আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এমপি বলেছেন, “আমরা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার নামে কোনো ধর্মীয় সন্ত্রাসী কিংবা ধর্ষণকারীদের আশ্রয় দিতে সীমান্ত খুলে দিতে পারি না। মিয়ানমারে একজন নারীকে ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজ সেখানে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সেখানকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সময়মতো ধর্ষনকারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিলে এতো বড় ঘটনা ঘটতো না।”
আগামী ২৩ জুন আওয়ামী লীগের ৬৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত কর্মসূচির সুষ্ঠু বাস্তবায়ন এবং দলের সাংগাঠনিক কার্যক্রমকে আরো শক্তিশালী করতে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশেষ বর্ধিত সভায় বুধবার তিনি এ কথা বলেন।
ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চের কাজী বশির মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ সভায় সৈয়দ আশরাফ অভিযোগ করেন, মিয়ানমারের এ ঘটনায় বাংলাদেশের জামায়াত দায়ী। তারা যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে আন্তর্জাতিক রাজনীতিকে অস্থিতিশীল করার অংশ হিসেবে মিয়ানমারকে বেছে নিয়েছে।
আশরাফ বলেন, ‘‘মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানির মতো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জামায়াতের কার্যক্রম আছে। কিছু দিন আগে তাদের নাম ছিল জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ। নির্বাচন কমিশন তাদের বর্তমান নাম বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রাখতে বাধ্য করেছে। কিন্তু নাম পরিবর্তন হলেও তাদের কর্মকাণ্ডের পরিবর্তন হয়নি। তারা এবং অন্যান্য মৌলবাদী সংগঠনগুলো চাচ্ছে, ধর্ষণকারী সন্ত্রাসীরা বাংলাদেশে আসুক এবং আশ্রয় নিক।’’
তিনি বলেন, “বিগত সরকারের শাসনামলে বাংলাদেশ সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য ছিল। এখানে উলফা, রোহিঙ্গা, তালেবান ও আল-কায়েদার সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য ছিল। তখন বিশ্বের এমন কোনো সন্ত্রাসী সংগঠন নেই, যার শাখা-প্রশাখা বাংলাদেশে ছিল না।”
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ সকল মানবতার পক্ষের শক্তি, শান্তিপ্রিয় মানুষের বন্ধু। কিন্তু সন্ত্রাসীদের বন্ধু হতে পারে না। তাই যারা একজন নিরীহ নারীকে ধর্ষণ করেছে, বাংলাদেশ তাদের বন্ধু হতে পারে না।”
গার্মেন্টস শিল্পে অস্থিরতায় সাধারণ শ্রমিকদের সংশ্লিষ্টতা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই মালিকদের সঙ্গে কথা বলে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। তাই বেতন-ভাতার জন্য আন্দোলন হচ্ছে না। একটি মহল সেখানে দালাল ও দালালদের নেতা সৃষ্টি করেছে। তারা শ্রমিক নয়, শ্রমিকদের নেতাও নয়। তারা অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ডকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চায়।”
আশরাফ বলেন, “বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। কারণ, তাদের জন্ম ক্যান্টনমেন্টে, যেখানে একমাত্র শাসন বন্দুকের। বিএনপির আন্দোলনের মূল কারণ তারেক-কোকো ও যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানো এবং খালেদা জিয়াকে মামলা থেকে রক্ষা করা।”
বিরোধী দলকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক বাতিলের রায় না মানলে উচ্চ আদালতে গিয়ে বলুন, রায় অবৈধ হয়েছে এবং রিভিউ আপিল করে তা ফিরিয়ে আনুন। আর যদি সেটা না করেন, তবে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে নির্বাচিত হয়ে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনুন।”
বিরোধী দল আন্দোলন স্থগিত করে দেশে ইতিহাস তৈরি করেছে উল্লেখ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, ‘’১০ জুনের মধ্যে সরকারের পতন ঘটানো হবে বলেছিলেন খালেদা জিয়া। এখন তিনি আন্দোলন মুলতবি রেখে সৌদি আরবে চিকিৎসা নিতে গেছেন। একমাত্র বিএনপির দ্বারাই আন্দোলন স্থগিত করা সম্ভব।’’
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের তৃণমূল থেকে কাউন্সিল করার মাধ্যমে সংগঠনকে শক্তিশালী করার আহবান জানিয়ে সৈয়দ আশরাফ বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ কোনোদিন আন্দোলন-সংগ্রামে, যুদ্ধে পরাজিত হয় না।”
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমএ আজিজের সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংগাঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম প্রমুখ।
সভা পরিচালনা করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।