ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারী, অবদান অর্থনীতিতে

ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারী, অবদান অর্থনীতিতে

গত দেড় বছর ধরে পুঁজিবাজারে বিরাজ করছে ব্যাপক অস্থিরতা। এ বাজারে এসে একেবারে নি:স্ব হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। পাশাপাশি পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্রোকারেজ হাউজ এমনটি খোদ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জেরও (ডিএসই) আয় কমেছে ব্যাপকভাবে। তবুও থেমে নেই অর্থনীতিতে পুঁজিবাজারের অবদান।

এক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত তিন বছরে সরকার পুঁজিবাজারে থেকে রাজস্ব পেয়েছে ৬১৯ কোটি টাকা। আর আলোচ্য সময়ের মধ্যে ২০১০-১১ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশী রাজস্ব আদায় হয়েছে। ওই অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩২৫ কোটি ৯১ লাখ টাকা।

এছাড়া গত তিন বছরে ৩৮টি কোম্পানি প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা উত্তোলন করেছে। যে অর্থের একটি বড় অংশ অবদান রেখেছে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি)। যা দেশের অর্থনীতিতে পুঁজিবাজারের অবদানের বিষয়েটি স্পষ্ট করে। কিন্তু, তার পরেও সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে পুঁজিবাজার বিষয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করা হচ্ছে।

২০১০ সালের ব্যাপক ধসে সাধারণ বিনিয়োগকারীর ক্ষতির সম্মুখীন হলেও স্থিতিশীলতা ফেরার আশায় রয়েছেন তারা।

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, গত ২০০৯-১০ অর্থবছরে পুঁজিবাজার থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১২৮ কোটি ১৭ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। ২০১০-১১ অর্থবছরে আদায় হয়েছে ৩২৫ কোটি ৯১ লাখ ১০ হাজার টাকা। চলতি অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত আদায় হয়েছে ১৬৪ কোটি ৯৮ লাখ ৭ হাজার টাকা।

আর চলতি বছরের মে পর্যন্ত পাঁচ মাসে ৯টি কোম্পানি পুঁজিবাজার থেকে ৫৩২ কোটি ৫০ লাখ টাকা মূলধন উত্তোলন করেছে। চলতি বছরে যে কোম্পানিগুলো আইপিওর মাধ্যমে টাকা তুলেছে সেগুলো হচ্ছে জিএসপি ফিন্যান্স, পদ্মা লাইফ, জিপিএইচ ইস্পাত, জিবিবি পাওয়ার, সায়হাম কটন, সাবমেরিন ক্যাবলস, এনসিসি ব্যাংক মিউচুয়াল ফান্ড, আমরা টেকনোলজি ও ইউনিক হোটেল। যা দেশের শিল্প ও ব্যবসা বৃদ্ধিতে পুঁজিবাজারের অবদানের স্পষ্ট প্রতিচ্ছবি।

২০১১ সালে ১৬টি কোম্পানি ৯১০ কোটি ৫৮ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। ২০১০ সালে ১৩টি কোম্পানি এক হাজার ৪০০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এছাড়া ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার বেশী পুঁজিবাজার থেকে তুলেছে। উল্লিখিত সময়ে আইসিবি সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে কয়েকশ কোটি টাকা।

পুঁজিবাজার থেকে দেশের শিল্প কারখানা স্থাপনে বিপুল অর্থ সরবরাহ করা হয়েছে। এত টাকা সরবরাহ করে সার্বিক অর্থনীতিতে ভুমিকা রাখছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এরপরেও সরকার বাজারকে গুরুত্ব দিচ্ছে না বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।

তারা বলছেন, নানা সময়ে প্রণোদনা দিলেও অর্থমন্ত্রীর বিরূপ মন্তব্য বাজারকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলছে।

এবিষয়ে ডিএসই সভাপতি মো. রকিবুর রহমান বলেন, পৃথিবীর কোন দেশ পুঁজিবাজার ছাড়া শিল্প কারখানা গড়ে তুলতে পারছে না। অর্থনীতিতে ব্যাপক ভুমিকা রাখছে সকল দেশেই। বাংলাদেশে সরকার যদি এই বাজারকে সঠিকভাবে ব্যবহার করে তাহলে জিডিপিতে পুঁজিবাজারের ভুমিকা আরও বাড়বে। একই সঙ্গে পুঁজিবাজার ছাড়া কোন দেশের অর্থনীতি বেড়েছে বলে আমার জানা নেই।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি মোহাম্মদ এ. হাফিজ বলেন, দেশের অর্থনীতি ও পুঁজিবাজার একটি অপরটির পরিপূরক। দেশের অর্থনীতির অবস্থা ভালো থাকলে পুঁজিবাজার চাঙ্গা থাকবে। আর এতে করে শিল্প কারখানাসহ উন্নয়নমূলক কাজের জন্য পুঁজিবাজার হতে তহবিল সংগ্রহ সহজ হবে।

দীর্ঘমেয়াদী মন্দার হাত হতে পুঁজিবাজারকে রক্ষায় সরকারকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

অর্থ বাণিজ্য