বিচারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার ভার প্রধান বিচারপতির ওপর ছাড়লেন স্পিকার

বিচারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার ভার প্রধান বিচারপতির ওপর ছাড়লেন স্পিকার

স্পিকার ও সংসদ সম্পর্কে ‘অনভিপ্রেত’ ও ‘দু:খজনক’ মন্তব্যকারী হাইকোর্টের বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া-না নেওয়ার ভার প্রধান বিচারপতির ওপর ছেড়ে দিয়েছেন স্পিকার আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট।

একই সঙ্গে সংসদে ওই বিচারপতির বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের দাবি প্রত্যাহারের জন্য সংসদ সদস্যদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন স্পিকার। এছাড়া সংসদ ও স্পিকার সম্পর্কে করা বিচারপতির মন্তব্যকে ‘অসৌজন্যমূলক’ এবং ‘ব্যক্তিগত আক্রমণপ্রসূত’ উক্তি বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

“এদেশ পাকিস্তান নয়,বাংলাদেশ“–এ মন্তব্য করে স্পিকার বলেন, ‘‘রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের মধ্যে রয়েছে ৪০ বছর ধরে গড়ে ওঠা গভীর সম্প্রীতি ও আস্থার সম্পর্ক। পারস্পরিক এ সুসম্পর্কের কারণেই অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এদেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে।’’

সোমবার জাতীয় সংসদের অধিবেশন শুরুর পরপরই স্পিকার তার রুলিংয়ে এবিষয়ে তার বিস্তারিত অবস্থান তুলে ধরেন।

উল্লেখ্য, গত ৫ জুন সংসদে তিন দিনের মধ্যে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে বিচারপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান সংসদ সদস্যরা। একই সঙ্গে তাকে সংসদ ও স্পিকারের কাছে ক্ষমা চাওয়ার কথাও বলা হয়। এছাড়া তার বিরুদ্ধে সংসদে নিন্দাপ্রস্তাব আনার দাবি জানান এমপিরা।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে স্পিকার বিষয়টি নিয়ে রুলিং দেন। এ সময় বেশ কয়েকজন এমপি ‘শেম শেম’ বলে চিৎকার করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে অনুপস্থিত ছিলেন। তবে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। তিনিও অন্যান্য এমপিদের সঙ্গে রুলিংয়ের সময় টেবিল চাপড়ে সমর্থন দেন।

স্পিকার যা বলেন

রুলিংয়ে স্পিকার বলেন, ‘‘গত ২৯ মহান এ সংসদে কয়েকজন মাননীয় সংসদ সদস্যের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আমি কিছু কথা বলেছিলাম। আমার বক্তব্যের বিষয় ছিল মূলত সংসদ, আদালত ও নির্বাহী বিভাগের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক এবং তাদের কল্যাণ সাধন। মাননীয় সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতেই তাৎক্ষণিকভাবে কিছু সাধারণ মন্তব্য করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে গত ৫ জুন ইন্টারনেট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় এ মর্মে সংবাদ পরিবেশিত হয় যে, হাইকোর্ট বেঞ্চের একজন মাননীয় বিচারপতি আমার বক্তব্যকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল’ বলে মন্তব্য করেছেন এবং আমার ও জাতীয় সংসদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ ও অনাকাঙ্ক্ষিত মন্তব্য করেছেন। ওই দিনই সিনিয়র কয়েকজন মাননীয় সদস্য পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে এ বিষয়ে সংসদের সার্বভৌমত্ব রক্ষাকল্পে ওই মাননীয় বিচারপতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, এমনকি সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে তাকে অপসারণের দাবি জানিয়ে বক্তব্য রেখেছিলেন।’’

স্পিকার বলেন, ‘‘উপস্থিত সকল মাননীয় সদস্য ওই বক্তব্য ও দাবিকে সমর্থন করেন, যা গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে। ওইদিন স্পিকারের দায়িত্ব পালনরত মাননীয় ডেপুটি স্পিকার এ বিষয়ে আমার সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আপনাদের জানিয়েছিলেন।’’

সাংমদদের উদ্দেশ্যে তিনি আরো বলেন, ‘‘স্পিকার তথা সংসদকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সংবিধানের ৭৮(১) অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন না করা, সংসদের সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং সংসদকে বিতর্কের উর্ধ্বে রাখার জন্যে সেদিন আপনারা এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন এবং বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করেছিলেন। বস্তুত সেই মুহূর্তে সেটাই স্বাভাবিক ছিল। আপনাদের এ সেন্টিমেন্টকে (ভাবাবেগকে) আমি শ্রদ্ধা করি। আপনাদের প্রতি জানাই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।’’

