যুক্তরাজ্য সরকার স্পাউস বা ফ্যামিলি ভিসার ক্ষেত্রে অভিবাসন আইনের আর্টিকেল-৮ এর আওতায় নেয়া বহুল আলোচিত নতুন নীতিমালা আগামী ৯ জুলাই থেকে কার্যকর করতে যাচ্ছে। এর ফলে অন্য দেশ থেকে যুক্তরাজ্যে স্বামী বা স্ত্রীকে নিয়ে যাবার পথ প্রায় রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।
ইউকে বর্ডার এজেন্সির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
নন-ইইউ অধিভুক্ত দেশগুলোর অধিবাসীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নতুন এ শর্তারোপকে যুক্তরাজ্যের ফ্যামিলি ভিসার ক্ষেত্রে স্মরণকালের সবচেয়ে কঠোর নীতিমালা হিসেবে মনে করছেন খোদ অভিবাসন আইনজীবীরাও।
নতুন এ নীতিমালার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবেন বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিকরা।
এদিকে, অভিবাসনের ক্ষেত্রে নীতিমালা কার্যকর করার খবরে দ্বিতীয় লন্ডন খ্যাত সিলেটজুড়ে যুক্তরাজ্য প্রবাসী পরিবারগুলোর মধ্যে হতাশা নেমে এসেছে। এতদিন শোনা যাচ্ছিল, নতুন নীতিমালা ২০১৩ সালে কার্যকর হবে।
ইউকে বর্ডার এজেন্সি (ইউকেবিএ)-র অফিসিয়াল ওয়েবসাইট সূত্রে জানা গেছে,‘‘ আগামী ৯ জুলাই থেকে নন ইইউ অধিভুক্ত দেশগুলো থেকে যেসব ব্রিটিশ নাগরিক তাদের স্ত্রী বা স্বামীকে যুক্তরাজ্যে নেওয়ার জন্য ফ্যামিলি ভিসার আবেদন করবেন তারা এ নীতিমালার আওতাভুক্ত হবেন।
নতুন নীতিমালায় যুক্তরাজ্যে স্বামী বা স্ত্রীকে নেওয়ার আবেদন করতে হলে আবেদনকারীর ন্যুনতম বার্ষিক আয় হতে হবে ১৮ হাজার ৬০০ পাউন্ড। আর এক সন্তানের ক্ষেত্রে স্পন্সরের আয় হতে হবে ২২ হাজার ৪০০ পাউন্ড। একাধিক সন্তানের ক্ষেত্রে সন্তানপ্রতি আরো ২৪০০ পাউন্ড বর্ধিত আয়ের শর্ত যুক্ত হবে স্পন্সরের জন্য।
নতুন নীতিমালায় আরো বলা হয়েছে, মূলত ভুয়া বিয়ে বন্ধ করতেই এ কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া স্পাউসের যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণকালীন সময়ের মেয়াদও বাড়ানো হচ্ছে। এছাড়া ভিসা প্রত্যখ্যাতদের আপিলের ক্ষেত্রেও আনা হচ্ছে পরিবর্তন। খর্ব করা হয়েছে আপিলের পূর্ণ অধিকারও।
ইমিগ্রেশন আইন বিশেষঞ্জ অধ্যাপক ইকবাল আহমদ সোমবার এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, নতুন এ নীতিমালার ফলে অধিকাংশ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিকদের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যে স্বামী-স্ত্রী এবং সন্তানদের নেবার পথ অনেকটাই রুদ্ধ হয়ে আসছে। কেননা, অধিকাংশ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিকই যুক্তরাজ্যে ম্যানুয়েল জব বা রেস্তোরাঁ ব্যাবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাদের কর পরিশোধিত মাসিক আয় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এক হাজারের কাছাকাছি।
অধ্যাপক ইকবাল বাংলানিউজকে বলেন, নতুন আরোপিত নীতিমালার কারণে তাদের স্পাউসদের যুক্তরাজ্যে নেবার ক্ষেত্রটি আরো সংকুচিত হলো। নতুন আইনে ন্যুনতম আয় ১৮৬০০ পাউন্ড করার কারণে তারা এখন তাদের স্পাউসদের যুক্তরাজ্যে নেবার ক্ষেত্রে আবেদনই করতে পারবেন না। কারণ তাদের এই বিশাল পরিমাণ আয় নেই।
অধ্যাপক ইকবাল আরো বলেন, নতুন এ নীতিমালা আরোপের ক্ষেত্রে ব্রিটিশ সরকার মানবাধিকারের দোহাই দিলেও এ আইনটিও এক ধরনের মানবাধিকার হরণ। আমার ধারণা বিষয়টি আদালতে গড়াবে এবং যুক্তরাজ্যের আদালতই এ ব্যাপারে উপযুক্ত সিদ্বান্ত নেবে।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক মাসুম আহমদ সেলফোনে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে গত রোববার বলেন, দু’মাস মাস আগে বাংলাদেশে গিয়ে বিয়ে করেছি। বিয়ের আগে লন্ডনে ফুলটাইম জব করতাম না। এখন অর্থনৈতিক মন্দার কারণে যুক্তরাজ্যে কাজের তীব্র সংকট চলছে। লাখ লাখ মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে মাসে এক হাজার পাউন্ডের কাজ মেলাও দুরুহ। তার ওপর কর পরিশোধ শেষে আয় দাঁড়াবে সাড়ে সাতশ পাউন্ডে। নতুন এ নীতিমালার কারণে সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টার চেয়ে বেশি কাজ করেও কোনোভাবেই ১৮৬০০ পাউন্ডের শর্ত পূরণ করা সম্ভব নয়।
তিনি আরো জানান, নতুন এ নিয়ম চালু হবার খবর পাবার পর থেকে তিনি ও বাংলাদেশে অবস্থানরত স্ত্রী এবং অন্য স্বজনরাও হতাশায় ভুগছেন।
আর্ন্তজাতিক মানবাধিকার সংগঠন মুভমেন্ট ফর পিস এর এক্সিকিউটিভ মেম্বার ওয়াজের আহমদ রোববার ফোনে এ প্রতিবেদককে বলেন, ইউকে সরকারের নতুন এ নীতিমালা মানবাধিকারের চূড়ান্ত লংঘন। স্পাউস ভিসার ক্ষেত্রে স্পন্সরের যে আয়ের শর্তারোপ করা হয়েছে সিংহভাগ মানুষের পক্ষেই এ শর্ত পূরণ করা অস্ম্ভব। একজন মানুষ কেবলমাত্র তার আয় কম হবার কারণে অন্য সকল শর্ত পূরণ করেও স্ত্রী বা স্বামী অথবা সন্তানদের যুক্তরাজ্যে আনতে পারবেন না, এমন আইন কোনোভাবেই মানবিক নয়।