বিমানে চলছে কোটি কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য

বিমানে চলছে কোটি কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে চলছে কোটি কোটি টাকার লেনদেন বাণিজ্য। দৈনিক ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া কর্মীদের অনেকটা জিম্মি করেই বিমানের মানবসম্পদ বিভাগের কতিপয় অসাধু  দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা  জনপ্রতি দুই হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা আদায় করছে।

জীবিকার তাগিদে অসহায় কর্মীরা এই টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছে। আর এদের জিম্মি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বিমানের প্রভাবশালী একটি চক্র। এই নিয়োগ বাণিজ্যের অর্থের একটি বড় অংশ বিমানের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরাও পাচ্ছেন।

কঠিন সব শর্ত দিয়ে এসব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। এই শর্তের একটু ব্যত্যয় ঘটলে চাকরিও হারাতে হয়। অনুসন্ধানে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

এ বিষয়ে বিমান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কেউ এ ধরনের অভিযোগ আনলে বিমান কর্তৃপক্ষ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে। বিমানের এ বক্তব্যের ব্যাপারে ভুক্তভোগী কর্মীরা জানান, যাদেরকে তারা অর্থ দিয়ে চাকরি নেন, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করবে এই সাহস কার?

তবে বছরের পর বছর ধরে অস্থায়ী ভিত্তিতে চাকরি করার কারণে এসব কর্মীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। এ নিয়ে যেকোনো সময় বড় ধরনের কোনো অস্থিরতা তৈরি হতে পারে।

হাজার হাজার টাকা দিয়ে চাকরি পেলেই রেহাই মেলে না বিমান কর্মীদের। শোকজ, পদোন্নতি, বদলি, বিভাগ পরিবর্তনের নামেই আদায় করা হয় বিপুল অংকের টাকা। পদে পদে এদের ওপর চাকরি হারানোর হুমকিও থাকে সারাক্ষণ।

সূত্র জানায়, এই সিন্ডিকেটের প্রধান সদস্য বিমানের একজন পরিচালক। যিনি আবার রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্সে চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন আহমেদের ডানহাত হিসেবে পরিচিত।

বিমান সূত্র জানায়, ২০০৭ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিমানে অতিরিক্ত লোকবল রয়েছে এ অভিযোগ তুলে তা কমানোর নির্দেশণা দেয়। ওই বছরের জুলাই মাসে বিমান স্বেচ্ছায় অবসর প্রকল্পের আওতায় (ভিআরএস) ১৮৭৬ কর্মীকে ছাঁটাই করে। এরপরপরই বিমান ছাঁটাই হওয়া কর্মীদের প্রায় অর্ধেক জনবলকে দৈনিক ভিত্তিতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়। বর্তমানে ক্যাজুয়াল ও ডেইলি
বেসিস (দৈনিক ভিত্তিতে) বিমানের ১৩৬৮ জন কর্মী কাজ করছে।

জীবনের মাঝপথে এসে চাকরি হারানো কর্মীরা খড়কুটো ধরে বেঁচে থাকার মতো তখন দৈনিক ভিত্তিক চাকরিতে যোগ দেওয়াকেই শ্রেয় মনে করেন। বিমানের ফ্লাইট ক্যাটারিং শাখার এক কর্মী নাম না প্রকাশের শর্তে  বলেন, মাঝ বয়সে এসে স্থায়ী চাকরি হারানোর কষ্ট কেউ বুঝবে না। ছেলে মেয়ে নিয়ে বেঁচে থাকতে তখন দৈনিকভিত্তিক নিয়োগেই চাকরি নিতে বাধ্য হই। আর এজন্য বিমানের উচ্চপদস্থদের ঘুষ দিতে হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিমানের মানবসম্পদ বিভাগই এসব নিয়োগ বাণিজ্যের কাজটি সম্পন্ন করে । চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের একটি বড় অংশ কাজ করে বিমানের ফ্লাইট ক্যাটারিং সেন্টারে (বিএফসিসি)। বিএফসিসিতে তিন ধরনের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হয়। ৫৮ জন স্থায়ী বাদে বাকি ৩৩৮ জনই চাকরি করে চুক্তি ভিত্তিতে। এর মধ্যে প্রতি তিন মাস অন্তর, এক বছর অন্তর এবং দুই বছর অন্তর চুক্তি হয় কর্মীদের সঙ্গে।

সূত্র জানায়, বিএফসিসিতে এই নিয়োগ বাণিজ্য চলে মানবসম্পদ বিভাগের আলী নিয়াজের মাধ্যমে। তিনি ১১ বছর ধরে এই পদে কাজ করছেন। আলী নিয়াজ নিজেও চুক্তিভিত্তিক হিসেবে চাকরি করেন। অথচ তিনি এই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাণিজ্যের অন্যতম হোতা।

বিমানের পরিচালক, প্রশাসনের ঘনিষ্ট হওয়ায় তার ব্যাপারে কেউ কথা বলার সাহস করে না। আলী নিয়াজের মতো বিমানের ট্রান্সপোর্ট, কার্গোসহ প্রতিটি বিভাগের মানবসম্পদ বিভাগের মাধ্যমেই নিয়োগ বাণিজ্য চলে।

সর্বশেষ বিএফসিসিতে চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৮০ জনকে। এদেরকে কোনো নিয়মনীতি ছাড়াই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে অর্থের বিনিময়ে। আগে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি, লিখিত পরীক্ষা, সাক্ষাৎকারসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষেই এসব নিয়োগ দেওয়া হতো। কিন্তু সাম্প্রতিককালে নিয়োগ পাওয়া ৮০ জনের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের নিয়মনীতি মানা হয়নি।

বিমানের বক্তব্য:
এ বিষয়ে বিমান কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের মহাব্যবস্থাপক খান মোশাররফ হোসেন জানান, সরকারের নির্দেশনা অনুসারেই বিমানের লোকবল কমানো হয়েছিল। কিন্তু চাহিদা থাকায় পরবর্তীতে ক্যাজুয়াল ও দৈনিক ভিত্তিতে লোকবল নিয়োগ করা হয়। তবে এসব নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অনিয়ম কিংবা আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ সঠিক নয়। আর এর

সঙ্গে বিমানের উচ্চ পর্যায়ের  কেউ জড়িত থাকার প্রশ্নই ওঠে না। কেউ এ ধরনের লেনদেনের অভিযোগও করেনি। আর সত্যিই যদি কেউ এ অভিযোগ বিমান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের গোচরে আনে তাহলে এর বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

বাংলাদেশ