ভারতের প্রশংসায় তালেবান!

ভারতের প্রশংসায় তালেবান!

আফগানিস্তানের সঙ্গে বেশি করে সম্পৃক্ত হতে যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে ভারত ভাল কাজ করেছে বলে নয়াদিল্লির প্রশংসা করেছে আফগান তালেবান। একই সঙ্গে আফগানিস্তানকে অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছে তারা।

২০০১ সালে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে এবং পরে এখন পর্যন্ত অন্যতম শত্রু হিসেবে বিবেচিত ভারতের ব্যাপারে এ-ই প্রথম সরাসরি মন্তব্য করল তালেবান। একই সঙ্গে তালেবান আবার আফগানিস্তানে ক্ষমতায় এলে পাকিস্তানভিত্তিক ভারতবিরোধী জঙ্গিরা আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবে নয়াদিল্লির এ ভীতির কথাও উল্লেখ করেছে তারা।

আফগান তালেবানের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক অনেক পুরনো এবং ঐতিহ্যবাহী। সেই তালেবান পাকিস্তানের চিরশত্রু ভারতের ব্যাপারে এমন নমনীয় অবস্থান অনেকখানি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির ইঙ্গিতবহ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা শুরু (অবশ্য এখন স্থগিত রয়েছে) এবং আনুষ্ঠানিকভাবে শান্তি আলোচনা এগিয়ে নিতে কাতারে কার্যালয় খোলার ব্যাপারে সমঝোতা তালেবানের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বলেই বিবেচনা করা হয়।

তারপর এখন ভারতের ব্যাপারে এমন দৃষ্টিভঙ্গি তালেবানের সমঝোতামূলক অবস্থানের কথাই প্রকাশ করছে।

চলতি মাসে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিও প্যানেট্টা ২০১৪ সালের মধ্যে কমবেট সেনাদের প্রত্যাহারের পর আফগানিস্তানে আরো সক্রিয় ভূমিকা নিতে ভারতকে উৎসাহিত করেছেন। এর প্রতিক্রিয়ায় তালেবান বলছে, আফগানিস্তানে প্যানেট্টা ব্যর্থ হয়েছেন।

তাদের একটি ইংরেজি ওয়েবসাইটটে প্যানেট্টার ব্যাপারে তারা বলেছে, ‘আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে বাঁচতে এবং ভারী বোঝাটা দিল্লির কাঁধে চাপাতে ভারতে তিনি তিন দিন সময় ব্যয় করেছেন।’

ওয়েবসাইটে আরো বলা হয়েছে, কিছু নির্ভরযোগ্য গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের দাবির ব্যাপারে ভারত ততোটা কর্ণপাত করেনি। এ ব্যাপারে ভারত অনাগ্রহ দেখিয়েছে কারণ তারা জানে বা তাদের তাদের জানা উচিৎ আফগানিস্তানে মার্কিনীরা নিজের কুড়ালে নিজেই ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে।

এদিকে রোববার তালেবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লা মুজাহিদ বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ভারতের বক্তব্যে আমেরিকানদের জন্য কোনো প্রতিশ্রুতি ছিল না। এর মানে হলো- ভারত প্রকৃত অবস্থাটা বুঝতে পেরেছে।

বর্তমানে ভারত আফগানিস্তানের বড় দাতা দেশ। অবকাঠামো নির্মাণ থেকে শুরু করে আফগান পার্লামেন্ট ভবন নির্মাণ পর্যন্ত নানা প্রকল্পে ভারতের ২শ’ কোটি ডলার বিনিয়োগ রয়েছে। এছাড়া সেখানে খনিজ লৌহ উত্তোলনের জন্য আরো ১১শ’ কোটি ডলার বিনিয়োগের অনুমোদন পেয়েছে তারা।

তবে আফগানিস্তানের নিরাপত্তা বিষয়ে আরো বেশি করে সম্পৃক্ত হওয়ার প্রস্তাব এড়িয়ে গেছে ভারত। শুধু আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের ভারতের সামরিক প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যাপারে রাজি হয়েছে নয়াদিল্লি।

তালেবান ভারতের এ অবস্থানের প্রশংসা করেছে। তারা বলেছে, ‘এ অঞ্চলে ভারতের উল্লেখযোগ্য গুরুত্ব রয়েছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। এছাড়া আফগানিস্তানের ব্যাপারে তাদের ভাল জানাশুনাও আছে কারণ এ দুই দেশ ঐতিহাসিকভাবে একে অপরকে চেনে।

তালেবান আরো বলেছে, ‘ভারত আফগানদের আকাঙ্ক্ষা, বিশ্বাস এবং স্বাধীনচেতা মনোভাবের ব্যাপারে সচেতন। এ কারণে এটা খুবই অযৌক্তিক হবে যে তারা শুধু আমেরিকাকে খুশি করতে নিজ জাতিকে বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলবে।’

তালেবানের এ প্রতিক্রিয়ায় ভারতের সাবেক গোয়েন্দা প্রধান বিক্রম সুদ বলেছেন, এ ধরনের বক্তব্য আসলে ভারতের বিরুদ্ধে এক ধরনের পরোক্ষা হুমকি।

আমেরিকানরা আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়ার পর আরো বেশি করে আফগান স্বার্থের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার ব্যাপারে ভারতকে সতর্ক করেছে তালেবান। তারা পরোক্ষাভাবে বলতে চেয়েছে, ভারত নিজেকে আরো বেশি জড়িয়ে ফেললে তা তাদের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে।

আন্তর্জাতিক