সিন্ডিকেট করলে জেল-জরিমানা: বিল পাস

সিন্ডিকেট করলে জেল-জরিমানা: বিল পাস

বাজারে সুস্থ প্রতিযোগিতা রক্ষা ও সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন গঠনের বিধান রেখে ‘প্রতিযোগিতা বিল, ২০১২’ সংসদে পাস করা হয়েছে।

রোববার বাণিজ্যমন্ত্রী জিএম কাদের বিলটি পাসের প্রস্তাব করেন। পরে এটি কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগে বিলের ওপর দেওয়া সংশোধনী, বাছাই কমিটিতে পাঠানো ও জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব নাকচ করা হয়।

বিলে, পণ্য বাজারে সিন্ডিকেট করে দাম নিয়ন্ত্রণ করলে এক বছরের কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

গত ৭ মার্চ বিলটি সংসদে উত্থাপন করে বাণিজ্যমন্ত্রী। পরে পরীক্ষা করে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।

বিলের উদ্দেশ্য সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, ‘উদার বাণিজ্য ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে কিছু স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বাজারের স্বাভাবিক গতিকে ব্যাহত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। একই সঙ্গে সুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবেশ নষ্ট করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এর ফলে ভোক্তাদের স্বার্থ বিঘ্নিত হচ্ছে। দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবেশ নিশ্চিত করতে আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিযোগিতা আইন না থাকলে কিছু অসাধু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লিখিত বা অলিখিত চুক্তি মাধ্যমে জোট বেঁধে “প্রাইস ফিক্সিং” (দাম নিয়ন্ত্রণ) করে পণ্যের স্বাভাবিক সরবরাহ ব্যাহত করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চালাতে পারে। গত কয়েক বছর বাজারে পণ্যের অযৌক্তিক দাম বাড়ানো ও অস্থিরতার জন্য এধরনের অসাধু ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডই দায়ী বলে মনে করছেন অনেকে।’

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘বড় প্রতিষ্ঠানগুলো বাজারে কর্তৃত্বের অপব্যবহার করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। বাজারে নতুন প্রতিষ্ঠানকে ঢুকতে বাধা দিতে পারে। তবে এ ধরনের কর্মকাণ্ড কীভাবে, কারা করছে সেটি প্রমাণ করা বেশ কষ্টসাধ্য। আইনি কাঠামোর মধ্যে এধরনের কর্মকাণ্ড তদন্ত করা সম্ভব।’

বিলের তৃতীয় অধ্যায়ে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি কোনো পণ্য বা সেবার উৎপাদন, সরবরাহ, গুদামজাত বা অধিগ্রহণ সংক্রান্ত এমন কোনো চুক্তি করতে পারবে না যাতে বাজারে আধিপত্য ও অনেকের সংঘবদ্ধ কর্তৃত্ব তৈরি হয়।

এতে বলা হয়েছে, কেনা বা বিক্রির দাম অস্বাভাবিকভাবে নির্ধারণ, দরপত্রসহ সবক্ষেত্রে জালিয়াতি করে প্রতারণাপূর্বক দর নির্ধারণ করলে সেটি বাজারে প্রতিযোগিতার বিরোধী হবে ধরা হবে। এছাড়া পণ্য উৎপাদন, সরবরাহ, বাজার, কারিগরি উন্নয়ন, বিনিয়োগ বা সেবার সংস্থানকে নিয়ন্ত্রণ করলে তা এ আইনের বিরোধী বলে বিবেচনা করা হবে।

বিলে বলা হয়েছে, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পণ্য কেনা-বেচায় বৈষম্যমূলক শর্ত আরোপ করলে বাজারে ‘কর্তৃত্বময় অবস্থানের অপব্যবহার’ হচ্ছে বলে ধরা হবে। আরও বলা হয়েছে, এমন কোনো আচরণ করা যাবে না যাতে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান বাজারে ব্যবসা শুরু করতে বাধাগ্রস্ত হয়।

আরও বলা হয়েছে, পণ্যের উৎপাদন বা সেবার কারিগরি বা বৈজ্ঞানিক উন্নয়নকে বাঁধাগ্রস্ত করা যাবে না।

যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া কেউ যদি এ আইন লঙ্ঘন করে তবে এক বছরের কারাদণ্ড অথবা অনধিক এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবে।

বিলের ৭ ধারায় বলা হয়েছে, একজন চেয়ারপারসন ও অনধিক চারজন সদস্য নিয়ে কমিশন গঠন করা হবে। কমিশনের চেয়ারপারসন ও সদস্যের সরকার নিয়োগ দেবে। তবে তাদের অর্থনীতি, বাজার, জনপ্রশাসন কিংবা আইন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা রাখার শর্ত দেওয়া হয়েছে।

বিলের ৮ ধারায় কমিশনের কার্যবালী ও ক্ষমতা সম্পর্কে বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, বাজারে প্রতিযোগিতায় বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে এমন বিষয় নির্মূল করা কমিশনের কাজ। বাজারে প্রতিযোগিতাকে উৎসাহিত করা এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে কাজ করবে।

আরও বলা হয়েছে, কোনো অভিযোগের ভিত্তিতে অথবা স্বতঃপ্রণোদিতভাবে কমিশন ব্যবসা প্রতিষ্ঠাগুলোর প্রতিযোগিতা বিরোধী চুক্তি, কর্তৃত্বময় অবস্থান ও চেষ্টা তদন্ত করতে পারবে।

কমিশন তার কাজের প্রয়োজনে সরকারের অনুমতি নিয়ে বিদেশি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করতে পারবে বলে বিলে বলা হয়েছে।

এছাড়া দেশের বাইরে থেকে যদি কেউ বাংলাদেশের বাজরে প্রভাব ফেলার চেষ্টা করে দুই দেশের আইন অনুযায়ী কমিশন তদন্ত করতে পারবে।

কারো বিরুদ্ধে তদন্ত, বিচার ও আপিল ও আনুষঙ্গিক বিষয়ে ফৌজদারি কার্যবিধি প্রযোজ্য হবে বলে বিলে বলা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, এ আইনে দণ্ড পাওয়া কাউকে একই অপরাধের জন্য অন্য কোনো আইনে বিচার করা যাবে না।

কমিশন যদি কারো বিরুদ্ধে আদেশ দেয় তবে ওই ব্যক্তি ৩০ দিনের মধ্যে কমিশনের কাছে পুনর্বিবেচনার বা আপিলের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করতে পারবে বলে বিলে বিধার রাখা হয়েছে।

তবে এই আপিলের ক্ষেত্রে শর্ত দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, কমিশনের দেওয়া জরিমানার ১০ শতাংশ জমা দিয়ে পুনর্বিবেচনার বা ৫০ ভাগ টাকা সরকারের কাছে জমা দিয়ে আপিলের আবেদন করতে পারবে।

বাংলাদেশ