মাত্রা অতিক্রমকারী বক্তব্য পরিহারে যথাযথ পদক্ষেপ নেননি

রুলিংয়ে স্পিকার আরো বলেন, ‘‘রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের মধ্যে আন্ত:সম্পর্ক ও সমন্বয়, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, যথাযথ চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স গড়ে তোলার জন্য পৃথিবীর অনেক দেশ শত শত বছর নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছে। কারণ, আমরা সবাই অবগত যে, ‘ডেমোক্রেসি ইজ নট এ সিস্টেম অনলি, ইট ইজ এ কালচার টু ( গণতন্ত্র স্রেফ একটা পদ্ধতি নয়, এটা এক সংস্কৃতিও বটে) ।’ আমরাও এই মহান সংসদে সেই গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি অর্জনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আর তাই কিছুদিন আগে আমাদের দেশের একজন অধ্যাপক, বরেণ্য শিক্ষাবিদ আব্দুল্লাহ্ আবু সায়ীদের বিষয়ে সংসদে কিছু আলোচনা হয়েছিল। যখনই সংসদের কাছে তার বক্তব্য সম্পর্কিত সঠিক ব্যাখ্যা গোচরিভূত হয়, তখনই সংসদ এ ব্যাপারে দুঃখ প্রকাশ করেছে। অপ্রয়োজনীয় অংশ এক্সপাঞ্জ করেছে। আমাদের প্রত্যাশা ছিল, মাননীয় বিচারপতি পুরো বিষয়টি হৃদয়ঙ্গম করবেন এবং মাত্রা অতিক্রমকারী বক্তব্য পরিহারে যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন। কিন্তু তিনি তা করেননি।’’

আলোচনা-সমালোচনা সত্যিই দু:খজনক

স্পিকার বলেন, ‘‘আমার বক্তব্যকে কেন্দ্র করে মহামান্য হাইকোর্টের মাননীয় বিচারপতি যে বিষয়গুলোর অবতারণা করেছেন এবং পরবর্তী সময়ে এ নিয়ে যে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে, তা সত্যিই দু:খজনক এবং অনভিপ্রেত। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম, এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেবো না বা মন্তব্য করবো না। সবাই স্বীয় বিবেচনায় বিষয়টি অনুধাবন করবেন। কিন্তু পরে দেখলাম, এটির সঙ্গে আমার ও মহান সংসদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। আমার অবস্থান স্পষ্ট না করলে মহান সংসদ এবং আমার সম্পর্কে অনেকেরই ভুল ধারণা থেকে যেতে পারে। শেষে ঠিক করেছি, এ বিষয়ে আমি আমার বক্তব্য স্পষ্ট করবো।’’

তিনি বলেন, ‘‘সেদিন অর্থাৎ ২৯ মে মাননীয় সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলম সংসদে সড়ক বিভাগের অফিস অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য সময় বৃদ্ধির বিষয়টি মাননীয় আইনমন্ত্রীর নজরে আনার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। আমি বলেছিলাম, মাননীয় আইনমন্ত্রী নেই। থাকলে হয়তো তিনি ব্যাপারটি দেখতেন। এরপর আমি যে কথাগুলো বলেছি তার সারমর্ম হচ্ছে, মহামান্য আদালতের প্রতি আমাদের সবার শ্রদ্ধা আছে। আদালত সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ। সড়কভবনের বিষয়টি একটি স্পর্শকাতর বিষয়। রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগ একে অপরের পরিপূরক। এগুলো একটি আরেকটিকে সহযোগিতার জন্য রয়েছে। হঠাৎ এ ভবনকে সরিয়ে নিলে এর কার্যক্রম প্যারালাইজড হয়ে যাবে, যা সরকারকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এ বিষয়গুলো যেন মহামান্য আদালত বিচার বিবেচনা করেন, সে অনুরোধটুকু সেদিন করেছিলাম। শেষে রাষ্ট্রের সকল অঙ্গের মধ্যে সহযোগিতার মনোভাব রাখার কথা বলে এ পর্যায়ে আমার বক্তব্য শেষ করি।’’

