র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ানের (র্যাব) প্রধান কনফারেন্স রুমে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিতে চেয়ারের উপর দাঁড়াতে হলো ৮ বছরের শিশু সাথীকে। মাইক্রোফোনগুলোর কাছাকাছি নিতেই তার জন্য এ ব্যবস্থা।
পিঠে, হাঁটুতে শিক দিয়ে ছ্যাকা দেওয়া ক্ষতগুলো দেখে সাথীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, এ বাসায় কবে এসেছে? উত্তর- ‘৭ মাস আগে’। কে মেরেছে? ‘আন্টি মেরেছে’। কেন মেরেছে? ‘কথা শুনিনি বলে’। কীভাবে মেরেছে? ‘শিক দিয়ে মেরেছে’। পুড়ে গেলো কেন? ‘শিক গরম করে মেরেছে’।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর উত্তরার ১৩নং সেক্টরের একটি বাসা থেকে গৃহকর্ত্রীর হাতে নির্যাতিত এ শিশুকে সোমবার বেলা ১টায় উদ্ধার করে র্যাব। একই সঙ্গে গৃহকর্ত্রী সালমা আক্তারকেও আটক করে পুলিশ।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও র্যাব’র যৌথ অভিযানের বিস্তারিত তুলে ধরতে সোমবার বিকেলে র্যাব’র প্রধান কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
বরিশালের শিশু সাথী জানায়, ওর বাবা কালাম খান বিদেশে থাকেন। ৭ মাস আগে উত্তরার এ বাসায় কাজ করার জন্য মা তাকে দিয়ে গেছেন। বাসার গৃহকর্ত্রীকে আন্টি ডাকতো সাথী। নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে এর বেশি কিছু জানাতে পারেনি সে।
শিশুটি জানায়, আন্টি তাকে প্রায় প্রতিদিনই মারধর করতো। কাজ করতে একটু দেরি হলেই মারতো। শেষ যেদিন মেরেছে সেদিনের অপরাধ ছিল- ডাক দিলেও সে শুনতে পায়নি। বেশিরভাগ সময়ই লোহার রড দিয়ে মারা হতো। অনেক সময় রড গরম করে ছ্যাকা দিতো। এছাড়াও চড়-ঘুঁষিও মারতেন সালমা আক্তার।
গৃহকর্ত্রী সালমা আক্তার শিশু সাথীকে নির্যাতনের কথা অবশ্য স্বীকার করেছেন। তবে লোহার রড দিয়ে ছ্যাকা দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছে তিনি। সংবাদ সম্মেলনে এসে উত্তেজিত হয়ে পড়েন সালমা। এ সময় তার কোলে ১/২ বছরের নিজের শিশু ছিল।
সালমা আক্তার বলেন, “কথা না শুনলে মারতাম। তবে হাত দিয়ে চড় থাপ্পড় মারতাম। লোহার রড দিয়ে মারার যে কথা বলা হচ্ছে, সেটা ঠিক নয়।”
শিশুটির গায়ে রডের ছ্যাকা দেখলে বোঝা যায় এগুলো খুব সাম্প্রতিক নির্যাতনের চিহ্ন। এগুলো কীভাবে হয়েছে জানতে চাইলে সালমা বলেন, “এখন ও (সাথী) কী বলছে আমি জানি না। আপনারা আপনাদের মতো কাজ করেন।”
একটি শিশু নির্যাতনের ঘটনার কারণে নিজের চারটি শিশুর জীবনে ক্ষতি হলো বলে সাংবাদিকদের অভিযুক্ত করেন সালমা আক্তার।
তিনি বলেন, “এসব জানাজানি হলে আমার চার বাচ্চারও তো ক্ষতি হবে। আপনারা একটি বাচ্চার জন্যে চার বাচ্চার ক্ষতি করছেন।”
প্রথমবারের মতো র্যাব কার্যালয়ে উপস্থিত জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেন, “উত্তরায় একটি বাসায় শিশু নির্যাতনের খবর জানতে পেরে কমিশন র্যাবকে জানায়। র্যাব তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেয় এবং শিশুটিকে উদ্ধার করে। এ জন্যে র্যাবকে ধন্যবাদ জানাই।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের অন্যতম সদস্য কাজী রেজাউল হক বলেন, “দেশে ৪ লাখ ২১ হাজার শিশু গৃহকর্মে নিয়োজিত রয়েছে। শুধু রাজধানীতেই রয়েছে সাড়ে ৩ লাখ শিশু।
নয় বছরের কম বয়সী শিশুদের দ্বারা সংঘটিত অনাকাঙ্খিত ঘটনাকে ‘অপরাধ’ হিসেবে গণ্য করা যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এ শিশুটির বয়স আট বছর। তাই কোনো অপরাধ করলেও তাকে মারা বেআইনি।”
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন- র্যাবের অ্যাসিসটেন্ট ডিরেক্টর কর্নেল মজিব।