বাজেট পরবর্তী প্রস্তাবনায় করমুক্ত আয়সীমা ২ লাখ ২০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চিঠি দিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)।
একই সঙ্গে মূল্য সংযোজন কর বিষয়ক ১১টি, আয়কর সংক্রান্ত ৭টি ও আমদানি শুল্ক সংক্রান্ত ১৬টিসহ মোট ৩৪টি প্রস্তাব দিয়েছে এফবিসিসিআই।
বাজেট প্রস্তাবনায় আয়কর সংক্রান্ত প্রস্তাবনায় বলা হয়, ২০১১-২০১২ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ঘটেছে ১০ শতাংশের উপরে। জীবনযাত্রার ব্যয় আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। প্রতিবেশী দেশসমূহে উল্লেখিত সময়ে করমুক্ত আয়ের সীমা মাথাপিছু আয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বর্ধিত হয়েছে।
একই বিবেচনায় আগামী ২০১২-২০১৩ কর বছরে ব্যক্তিগত করমুক্ত সীমা ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা ধার্য করার প্রস্তাব করা হয়।
এছাড়া ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর ১০ শতাংশ, ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ১৫ শতাংশ, ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত ২০ শতাংশ এবং অবশিষ্ট আয়ের উপর ২৫ শতাংশ আয়কর ধার্য করার প্রস্তাব জানিয়েছে সংগঠনটি।
পাশাপাশি ন্যূনতম করসীমা ২ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ হাজার দুইশ টাকা করারও প্রস্তাব দেওয়া হয়।
এদিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে প্রদেয় লভ্যাংশের ওপর ভিত্তি করে আয়কর নির্ধারণেরও সুপারিশ জানিয়েছে সংগঠনটি।
এক্ষেত্রে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো প্রতিষ্ঠান ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ প্রদান করলে সে প্রতিষ্ঠানের জন্য ৩২.৫ শতাংশ, ২০ শতাংশের কম লভ্যাংশ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ এবং ২০ শতাংশের বেশি লভ্যাংশ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ২২.৫ শতাংশ আয়কর নির্ধারণ করার সুপারিশ করেছে এফবিসিসিআই।
এছাড়া সব রপ্তানির ক্ষেত্রে উৎসে করহার দশমিক ৬০ শতাংশের ও দশমিক ৭০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১ দশমিক ২০ শতাংশ নির্ধারণ করার বিষয়ে প্রস্তাবে বলা হয়, বর্তমানে ইউরোপে অর্থনৈতিক মন্দা বিরাজমান। আমাদের রপ্তানি খাতের তৈরি পোশাক ও পাট সূতাসহ অন্যান্য অনেক পণ্যের ৬০ শতাংশ বা এর অধিক রপ্তানি হয় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসমূহে।
এমতাবস্থায়, যেখানে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের হার নিম্নমুখী এবং অধিক সুদ ও বিভিন্ন খরচের কারণে রপ্তানীকারকগণ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন এবং যেখানে রপ্তাণি বাণিজ্যে ধবস ঠেকানোর লক্ষ্যে সরকার থেকে আর্থিক প্রণোদনা প্রয়োজন, তার পরিবর্তে প্রস্তাবিত বাজেটে উৎসে কর বৃদ্ধি করার প্রস্তাব অযৌক্তিক। সুতরাং এ প্রস্তাব রহিত করা না হলে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নেতিবাচক প্রভাব রাখবে।
মূল্য সংযোজন কর (মূসক) সংক্রান্ত প্রস্তাবনায় কুটির শিল্পের বিষয়ে বলা হয়, এ শিল্পের ৭ লাখ টাকার ওপর টার্নওভারের ক্ষেত্রে মূসক আরোপ অবিবেচনা প্রসূত। ক্ষুদ্র শিল্প, কারখানা ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে ৬০ লাখ টাকা পর্যন্ত টার্নওভারের ওপর মূসক অব্যাহতি প্রদান করা হোক।
একই সঙ্গে ৬০ লাখ থেকে দুই কোটি টাকা পর্যন্ত টার্নওভারের ওপর ২ শতাংশ এবং ২ কোটি হতে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ৩ শতাংশ হারে টার্নওভার ট্যাক্স ধার্য্য করার প্রস্তাব করা হয় এফবিসিসিআইর প্রস্তাবে।
বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) বিধিমালা সংশোধনীর প্রস্তাব করে বলা হয়, বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে সহযোগিতাকারীগণ বিরোধীয় মূল্যের পরিমাণ নির্বিশেষে বিরোধীয় বিবেচ্য বিষয় সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি-বিধান পর্যালোচনা করবেন।
তবে সহায়তাকারীদের সংশ্লিষ্ট বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য প্রতিটি সভায় অংশগ্রহণের জন্য নির্ধারিত হারে সম্মানী প্রদান করা যেতে পারে যা বিরোধীয় দুই পক্ষ সমানভাবে বহন করবে।
উপরোক্ত বিষয়সহ বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) বিধিমালা মূল আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বিধায় এফবিসিসিআই আইনটি সংশোধন করার প্রস্তাব করছে।
এছাড়া শিল্পের বিকাশ, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, রাজস্ব আহরণের পরিমাণ বৃদ্ধি ও জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে মূলধনী যন্ত্রপাতির ওপর বর্তমানে আরোপিত শুল্ক ১ শতাংশ ও ৩ শতাংশের পরিবর্তে ১ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয় ওই প্রস্তাবে।
পাশাপাশি শতভাগ রপ্তানীমুখী সব শিল্পের ক্ষেত্রে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে শূন্য শতাংশ শুল্ক ধার্য করার প্রস্তাবও করা হয় এফবিসিসিআইর বাজেট পরবর্তী প্রস্তাবনায়।