বিচারপতি বিজ্ঞতার পরিচয় দেননি

স্পিকার বলেন, ‘‘ওইদিন পরে মাননীয় সংসদ সদস্য মইন উদ্দীন খান বাদল আদালত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বক্তব্য রাখলে আমি হাস্যচ্ছলে বলেছি, আমার স্পিকারশিপের মেয়াদ শেষ হলে আমাকে আবার কালো কোট পরে কোর্টে যেতে হবে। সুতরাং হিসাব করে কথা বলতে হয়। আবার না কোনো সমস্যায় পড়ে যাই! মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে রিলিফ নাও পেতে পারি। এরপর গণমানুষের কাছে সবার জবাবদিহিতার বিষয়টি তুলে ধরতে গিয়ে বলেছিলাম, সংসদে সংসদ সদস্যরা যে আইনগুলো পাস করেন, সেগুলো যদি জনগণের বিরুদ্ধে যায়, তাহলে শেষ পর্যন্ত জনগণ আমাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারে। কোর্টের বিচারে যদি দেশের মানুষ ক্ষুদ্ধ হন, তাহলে বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে মানুষ একদিন হয়তো রুখে দাঁড়াতে পারেন। একইভাবে যদি কোনো সরকার স্বৈরাচারী আচরণ করে, সে ক্ষেত্রে জনগণের রুখে দাঁড়ানোর ইতিহাস আছে। সবাইকে চিন্তা-ভাবনা করে চলা প্রয়োজন।’’

নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে স্পিকার আরো বলেন, ‘‘আত্মঅহমিকা বিসর্জন দিয়ে দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করার কথা বলেছি। কোনো আদালত বা কোনো মামলা বা কোনো বিচারপতিকে উদ্দেশ্য করে কোনো কথা বলা হয়নি। মূলত রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের কাজে কোনো ব্যত্যয় ঘটলে কি হতে পারে তারই একটা ধারণার কথা বলেছি।’’

বিচারপতি সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন

স্পিকার আরো বলেন, ‘‘২৯ মে সংসদে আমার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ৫ জুন হাইকোর্টের একজন মাননীয় বিচারপতি সংবিধানের ৭৮(১) অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করে সংসদ সম্পর্কে, আমার সম্পর্কে যেসব মন্তব্য করেছেন তা কোনো বিবেকবান মানুষ উচ্চারণ করতে পারেন কিনা, আমার সন্দেহ রয়েছে। প্রথমেই তিনি বলেছেন, আমার বক্তব্য ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল’। আমার উপরোক্ত কথাগুলোর কোনটি রাষ্ট্রদ্রোহিতার পর্যায়ে পড়ে, তা আমার বোধগম্য নয়। রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ উত্থাপনের আগে রাষ্ট্রদ্রোহিতা কি, কোন কোন কাজ রাষ্ট্রদ্রোহিতার পর্যায়ে পড়ে, রাষ্ট্রদ্রোহিতার বিষয়টি কে নির্ধারণ করতে পারেন, এসব বিষয় গভীরভাবে চিন্তা করলে বিজ্ঞ বিচারপতি তার বিজ্ঞতার পরিচয় দিতেন।’’

আমার জ্ঞান, মেধা, যোগ্যতা ও আইনজীবী সনদ নিয়ে কটাক্ষ করা হয়েছে

স্পিকার বলেন, ‘‘পত্রিকার মাধ্যমে জেনেছি, ওইদিন আদালতের বিচারক বলেছেন- ‘আদালত স্বাধীনভাবে কাজ করছেন। বিচার বিভাগের কাজে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের কোনো চাপ নেই। অথচ স্পিকার সংসদে বলেছেন, আইনমন্ত্রী উপস্থিত থাকলে সড়ক ভবনের সম্পত্তির বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে তাকে বলা যেত। তাহলে কি স্পিকার মনে করেন, আইনমন্ত্রীর নির্দেশে বিচার বিভাগ চলে?’ বিজ্ঞ বিচারপতি আমার বক্তব্য ভালোভাবে না শুনে বা না পড়ে যে মন্তব্য করেছেন, তাতে তিনি তাঁর বিজ্ঞতার পরিচয় দিতে সমর্থ হননি বলে মনে হয়।’’

স্পিকার বলেন, ‘‘আসলে ওইদিন মাননীয় সংসদ সদস্য স্পিকারের মাধ্যমে মাননীয় আইনমন্ত্রীর কাছে সড়কভবন সরিয়ে নেবার জন্য সময় প্রদানের বিষয়টি উত্থাপন করতে চেয়েছিলেন। মাননীয় আইনমন্ত্রী তখন সংসদে উপস্থিত না থাকায় আমি বিষয়টি সংসদকে অবহিত করি এবং বলি ‘থাকলে হয়তো তিনি ব্যাপারটা দেখতেন’। এটুকুই বলেছি। এখানে আইনমন্ত্রীকে সড়ক ভবনের বিষয়ে ব্যবস্থা নেবার জন্য বলেছি- এ ধরনের কোনো কথা বলিনি।

