লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেছেন, বাংলার মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই হবে। এই যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য যারা চেষ্টা করবে, তাদের বিচারও বাংলার মাটিতে হবে।
শনিবার মহান বিজয় উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। এদিন বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে দলের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনাসভায় স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষের প্রতি আহ্বান রেখে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা যে যেখানেই থাকুন যারা যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার চেষ্টা করছে, তাদের রিরুদ্ধে সোচ্চার হোন। আমরা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার ও রায় কার্যকর করেছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও ইনশাল্লাহ বাংলার মাটিতে হবেই হবে।’
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার চল্লিশ বছরে আমরা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারিনি। এই ৪০ বছরের ১৮ বছরই ক্ষমতায় ছিল স্বাধীনতাবিরোধীরা। এসময় জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়া দেশ শাসন করেছেন। জাতির কাছে তাদের জবাব দিতে হবে, কেন দেশ স্বাধীনতার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি, দেশের মানুষের উন্নতি কেন হয়নি।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, দুর্নীতিবাজরা আর যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারে সেজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন দেশ গড়ে তুলছিলেন, মানুষ যখন একটু শান্তি পেতে শুরু করেছিলো তখনই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়।’
‘এরপর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে স্বাধীনতা বিরোধীদের তাদের ছেড়ে দেন। গোলাম আযমসহ স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের ভোটাধিকার, নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেওয়া হয়। অথচ বঙ্গবন্ধু তাদের বিচার শুরু করেছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘স্বীকৃত রাজাকার শাহ আজিজ, আব্দুল আলিমকে মন্ত্রী করে স্বাধীনতা বিরোধীদের রাজনীতি করার সুযোগ দেয়, তাদের প্রতিষ্ঠিত করে। তাদের নানাভাবে পুরস্কৃত করে। সংবিধানকে ক্ষত-বিক্ষত করে, মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলা শুরু করে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ যাতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে তার জন্য যা যা করা দরকার জিয়া করেছিলেন।
‘তার স্ত্রী খালেদা জিয়াও ক্ষমতায় গিয়ে একই কাজ করেছেন। জাতির পিতার হত্যাকারীদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন। যারা স্বাধীনতা বিরোধী, খুনী, গণহত্যাকারী, ধর্ষক, লুটপাটকারী, অগ্নিসংযোগকারী এরাই তার দোসর, তার সবচেয়ে প্রিয়।’
শেখ হাসিনা দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, ‘জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার করেছি, বিচারের রায় কার্যকর হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও শুরু হয়েছে। এই মানবতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাংলার মাটিতে হবেই হবে।’
প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সবাইকে অনুরোধ করে বলেন, ‘এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমি বলতে চাই, যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চান তাদের কাছে আমার অনুরোধ: যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষাকারীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন।’
শেখ হাসিনা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগের ১২ বছরের শাসনামলের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, স্বাধীনতার ৪০ বছরের ২৮ বছরই ক্ষমতায় ছিলো স্বাধীনতাবিরোধীরা। এই ২৮ বছরে দেশের মানুষ কি পেয়েছে? জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়াকে জবাব দিতে হবে কেন দেশ স্বাধীনতার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি।
আগামীতে বিএনপি আবার ক্ষমতায় গেলে চালের দাম ৯০ থেকে ১০০ টাকা হবে বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা ক্ষমতায় গিয়ে ঘুষ, দুর্নীতি, বিদেশে অর্থ পাচার করেছে। রাতারাতি নিজেদের আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। দেশে যতো উন্নতি হয়েছে আওয়ামী লীগের আমলেই হয়েছে। আওয়ামী লীগ নিতে আসে না, দিতে আসে।’
‘আমরা যে চালের দাম ১০ টাকায় রেখে গিয়েছিলাম, বিএনপি ক্ষমতায় এসে সেই চালের দাম ৪৫ টাকায় নিয়ে গিয়েছিলো। আবার তারা ক্ষমতায় আসলে চালের দাম ৯০ থেকে ১০০ টাকা হবে।’
শেখ হাসিনা বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন তুলে ধরে বলেন, দেশের মানুষ ভালো থাকলে বিরোধী দলের নেত্রীর গায়ে জ্বালা ধরে। তিনি চান দেশের মানুষ কেন ভালো থাকবে, তিনি নিজে ক্ষমতায় থাকবেন আর লুটপাট করে খাবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এবারের বিজয় দিবস মানুষ উৎসবমুখর পরিবেশে পালন করেছে। মানুষের এই উৎসব যাতে ম্লান হয়ে না যায়, কেউ যাতে আর ভোটের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলার সুযোগ না পায় সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’
‘সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে আর যাতে স্বাধীনতা বিরোধী, যুদ্ধাপরাধীদের দোসর ও লুটপাটকারীরা ক্ষমতায় আসতে না পারে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেখলাম যশোরে বিএনপির এক নেতা খুন হওয়ায় আরেক নেতা অশ্রুপাত করছেন। বিএনপির ওই নেতা রাতে সর্বহারা, দিনে বিএনপি। ওই নেতার বিরুদ্ধে যশোরের সাংবাদিক শামসুর রহমান, সাইফুল আলম মুকুল হত্যা, উদীচীর অনুষ্ঠানে বোমা হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে। বিএনপির এই নেতা যশোরে থাকলে আর কত যে খুন হবে, তা বলা যায় না। খুন করে আবার অশ্রুপাত করে। এটাই বিএনপি-জামায়াতের চরিত্র।’