বিইআরসিতে যাচ্ছে বিদ্যুতের খুচরা দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব

বিইআরসিতে যাচ্ছে বিদ্যুতের খুচরা দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব

চলতি সপ্তাহেই বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) যাচ্ছে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব। এতে প্রায় ৩০ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাবনা থাকতে পারে বলে বিইআরসি সুত্র জানিয়েছে।

জুলাই মাস থেকে বিদ্যুতের পাইকারি ও খুচরা দাম একই সঙ্গে বাড়াতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

বিইআরসির এক সুত্র জানিয়েছে, চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে পিডিবি। পাইকারি দাম বাড়ালে সংস্থাগুলো ক্ষতির মূখে পড়বে। সে কারণে পাইকারি দাম বাড়ানোর পরে খুচরা দাম বাড়ানোর বিষয়টি সামনে চলে আসবে।

পাইকারি দাম বাড়ানোর পর অল্পদিনের ব্যবধানে যদি খুচরা দাম বাড়ানো হয়, সে ক্ষেত্রে  মিডিয়াতে বিষয়টি দু’দফায় উস্থাপন হবে। আর তাতে সরকার সমালোচনার মূখে পড়বে।

সে কারণে একইসঙ্গে পাইকারি ও খুচরা বিদ্যুতের দাম বাড়াতেই তড়িঘড়ি গ্রাহক (খুচরা) পর্যায়ে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে।

বিইআরসি সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, ‘আমরা একই সঙ্গে খুচরা ও পাইকারি দাম বাড়ানোর বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সে কারণে পিডিবি চেয়ারম্যানকে খুচরা দাম বাড়ানোর প্রস্তাব ২/১ দিনের মধ্যে জমা দিতে বলা হয়েছে।’

সেলিম মাহমুদ জানান, পিডিবি পাইকারি দাম ৫০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। পাইকারি ৫০ শতাংশ বাড়লে খুচরাতে ৩০ শতাংশের মতো প্রভাব পড়ে।

কি পরিমাণ দাম বাড়ানো হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পাইকারি ৫০ শতাংশের কম বাড়তে পারে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে গণশুনানি শেষ করতে চাই। আশা করছি ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে আদেশ দেওয়া সম্ভব হবে। তবে যখনই হোক জুলাইয়ের প্রথম  তারিখে থেকে বর্দ্ধিত মুল্য কার্যকর হবে।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে সেলিম মাহমুদ বলেন, ‘পাইকারি ৫০ ও খুচরা ৩০ শতাংশ দাম বাড়লে তেল ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রুগুলো বেশি চালানো সম্ভব হবে। আর তাতে লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে আনা সম্ভব হবে।’

তিনি বলেন, ‘পাইকারি ৫০ ও খুচরা ৩০ শতাংশ দাম বাড়লে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির প্রয়োজন পড়বে ৩ হাজার ৭শ’ কোটি টাকা।’

আর না করা হলে ঘাটতি ১০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ( পিডিবি) সুত্র জানায়, সরকার ২০১২-১৩ অর্থ বছরের বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে ৬ হাজার ৪শ’ কোটি টাকা ভর্তুকি রাখলেও সবটাই খরচ চায় না। কারণ হিসেবে জানা গেছে, বিশাল আকারে ঘাটতি বাজেট সামাল দিতেই এ উদ্যোগ।

বতর্মান সরকারের সময়ে কয়েক দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়লেও এক সঙ্গে এত বেশি হারে দাম বাড়ানো হয় নি। কিন্তু এ দফায় বেশি হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানা গেছে, নির্বাচন এগিয়ে আসায় সরকার এর পর আর দাম বাড়ানোর ঝুঁকি নিতে চায় না।

উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২৯ মার্চ দাম বাড়ানোর ফলে বর্তমানে বিদ্যুতের পাইকারি গড় দর রয়েছে ৪ টাকা ০২ পয়সা। ওই সময়ে পিডিবি থেকে বলা হয়েছিলো, মার্চে তাদের প্রতি ইউনিটের উৎপাদন খরচ পড়েছে ৫ দশমিক ৭০ টাকা। যা বর্তমানে ৬ টাকার ওপরে বলেও একটি সূত্র দাবি করেছে।

বর্তমান সরকার এ পর্যন্ত ৫ দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। প্রথম দফায় ২০১০ সালের মার্চে গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ায়। এরপর ১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে খুচরা ও পাইকারি দাম বাড়ায়। এরপর একই বছরের ডিসেম্বর মাসে পাইকারি দর ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ বাড়িয়ে ৩ দশমিক ২৭ টাকা করা হয়।

এছাড়া চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ৭ দশমিক ০৯ শতাংশ দাম বাড়িয়ে ৩ দশমিক ৭৪ টাকা করা হয় এবং সর্বশেষ মার্চে ইউনিট প্রতি আটাশ পয়সা বাড়িয়ে ৪ দশমিক ০২ টাকা করা হয়।

এ ছাড়া গ্রাহক পর্যায়ে ২০১০ সালের মার্চ মাসে ও ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অন্তবর্তীকালীন ৫ শতাংশ এবং ডিসেম্বর মাসে দাম বাড়ানো হয়। এরপর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি ও মার্চে দাম বাড়ায় বর্তমানে গ্রাহক পর্যায়ে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের গড় দর রয়েছে ৫ দশমিক ৩২ টাকা।

 

বাংলাদেশ