স্পিকার বলেন, ‘‘আমার জ্ঞান, মেধা, যোগ্যতা ও আইনজীবী হিসেবে আমার সনদ নিয়ে কটাক্ষ করা হয়েছে। আমি প্রায়শই বলি, আমি কম লেখাপড়া জানা মানুষ। রাজনীতির পাশাপাশি আইনজীবী হিসেবে দীর্ঘ ৩৭ বছর কাজ করেছি। সুপ্রিম কোর্ট বারের সদস্য হিসেবে হাইকোর্টে প্র্যাকটিস করেছি। সাবেক মাননীয় প্রধান বিচারপতি এম এম রুহুল আমিন, এ বি এম খায়রুল হক ও বর্তমান মাননীয় প্রধান বিচারপতির আদালতে আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি।’’

তিনি বলেন, ‘‘তবে স্পিকার হিসেবে আমি একক কোনো সত্তা নই। এ সংসদের অনেক সদস্য আছেন, যারা লেখাপড়ায় উচ্চ শিক্ষিত, জ্ঞান গরিমায় আমার চেয়ে অনেক সমৃদ্ধ। তারপরও সরকারি দল, বিরোধী দল ও অন্যান্য দল আমাকে সর্বসম্মতিক্রমে স্পিকার নির্বাচিত করেছেন। আমার জ্ঞান, যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তা সংসদের সকল মাননীয় সদস্যের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এ ধরনের উক্তি করার আগে বিজ্ঞ বিচারক আরো গভীরভাবে চিন্তা করলে ভালো করতেন। বিজ্ঞ বিচারক আরো অনেক বিষয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছেন, যা আমি এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন মনে করছি না।’’

এদেশ পাকিস্তান নয়, বাংলাদেশ

স্পিকার বলেন, ‘‘আদালতের মাননীয় বিচারপতির মন্তব্যের সূত্র ধরে অনেকেই বিশেষ করে পত্র-পত্রিকাগুলো একে সংসদের সঙ্গে বিচার বিভাগকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে মর্মে উল্লেখ করেছেন। সংসদ ও বিচার বিভাগের মধ্যে আসলে এটি কোনো বৈরিতা নয়। এটি সংসদ সম্পর্কে জনৈক মাননীয় বিচারপতির কিছু ‘অসৌজন্যমূলক মন্তব্য’ এবং ‘ব্যক্তিগত আক্রমণপ্রসূত উক্তি’। পুরো বিচার বিভাগকে এর সঙ্গে জড়ানো ঠিক হবে না। আমাদের সকলকে মনে রাখতে হবে, বর্তমানে এদেশ পাকিস্তান নয়, বাংলাদেশ। আবারো বলছি, বাংলাদেশ।’’

তিনি বলেন, আমি একজন সংসদ সদস্য হিসেবে এবং স্পিকার হিসেবে সব সময় বিশ্বাস করি রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ- আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগ একে অপরের পরিপূরক এবং প্রত্যেকে নিজ নিজ ক্ষেত্রে স্বাধীন। এক্ষেত্রে  কর্মপদ্ধতি ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে এক  এবং তা হলো সর্বাবস্থায় জনগণের কল্যাণ সাধন। দেশ ও জাতির কল্যাণে এ সম্পর্ক আরো অটুট হোক- এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা।’’

সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব প্রত্যাহারের আবেদন

স্পিকার বলেন, ‘‘গত ৫ জুন মাননীয় সংসদ সদস্যরা তাদের ক্ষোভ প্রকাশের এক পর্যায়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে ওই মাননীয় বিচারপতিকে অপসারণের দাবি জানিয়েছিলেন এবং এ বিষয়ে একটি রেজুলেশন গ্রহণ করে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বরাবর পাঠানোর প্রস্তাবও দিয়েছিলেন। আপনাদের প্রস্তাবকে আমি সমর্থন করে বিনীতভাবে বলতে চাই, একজন বিচারকের অশোভন আচরণ রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের মধ্যে বিদ্যমান সুসম্পর্ককে ব্যাহত করতে পারে না।’’

তিনি বলেন, ‘‘এ মহান সংসদের অভিভাবক হিসেবে আরো বলতে চাই, আমরা ষোল কোটি জনগণের প্রতিনিধিরা একজন ব্যক্তিবিশেষের আচরণ দিয়ে পুরো বিচার বিভাগকে মূল্যায়ন করতে পারি না। আপনারা সবাই সিদ্ধান্ত নিলে আমার জন্য তা বাধ্যতামূলক হয়ে যায়। সার্বিক বিবেচনায় যেহেতু এ ধরনের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ সমীচীন হবে বলে আমি মনে করি না, তাই আমি বিনীতভাবে অনুরোধ করবো সংসদে আপনাদের উত্থাপিত প্রস্তাবটি আপনারা আমার সাথে একমত হয়ে প্রত্যাহার করবেন।’’

বাংলাদেশ