‘নতুন গাড়ির দাম কিছুতেই পুরোনো গাড়ির চেয়ে সস্তা হওয়া উচিত নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রণালয়ে এফবিসিসিআই, বিটিএমএ, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সঙ্গে এক বাজেট-উত্তর বৈঠকে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির শুল্কহার প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন।
বৈঠকে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির ওপর শুল্কহার কমানোর দাবি জানিয়ে বলা হয়, বাজেটে ঘোষিত বিধান জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গৃহীত শুল্কায়ন নীতির সঙ্গে সম্পূর্ণ অসঙ্গতিপূর্ণ। রিকন্ডিশন্ড গাড়ির নতুন মূল্যের ভিত্তিতে শুল্ক আরোপ করার কারণে অনেক সময় এর মূল্য নতুন গাড়ির চেয়ে বেড়ে যায়।
জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে রিকন্ডিশন গাড়ির আমদানি কমিয়ে আনা ও এর আমদানি নিরুৎসাহিত করা। এ অবস্থায় শুল্কায়ন পদ্ধতিতে অসঙ্গতি থাকলেও তা এবার বহাল থাকবে। তবে এটা যৌক্তিক করা যায় কি না সেদিকে লক্ষ্য রাখা হবে।”
বাজেট-পরবর্তী এ বৈঠকে এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে আমদানি শুল্ক সংক্রান্ত ১৬ দফা, মূল্য সংযোজন কর সংক্রান্ত ১৪ দফা ও আয়কর সংক্রান্ত ৭ দফা প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়।
এর মধ্যে সকল প্রকার মূলধনী যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ ও কাঁচামালের ওপর ১ শতাংশ হারে শুল্ক নির্ধারণ, ন্যূনতম আয়কর ২ হাজার টাকা বহাল রাখা, ৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত টার্নওভার ট্যাক্স মওকুফ রাখা, বিদ্যমান প্যাকেজ পদ্ধতিতে ভ্যাট প্রদান ও সকল রফতানির ক্ষেত্রে উৎসে কর হার না বাড়িয়ে বিদ্যমান হার বহাল রাখার দাবি জানান ব্যবসায়ীরা।
এফবিসিসিআই সভাপতি এ কে আজাদ সব রফিতানির ক্ষেত্রে উৎসে কর হার না বাড়ানোর সুপারিশ করে বলেন, “মন্দার কারণে রফতানি প্রবৃদ্ধি এবার ৮ শতাংশে নেমে এসেছে। গতবছর এটা ছিল ১৬ শতাংশ। আগামীতে এটা আরো কমবে। দোকান মালিক সমিতির নেতা আমির হোসেন বলেন, ‘টার্নওভার ট্যাক্স আদায়ের যে প্রস্তাব বাজেটে করা হয়েছে, এতে করে সাধারণ পান দোকানদারকেও ২ হাজার টাকা ভ্যাট দিতে হবে। আর নতুন পদ্ধতিতে খুচরা দোকানদারদের পক্ষে যথাযথ ভ্যাট প্রদান সম্ভব নয়। এর আগে ৬০ লাখ টাকা পর্যন্ত টার্নওভার ট্যাক্স মওকুফ রাখা হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ২৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে বিদ্যমান প্যাকেজ পদ্ধতিতে ভ্যাট প্রদান বহাল রাখলে ব্যবসায়ীরা এবার অতিরিক্ত ৩০ শতাংশ ভ্যাট প্রদান করবে বলে জানান তিনি।
ব্যবসায়ীদের বক্তব্যের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ভ্যাট নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে না। তবে ৩০ শতাংশ বর্ধিত হারে প্যাকেজ পদ্ধতিতে ভ্যাট দেওয়ার প্রস্তাবটি গ্রহণ করেন তিনি।
৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত টার্নওভার ট্যাক্স মওকুফ করার দাবির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না দিয়ে তিনি বলেন, “৬০ লাখ টাকা পর্যন্ত টার্নওভার ট্যাক্স মওকুফ করা হয়েছিল শুধু কুটির শিল্পের জন্যে, ট্রেডারদের জন্য নয়।”
বিজিএমইএ সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, “সাম্প্রতিক ঘটনার কারণে পোশাক শিল্প অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে রফতানি আদেশ কমে যাবে। পাশাপাশি মন্দার কারণে পোশাকের মূল্যও কমে গেছে আগের তুলনায়। অন্যদিকে দেশে ব্যাংক ঋণের সুদের হার বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ।”
তিনি আরো বলেন, “টাকার অবমূল্যায়ন পোশাক শিল্পের স্বার্থে করা হয়নি।” এ পরিপ্রেক্ষিতে নতুন বাজার অনুসন্ধানে প্রণোদনা প্রদান ও উৎসে কর হ্রাসের বিষয়টি বিবেচনার অনুরোধ জানান তিনি।
বিজিএমইএ সভাপতির বক্তব্যের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, “বাজেটের পর বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।”