একাত্তরের মানবতা বিরোধী অপরাধে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল-২। আগামী ১৯ জুলাই ওপেনিং স্টেটমেন্ট (সূচনা বক্তব্য) উপস্থাপনের মাধ্যমে মুজাহিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
বৃহস্পতিবার চেয়ারম্যান এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইবুন্যাল মুজাহিদের বিরুদ্ধে ৭ ঘটনায় অভিযোগ গঠন করেন।
সকালে ট্রাইব্যুনাল বসার পর মুজাহিদের বিরুদ্ধে নতুনে একটি অভিযোগ ও নতুন সাক্ষী অন্তর্ভুক্ত করার রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন মঞ্জুর করেন ট্রাইব্যুনাল। এরপর অভিযোগ গঠনের আদেশ দেওয়া শুরু হয়।
এর আগে গত ৫ জুন অভিযোগ গঠনের বিপক্ষে আসামিপক্ষ এবং ২১ মে অভিযোগ গঠনের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি শেষ হয়।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগের মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে গ্রেফতার করা হয়। একই বছর মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লাকে গ্রেফতার করা হয়।
পরে একই বছরের ২ আগস্ট এ ৫ জনকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়।
গত ১৬ জানুয়ারি মুজাহিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ট্রাইব্যুনালে-১ ১০৯ পৃষ্ঠার ৩৪টি বিভিন্ন ঘটনাসহ মোট ছয় হাজার ৬৮০ পৃষ্ঠার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগে মুক্তিযুদ্ধের সময় ফরিদপুরে সাধারণ মানুষকে হত্যা, অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয় মুজাহিদের বিরুদ্ধে। ২৬ জানুয়ারি এ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। বৃহস্পতিবার এর সঙ্গে নতুন একটি অভিযোগ যুক্ত করে অভিযোগ গঠন করলেন ট্রাইব্যুনাল।
প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ এপ্রিল ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক মামলাটি দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করেন।
স্থানান্তরের আগে ট্রাইব্যুনাল-১ এ অভিযোগ গঠনের বিপক্ষে আসামিপক্ষের শুনানি সম্পন্ন হলেও মামলা স্থানান্তরের কারণে নতুন করে শুনানি গ্রহণ করেন ট্রাইব্যুনাল-২।
উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কাজ শুরু করার পর এ পর্যন্ত গ্রেফতারকৃত ৯ জনের মধ্যে এ নিয়ে মোট ৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হলো।
দু’টি ট্রাইব্যুনাল মিলিয়ে মুজাহিদ ছাড়াও জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম, বর্তমান আমির মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা ও মোহাম্মদ কামারুজ্জামান এবং বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরী ও আব্দুল আলীমের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। তাদের মধ্যে সাঈদী ও সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে একমাত্র বিএনপি নেতা আবদুল আলীম শর্তসাপেক্ষে জামিনে থাকলেও অন্যরা কারাগারে আটক আছেন।
এছাড়া গ্রেফতারকৃত জামায়াতের কর্মপরিষদ ও নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তার বিরুদ্ধে ৫ জুলাই তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। অন্যদিকে জামায়াতের সাবেক রোকন মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল-২ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলে তিনি পালিয়ে দেশত্যাগ করেন। তার বিরুদ্ধেও তদন্ত চলছে এবং তদন্ত সংস্থা অগ্রগতি প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে জমা দিয়েছে।