সরকারের অনুমতি না নিয়ে অযাচিতভাবে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় যাওয়ায় বাংলাদেশে ইউএনএইচসিআর প্রতিনিধি ক্রেইগ স্যান্ডার্সকে সতর্ক করে দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা এ তথ্য জানান।
ক্রেইগ স্যান্ডার্স সোমবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতিসংঘ অণুবিভাগের মহাপরিচালক সাদিয়া মোনা তাসনিমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রায় এক ঘণ্টাকাল স্থায়ী হয় তাদের বৈঠক।
এসময় জাতিসংঘ অণুবিভাগের মহাপরিচালক সাদিয়া মোনা তাসনিম তাকে সরকারের পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে সতর্ক করে দেওয়া হয় এবং অনুরূপ কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেন।
সরকারকে না জানিয়ে সম্প্রতি(১৫-১৭ জুন) মি. স্যান্ডার্স অযাচিতভাবে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্ত এলাকা সফর করেন।
একইসঙ্গে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকার বাংলাদেশ প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, বিদেশি কোনো পরিদর্শক যেন ঐ এলাকায় না যান সেদিকে কড়া নজর রাখতে। নিরাপত্তার কারণে এ নির্দেশ দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার ইউএনএইচসিআর এর অ্যাসিসট্যান্ট হাইকমিশনার ফর প্রটেকশন মিজ এরিকা ফেলার ঢাকায় আসছেন। তবে এটি তার পূর্ব নির্ধারিত সফর বলে জানিয়েছেন মহাপরিচালক সাদিয়া মোনা তাসনিম।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। তারা বলছে, এ বাবদে প্রয়োজনে বাংলাদেশকে অর্থসাহায্য দেয়া হবে।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, প্রতিউত্তরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চাপ প্রয়োগকারী পক্ষগুলোকে স্পষ্ট বলে দিয়েছে, সংশ্লিষ্ট দেশ বা সংস্থাগুলো যেন সম্ভব হলে জাহাজযোগে নিজ নিজ দেশে রোহিঙ্গাদের মাইগ্রেশন করায়। এমনিতেই দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গা সমস্যায় জর্জরিত বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ওপর নতুন করে রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা চাপিয়ে দেওয়ার কোনো যুক্তি নেই।
এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্যটি ছিল: “আপনারা পারলে জাহাজযোগে নিজ নিজ দেশে রোঙ্গিগাদের মাইগ্রেশন করান, আশ্রয় দিন। অথবা মিয়ানমার সরকারকে তাদের দেশে চলমান সমস্যাটি সমাধান করপার জন্য চাপ দিন।“
উল্লেখ্য, ১৯৫১ সালের শরণার্থী কনভেনশন বা এ সংক্রান্ত `৬৭ সালের প্রটোকলে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করেনি। ফলে সীমান্ত খুলে শরণার্থীদের ঠাঁই দিতে বাংলাদেশ বাধ্য নয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, শিগগিরই ঢাকার সব দূতাবাস-প্রধানকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান পরিষ্কার করা হবে।
১৯৯১ সাল এমনকি তারও আগে থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ শুরু হয়। বিশেষ করে ১৯৯৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে প্রায় আড়াই লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে।
পরে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনার পর ১৯৯৪ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ২ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী স্বদেশে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু বিভিন্ন অজুহাতে মিয়ানমার প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়ায় বিঘ ঘটায়। এর ফলে বিগত ৭ বছর ধরে রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটি বন্ধ রয়েছে।
বতর্মানে বাংলাদেশে কয়েকটি শরণার্থীশিবিরে প্রায় ২৯ হাজার নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, হিউম্যান রাইট্স ওয়াচসহ কোনো মানবাধিকার সংগঠনের কাছে নয়, বাংলাদেশ শুধু জাতিসংঘের হিউম্যান রাইট্স কাউন্সিলেই শরণার্থী বিষয়ক প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রস্তুত।