ইউক্রেনের পরাজয়ে হাজার হাজার হৃদয় খান খান হয়েছে। চোখের জল ফেলেছেন কতজন তার ইয়াত্তা নেই। ওয়েন রুনি গোল দেওয়ার পর লাখ লাখ মানুষের মনের কান্না কেউ দেখতেও পায়নি।
চোখ জুড়ানো ফুটবল খেলেও ইংলিশদের কাছে ১-০ গোলে হেরে গিয়ে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় দেন ইউরোর সহ-আয়োজক ইউক্রেন। ইংল্যান্ডের জয়ের সুফল পেলো ফ্রান্সও। ‘ডি’ গ্রুপের শেষ ম্যাচে সুইডেনের কাছে ২-০ গোলে হেরেও কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের সঙ্গী হয়েছে ফ্রান্স।
‘ডি’ গ্রুপের শীর্ষ দল হিসেবে কোর্টার ফাইনালে উন্নীত হয়েছে ইংল্যান্ড। তিন খেলায় দুই জয় আর এক ড্র মিলে তাদের পয়েন্ট সাত। কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের প্রতিপক্ষ ইতালি। এক জয় আর এক ড্র মিলে তিন খেলায় ফ্রান্সের অর্জন চার পয়েন্ট। গ্রুপ রানার্সআপ হিসেবে কোয়ার্টার ফাইনালে ‘সি’ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন স্পেনকে পেয়েছে ফ্রান্স। শীর্ষ আটের লড়াইয়ে ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্স প্রবল প্রতিপক্ষকেই পেয়েছে। ইতালি চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর স্পেন ইউরো এবং বিশ্বকাপের বর্তমান চ্যাম্পিন।
কোয়ার্টার ফাইনালে খেলতে হলে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জিততেই হতো ইউক্রেনকে। জিতলে ছয় পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে পরের রাউন্ডে যেতো আয়োজক দেশ। ড্র হলে হেড-টু-হেডে এগিয়ে থেকে ফ্রান্সই শীর্ষ আটের টিকিট পেতো। গ্রুপের আরেক দল সুইডেনের কাছে কোন পয়েন্ট ছিলো না থাকায় শেষ ম্যাচের জয়ে তাদের ভাগ্যের হেরফের হয়নি।
হারলেও যে ছন্দময় ফুটবল খেলেছে ইউক্রেন তা বহুদিন মনে থাকবে ইংলিশদের। শুরুর ৪৫ মিনিট চোখ ধাধানো খেলা উপহার দিয়েছে দর্শকদের। প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগ তছনছ করেছে অনেক বার। যদিও জো হার্টকে ফাকি দিয়ে গোল আদায় কারতে পারেনি। পরের অর্ধে ইংল্যান্ড গুছিয়ে নিলেও চোখ জুড়িয়েছে স্বাগতিকদের খেলা। ভালো খেলেও হারের রেকর্ডে মঙ্গলবার যোগ হলো ইউক্রেনের নাম।
প্রথম ১০ মিনিট ৫৬ ভাগ বলের দখল রেখেছে ইউক্রেন। সে ধারায় খেলেছে বিরতির আগ পর্যন্ত। ২১ মিনিটে ২২ গজ দূর থেকে বাঁপায়ে তীব্র শট নিয়েছিলেন ইউক্রেনের ফরোয়ার্ড ওলেগ গাসেভ। বল ওপর দিয়ে বেরিয়ে না গেলে ব্যবধান হয়ে যেতো।
২৮ মিনিটে রুনি গোল পোস্টের খুব কাছে ছিলেন। ফ্রি কিক থেকে উড়ে আসা বলে মাথা ছোঁয়ালে তা বেরিয়ে যায় সাইড পোস্টের কাছ দিয়ে। একটু দেখে নিলে গোলের ঠিকানা পেলেও পেতে পারতো ইংল্যান্ড।
তবে ইউক্রেন সুবর্ণ সুযোগ হাত ছাড়া হয় ৩০ মিনিটে। মিলিয়েভস্কি ডানে বল বাড়িয়ে দিয়েছিলেন এন্ড্রি ইয়ারমোলেঙ্কোর উদ্দেশ্যে। ভেতরে কাট করে গড়ানো শট নিয়েছিলেন ইয়ারমোলেঙ্কো। কিন্তু গোলরক্ষক জো হার্ট নিজের ডানদিকে ঝাপিয়ে বলে নিয়ন্ত্রণ নেন।
দারুণ গতিতে খেলতে থাকে ইউক্রেন। ইংল্যান্ড তাদের সঙ্গে পাল্লা দিতে হিমশিম খায়। ৪৩ মিনিটে ইয়ারমোলেঙ্কোর প্রায় গোল করে ফেলেছিলেন। হতে হতেও গোল হয়নি প্রথমার্ধে।
পরের অর্ধের শুরুতে চাপিয়ে খেলে ইংল্যান্ড। ৪৮ মিনিটে ডান দিক থেকে আসা বল গোলরক্ষক মিস করলে সুযোগসন্ধানী ওয়েন রুনি হেডে গোল করেন। স্টিভেন গেরার্ড ডানদিক থেকে ক্রস শট নিলে তা ইউক্রেনের ডিফেন্ডারের পায়ে বাঁধাপ্রাপ্ত হয়ে গোলরক্ষকের হাতের নিচ দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু সুযোগসন্ধানী রুনি দূরে পোস্ট দিয়ে হেডে বল পাঠিয়ে দেন জালে।
৬১ মিনিটে গোল পোস্টের খুব কাছে দিয়ে হেডে বল বাইরে পাঠিয়ে দেন মিলিয়েভস্কি। কিন্তু জন টেরি যেভাবে গোল লাইনের ভেতর থেকে ইউক্রেনের শট থামিয়েছেন তা বিস্ময়কর। বল গোল লাইন অতিক্রম করলে ব্যাক ভলিতে ক্লিয়ার করেন। ছয় গজ দূরে থেকেও সহকারী রেফারি তা দেখতে পাননি! গোলের সংকেত না দিয়ে খেলা চালিয়ে যাওয়ার সংকেত দিলেন রেফারিকে। এরপরেও অনেকবার ইংল্যান্ডের গোলে হানা দিয়েছিলো ইউক্রেন। তাতে হবে কী? ভাগ্য দেবী তো আগে থেকেই তাদের কপালে হার লিখে রেখেছেন।