একটি নির্বাচিত-বেসামরিক সরকারের হাতে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য মিশরের সামরিক বাহিনীর প্রতি আহবান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বেসামরিক সরকারের হাতে দ্রুত ক্ষমতা হস্তান্তরে ব্যর্থ হলে এর প্রভাব যুক্তরাষ্ট্র-মিশর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ওপর পড়বে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে তারা।
সোমবার এ প্রসঙ্গে প্রকাশিত এক বিবৃতি মিশরের শাসনক্ষমতার ওপর সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ সংহত করার প্রচেষ্টায় উদ্বেগ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর এবং পেন্টাগন।
তবে মিশরের সেনাবাহিনীর ক্ষমতা সংহত করার প্রচেষ্টাকে বারাক ওবামার সরকারের জন্য একটি উভয় সঙ্কট হিসেবেই অভিহিত করছেন বিশ্লেষকরা। মোবারক বিরোধী অভ্যূত্থানকে সমর্থন জানালেও মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় স্বার্থেই মিশরের সেনাবাহিনীকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।
গত বৃহস্পতিবার দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের একটি বিতর্কিত রুলিংয়ের ওপর ভিত্তি করে মিশরের নবনির্বাচিত পার্লামেন্টকে বাতিল ঘোষণা করে ক্ষমতাসীন সামরিক পরিষদ। নতুন পার্লামেন্ট নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত দেশের শাসন ক্ষমতার ওপর সেনাবাহিনীর কর্তৃত্ব থাকবে বলেও ঘোষণা করা হয় এসময়।
রোববার রাতে ঘোষিত এই নতুন ডিক্রি অনুযায়ী জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাকেও সীমিত করা হয়েছে। ঘোষণা অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট মিশরের সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হতে পারবেন না।পাশাপাশি মিলিটারি কাউন্সিলের সম্মতি ছাড়া কোনো যুদ্ধ ঘোষণাও করতে পারবেন না তিনি। এছাড়া সামরিক বাজেটের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণও গ্রহণ করেছে সেনাবাহিনী।
এ প্রসঙ্গে মিশরের ক্ষমতাসীন সুপ্রিম কাউন্সিলের উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান সামেহ আশুর বলেন, নতুন প্রেসিডেন্টের মেয়াদ হবে স্বল্প এবং নতুন সংবিধান প্রণয়নের পরই তার দায়িত্ব শেষ হবে।
এদিকে অল্প সময়ের মধ্যেই মিশরের সদ্য সমাপ্ত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ । নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার মূহুর্তে সামরিক বাহিনীর পার্লামেন্ট বাতিল এবং প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা কাটছাট করার ঘোষণাকে দেশটির গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে চরম হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম।
বিচার বিভাগের যোগসাজশে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা কুক্ষিগত করার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে দেশব্যাপী প্রতিবাদ বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে মিশরের প্রধান রাজনৈতিক দল মুসলিম ব্রাদার হুড। তারা সেনাবাহিনীর পার্লামেন্ট বাতিলের ঘোষণাকে একটি অভ্যূত্থান হিসেবে উল্লেখ করে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। উল্লেখ্য, বিলুপ্ত পার্লামেন্টের অধিকাংশ আসনে বিজয়ী হয়েছিলো মুসলিম ব্রাদারহুড।
মিশরের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোও দাবি করছে সামরিকবাহিনী বেসামরিক কর্তৃপক্ষের হাতে ক্ষমতা সমর্পন বাদ দিয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার নতুন খেলা শুরু করেছে।
এদিকে নির্বাচনের ভোট গ্রহণের ২৪ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও এখনও পরিস্কার নয় কে হচ্ছেন মিশরের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট। তবে সোমবার সকালে দেওয়া এক বিবৃতিতে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার দাবি করেছেন নির্বাচনে অংশ নেওয়া মুসলিম ব্রাদারহুড প্রার্থী মোহাম্মদ মুরসি।
বেসরকারি এক হিসাবে ব্রাদারহুড প্রার্থী মোট ৫২ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমও নির্বাচনে ব্রাদারহুডের এগিয়ে থাকার কথা উল্লেখ করেছে।
তবে অপর প্রতিদ্বন্দ্বী আহমেদ শফিক ব্রাদারহুডের জয়লাভের ঘোষণাকে প্রত্যাখ্যান করে ব্রাদারহুড প্রার্থীকে ক্ষমতা জবরদখলের চেষ্টার দায়ে অভিযুক্ত করেছেন। উল্লেখ্য, গণঅভ্যূত্থানের সময় প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আহমেদ শফিক। তাকে মোবারকের অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সেনাবাহিনীর গোপন প্রার্থী হিসেবেও তাকে অভিহিত করেন মিশরের অনেকেই।