতিতে তার চেয়েও ব্যাপক ও গভীর ক্ষত তৈরি করেছে করোনাভাইরাস মহামারী। এ মন্দার মধ্যে বৈশ্বিক উৎপাদন যতটা সংকুচিত হবে বলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল গত এপ্রিলে পূর্বাভাস দিয়েছিল, এখন তা আরও বেশি সংকুচিত হবে বলে তারা মনে করছে। আইএমএফের পূর্বাভাস সত্যি হলে ১৯৩০-এর দশকের মহামন্দার পর এ বছর সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়তে যাচ্ছে বিশ্ব।
২০১৯ সালে বিশ্বের গড় উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২.৯ শতাংশ। জানুয়ারিতে করোনাভাইরাসের প্রকোপ যখন কেবল চীনে ব্যাপক মাত্রা পেতে শুরু করেছে, তখন আইএমএফ ২০২০ সালে বিশ্বের জন্য ৩.৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল।
কঠোর বিধিনিষেধের মধ্য দিয়ে চীন এপ্রিলের শুরুতে মহামারী পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এলেও ততদিনে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে পুরো বিশ্বে। দেশে দেশে লকডাউনে উৎপাদন ব্যবস্থা কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।
বিশ্ব যে বড় ধরনের মন্দার কবলে পড়তে যাচ্ছে, আইএমএফ এপ্রিলেই সে পূর্বাভাস দিয়েছিল। তখন তারা বলেছিল, ২০২০ সালে বিশ্বের গড় উৎপাদন আগের বছরের তুলনায় ৩.৩ শতাংশ হ্রাস পেতে পারে। আরও দুই মাস পেরিয়ে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এখন বিধিনিষেধ তুলে নিয়ে অর্থনীতির চাকা সচল করার চেষ্টায় আছে। কিন্তু অনেক উন্নয়নশীল ও উদীয়মান অর্থনীতির দেশে ভাইরাস সংক্রমণের গ্রাফ এখনও ঊর্ধ্বমুখী।
গত দুই মাসের লকডাউনের মধ্যে দেশে দেশে উৎপাদন কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার হিসাব করে আইএমএফ এখন বলছে, ২০২০ সালে বিশ্বের গড় উৎপাদন আগের বছরের তুলনায় হ্রাস পাবে ৪.৯ শতাংশ।
১৯৩০-এর দশকের মহামন্দার সময় বিশ্বের উৎপাদন ১০ শতাংশ সংকুচিত হয়ে পড়েছিল। সেই হিসাবে আসন্ন পরিস্থিতিকে ত্রিশের মহামন্দার পর সবচেয়ে বাজে সংকট হিসেবে দেখছে আইএমএফ।
বুধবার প্রকাশিত আইএমএফের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকের জুন আপডেট বলছে, মহামারীর ধকল কাটিয়ে উঠতে পারলে ২০২১ সালে হয়ত উৎপাদন বাড়বে, তবে তার গতি হবে ধীর। এখন তারা আগামী বছরের জন্য ৫.৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিচ্ছে, যদিও এপ্রিলে তাদের প্রাক্কলন ছিল ৫.৮ শতাংশ।
মহামারীর ধাক্কা ২০২১ সালে নতুন করে দেখা দিলে প্রবৃদ্ধি আরও কমবে। আর এই হিসাবও যদি ঠিক থাকে, তাতে দুই বছরে বিশ্ব অর্থনীতিতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে ১২ ট্রিলিয়ন ডলার।
আইএমএফ বলছে, বিশ্বের অনেক দেশ এখন একসঙ্গে তাদের অর্থনীতি সচল করার চেষ্টায় আছে। কিন্তু বিধিনিষেধ এবং সামাজিক দূরত্বের নিয়মের কারণে বিনিয়োগ আর ভোগের পরিমাণে স্বাভাবিকভাবেই বড় ধাক্কা লেগেছে।
এ সংস্থার প্রধান অর্থনীতিবিদ গীতা গোপীনাথ বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা মোটেও বিপদমুক্ত হইনি। দুনিয়াজোড়া লকডাউন থেকে আমরা এখনও পুরোপুরি বের হতে পারিনি। সামনে যে গভীর অনিশ্চয়তা, নীতি নির্ধারকদের সে জন্য অনেক বেশি সজাগ থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, সংকট মোকাবিলায় ধনী দেশগুলো ১০ ট্রিলিয়ন ডলারের প্রণোদনা ঘোষণা করায় এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ক্ষতি প্রশমনের বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ায় বহু কোম্পানি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দেউলিয়া হওয়া এখন পর্যন্ত ঠেকিয়ে রাখা গেছে। কিন্তু সামনের দিনগুলোতে আরও অনেক সহায়তার প্রয়োজন হবে।